ঢাকায় নাকি ইদানীং খুব শীত পড়েছে শুনলাম। পূর্ব আফ্রিকায় বসে অবশ্য শীতের প্রকোপ খুব একটা টের পাচ্ছি না। তবে, শীতের কথা এলেই আমার মনে পড়ে যায় মস্কোর সেই ভয়াবহ হিমশীতল বিকেলগুলোর কথা যখন ক্রেমলিনের (Kremlin রুশ উচ্চারণ: kreml) সামনে দিয়ে অসংখ্য মানুষের ভীড় ঠেলে হেঁটে গেছি অনেকবার।
 
শীত কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি এটা বুঝতে হলে উইন্টারে মস্কোর পাথুরে রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যাবেলা হেঁটে যেতে হবে। কথিত আছে দুইটি বিশ্বযুদ্ধেই রাশানদের কাছে জার্মানদের পরাজয়ের অন্যতম বড় কারণ ছিল এই ভয়ঙ্কর শীত।
 
সে যাকগে, মস্কো আমার কাছে শুধু শীতের দেশ না, এটি প্রিয় গোর্কি, তলস্তয় আর পুশকিনেরও দেশ। রাদুগা প্রকাশনীর সুবাদে সেই ছোটবেলাতেই চেনা হয়ে গেছে রুশ দেশের উপকথার উত্তুরে হাওয়া আর বন্ধুত্ব হয়ে গেছে বেলায়েভের উভচর মানুষ ইকথিয়ান্ডারের সাথে। আরও কিছুদিন পর জীবনে আন্তন চেকভ আর নিকোলাই গোগল এসেছেন তাদের যাদুকরী গল্পের ঝুড়ি নিয়ে। কাজেই শীতের ভয়ে রাশিয়া গিয়ে আমি ঘরে বসে থাকবো, তা হতেই পারে না।
 
তাই ইচ্ছেমতো মস্কোর রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। রাশানরা বন্ধু হিসেবে বেশ। শুরুতে তাদের একটু উদাসীন বা গা ছাড়া মনে হলেও একবার বন্ধুত্ব হয়ে গেলে তারা কিন্তু দারুন। শীতের প্রস্তুতি হিসেবে অসংখ্য জামা কাপড় পড়েছিলাম সেসময়। ইনার, তার উপর কয়েকটা গরম কাপড়, সোয়েটার পড়ে সবার উপরে লম্বা ওভারকোট, মাফলার, হাতমোজা আর মাথায় উলের টুপি। এতকিছুর পরও মস্কোর উত্তুরে হাওয়া মাঝেমধ্যেই জামা কাপড় ভেদ করে হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছিল।
 
এখানকার বেশির ভাগ ছবিই ক্রেমলিনের আশেপাশে তোলা। ইতিহাসের সাক্ষী ক্রেমলিনেই এখনও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অফিস এলাকা। এছাড়াও বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা আর প্রায় দুশো বছরের পুরনো একটা শপিং মল আছে আশেপাশেই। রাশান কুইজিনের ধারণা দিতে ডাইনিং টেবিল থেকে তোলা কয়েকটি ছবিও দিলাম। এরা প্রায় প্রতি বেলাতেই জগ ভর্তি করে ক্র্যানবেরি (cranberry) জুস খায়। লাল রঙের এই জুস আমারো খুব প্রিয়।
 
প্রিয় রাশান বন্ধু সেরগেই কে যখন শীতের কথা বলতাম সে সহাস্যে বলত-তোমার তো শীত লাগবেই। আমাদের মত ভদকা টানলে দেখবে শীত বাপ বাপ করে পালাবে। আমি বলতাম, ভাইরে তোমার মত ভদকা টানলে শীত কোথায় পালাবে জানিনা, কিন্তু আমি তখনই ভবলীলা শেষ করে পরলোকে পালাবো এটা নিশ্চিত।
 
এই শীতে ভালো থাকুক সবাই।