মৌলভি বাজার, সিলেট, এ স্থানে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন থাকে। তাছাড়া, শ্রীমঙ্গলে পাঁচ তারকা হোটেল, অনেক আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। আবার ছোট ছোট বাংলো বাড়িও রয়েছে। তাই থাকাটা খুবই উপভোগ করা যায়, সামর্থ্য অনুযায়ী।

আমরা ছিলাম এবার একটা ছোট্ট বাংলোতে, নাম -“ হিমকুঁড়ি বনবাংলো ” – শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে। পৌছেছিলাম রাত ২টায়, তার পর সিএনজি তে চড়ে বাংলোয়। তখনও রাত গভীর, এলো মেলো ভাবে ঘুমালাম কেউ কেউ, আবার কেউবা জেগেই।

ভোরে ঘুম ভাঙ্গে তক্ষকের ডাকে। ভয়ংকর সেই ডাক, নির্ঘাত ,আত্তারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবার জোগার, রাতেই এর ডাক শুনেছি, সবাই ছিলাম একসাথে তাই ভয় পাইনি, কিসের ডাক জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম এটা তক্ষকের ডাক, একা এই ডাক শুনে,যারা জানেনা, ভয় পাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই ,আর তক্ষক যে পাখির নাম না, সরীসৃপ জাতীয় প্রানী, জানলাম এই লিখাটা লিখতে গিয়ে তখনও আলোআঁধারীতে, ভোরের আকাশে আলো ফোটেনি।
সকালের রঙটা অনেক সুন্দর। প্যাস্টেল রঙ-বাক্সের সেই ছেলেবেলার ড্রয়িং খাতার নীলরঙে ছাওয়া আকাশ। নিশ্চুপ হয়ে কোনও উঁচু গাছের ডালে হয়তো বসে আছে একাকী ঈগল। ডানায় সকালের নরম আলো। মিনিট পনেরো হাটলেই জঙ্গল শুরু। দুটো প্রকাণ্ড মহুয়াগাছ ওই বনপথের দুপাশে পাহারাদারের মতো দাঁড়িয়ে আছে। বনের যে পথটা গভীর থেকে আরো গভীরে চলে গেছে সেখানেই দেখা মিলে নানা প্রকারের পাখিদের, আর তাদের কুজনে মাখামাখি মন হাড়ানো পরিবেশ।

 

ঘন দমবন্ধ শালগাছ, বাঁশের ঝোঁপ, তারই মাঝে বয়ে গেছে সরু একফালি পথ। দিনের আলো পাতার ফাঁক দিয়ে এসে পড়েছে তার ওপর। সবুজ ছায়া। বয়ে যাচ্ছে বাতাস।

উত্তরে বিস্তির্ন চা বাগান, দক্ষিণে পাহাড়ি ছরা। তার পাশ ঘেসেই আনারসের জুম পাহাড়। বনের ভেতর দুপাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে শাল আর কড়ই। দু একটা খয়ের আর অর্জুন গাছও আছে। বাতাসে ভেসে আসে শুকনো শাল পাতার গন্ধ।ভোরে টুপটাপ হিম খসে পড়ে যেন কোন অনন্তলোক থেকে। সঙ্গে দু চারটে শুকনো মরে যাওয়া পাতা। চুপ চাপ নিরিবিলি, বাতাসে পাতার শব্দ, পাশে বয়ে যাওয়া ছরার কল কল সুর, মাঝে মাঝে ডেকে ওঠে পাখি, এরই মাঝে খুব আনমনা হয়ে হেটে গিয়াছি অনেকটা পথ!

তবে বর্ষায় গেলে জোকের কামড় ফ্রী, নিজেই ভয়ে অনেক সতর্ক থেকেও ধরা খেয়েছি অজান্তেই, অভিজ্ঞতা বটে। বাংলোতে বসে যেমন বৃষ্টি বিলাস উপভোগ করেছি। তেমনই রাস্তায় সারি সারি চা বাগানে মাঝে বৃষ্টিতে ভিজেছি। এমন বর্ষার দিনে এক কাপ চা অথবা কফি যাই খান না কেনো,খেতে খেতে বৃষ্টি দেখার মজাই আলাদা। আর এই মজাটা ষোলো আনা পুরণ হয়েছে ইয়াছমিন আপুর মিনি কেটলি আর নানা স্বাদের, নানা প্রকারের চা কফির প্রাপ্তিতে, আপুকে অনেক ধন্যবাদ!

এমন রুচিবোধ সবার থাকেনা, রুচিশীলতার জন্যে আপু অসাধারণ! ঘুরতে গিয়া নিজেদের মধ্যে এটা বাড়তি পাওয়া, বাগানের প্রতিটি গাছের পাতা থেকে বৃষ্টি ঝরে পড়ার অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে পেরেছি, আবার টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার অপূর্ব আমেজও উপভোগ করেছি প্রান ভরে!!! এইতো গেলো সকাল, দুপুর অন্য দিকে রাতে সবাই গলা ছেড়ে সুরে কিংবা বেসুরে লোকগীতি আর আধুনিক গানের আসর জমিয়ে, এই ভ্রমণকে দিয়েছে অনাবিল উচ্ছাস!

দিন গড়িয়ে আবার রাত, সেই রাত যেনো মনে হয় কোন নিঃসীম নক্ষত্রের দেশে আছি। মায়াদেবী সবার অলক্ষ্যে ভারী প্রসন্না হয়ে ওঠেন। রাত যখন গভীর হয় , ফিনিক ফুটে জোসনায়। আকাশের তারার দল ম্লান হয়ে যায়। এমন চাঁদের আলোয় জোনাকি পোকা দেখতে দেখতে মুন আপুর অসাধারণ কন্ঠে একের পর এক কবিতা, ভুলবার না, আহা !!!

এমন গহীন মায়ারাজ্য থেকে ফিরে যেতে নাই কাউকে। না না একদম না! একেক সময় মনে হয় আমার, সেই তো ভালো! সবাই তো ফেরে, দু একজন না ফিরলে ক্ষতি কী! তবুও ফিরতেই হয়।