‘স্বর্গরাজ্য’ শব্দটি শুনলেই কেমন যেন ঐশ্বরিক অনুভূতি হয় আমার এবং স্বপ্নে বিভোর হই প্রতিবার। আমার ধারনা, কম বেশি সবার এ রকম হয়। আমার কল্পনার স্বর্গে থাকে রংবেরং ফুলে ভরা ক্ষেত, দক্ষিণা বাতাসে ফুলে ভরা মাঠ যেমন দোলে, আমার মনেও দোলা দেয়, অপরুপ ফুলের মৌ মৌ গন্ধে পাগল করে আমাকে। এইতো আমার স্বর্গ।এমন ভাবনা আমার সেই ছেলেবেলা থেকেই। সেই ভাবনায় এক বিন্দুও চিড় ধরেনি আজও। ধরবেই বা কেনো? এইত সেদিন ঘুরে এলাম আমার স্বর্গরাজ্যে। স্বপ্নে নয়, এবার বাস্তবে।
অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপ রাজ্য অপরুপ সৌন্দর্য্যে ভরা তাসমানিয়ার ব্রিডিসটো ল্যাভেন্ডার ফার্ম। প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চলে ল্যাভেন্ডার ‘ম্যাজিক’। ম্যাজিক বলছি কারন, ভুবন ভোলানো সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হয়ে ক্লান্তি দূর করার এক অভেদ্য টনিক ল্যাভেন্ডার ফার্ম। রাজধানী হোবার্ট থেকে ড্রাইভ করলে সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা লাগে ফার্মে পৌছাতে। চাইলে বাসেও যাওয়া যায় তবে সেটি সময়সাপেক্ষ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে গিয়েছিলাম এবার। দীর্ঘ ড্রাইভ শেষে ল্যাভেন্ডার রাজ্যে পৌছে দেখি সব ক্লান্ত দূর হল একনিমিষে। ঐ যে বলেছিলাম ম্যাজিক্যাল ল্যাভেন্ডার। এটাই ম্যাজিক টনিক। গাড়ির জানালা খুলতেই মৌ মৌ সুগন্ধ পাগলপ্রায় তখন। অন্য বন্ধুরা ততক্ষণে গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছে ল্যাভেন্ডারের টানে। ছুঁয়ে দেখছে স্বপ্নের ল্যাভেন্ডার। পাহাড় আর ল্যাভেন্ডারের সৌন্দর্য্যে বিমোহিত আমার সম্ভিত ফিরে পেল যখন কেউ একজন বলল কয়েকটা ছবি তুলে দিতে। দিলামও। এবার আমাদের ছবি তোলার পালা। যে যেভাবে পেরেছি স্মৃতি ধরে রেখেছি। ছবি তুলে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম ফার্মের নিজস্ব ক্যাফেতে। কফি নয়, ল্যাভেন্ডার স্বাদের আইসক্রিম নিলাম সবাই। এখানে কেউ এসে ল্যাভেন্ডার আইসক্রিম না খেয়ে ফেরত যায় না, আমিও সেই প্রথা ভাঙ্গার সাহস দেখালাম না। জমাট বাঁধা আইসক্রিম গলতে শুরু করায় ছবি তুললাম তড়িৎ গতিতে।
ফার্মের তথ্য অনু্যায়ী, ইংল্যান্ডের পারফিউমার সিকে ডেনি পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ায়। উর্বর মাটি আর আবহাওয়া দেখে ডেনি বুঝেন বিশ্বখ্যাত ফ্রেন্স ল্যাভেন্ডারের ব্যাপক ফলন সম্ভব এ মাটিতে। কয়েক বছরের চেষ্টায় সফলও তিনি। শুরু ছিল ১৯২১ সালে, এখনও চলছে স্বাদে সুগন্ধিতে ভরা অপূর্ব ফ্রেন্স ল্যাভেন্ডারের চাষ। প্রতিবছর কম করে হলেও ৫০ হাজার টুরিস্টের পদধুলি পড়ে ফার্মে। বলা হয়, বিশ্বের ব্যক্তি মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় ল্যাভন্ডার ফার্ম এটি। সাড়ে ৬ লাখ ল্যাভেন্ডারের গাছ রয়েছে ২শ ৬০ একর জমির এ ফার্মটিতে। ফার্মের তথ্যানুযায়ী, ল্যাভেন্ডার গুলো সারিবদ্ধ করলে লম্বায় ২০০ কিলোমিটার হবে। কি? চক্ষুচড়ক গাছ অবস্থা? এখানেই শেষ না, ফার্মের নিজস্ব দোকানে রয়েছে নানবিধ ল্যাভেন্ডার পণ্য। পণ্যের তালিকায় রয়েছে পারফিউম, মসলা, তেল, ল্যাভেন্ডার চা, সাবান, শ্যাম্পু, মোমবাতি এসবই তৈরি ফার্মের ল্যাভেন্ডার থেকে।
যাহোক, অস্ট্রেলিয়ায় (তাসমানিয়ায়) সিজনে বেড়াতে আসলে ল্যাভেন্ডার ফার্মে না ঘুরে গেলে সেটি হবে বড্ড বোকামি, আফসোসও করতে হবে বাকি জীবন। আজ এখানেই শেষ করছি ল্যাভেন্ডার বন্দনা। কারন ফার্মের বর্ণনা দেয়া সহজ কিন্তু ল্যাভেন্ডার ক্ষেতের সেই মোহনীয় সুঘ্রাণের বর্ণনার ভাষা যে আমার সত্যিই জানা নেই।