পুঠিয়ার রাজবাড়ি দর্শনশেষে আরও প্রায় ঘণ্টাখানেকের পথ পাড়ি দিয়ে বনলতা সেনের শহর নাটোরে এসে পৌঁছুই আমরা। এই শহরেই আমার একজন অত্যন্ত প্রিয় কবি, ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, বদরে মুনীরের বাস। তাকে আগেভাগেই বলা ছিল আমাদের সদলবল নাটোরাগমনের কথা। সে তাই কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে রীতিমতো একজন গাইডসমেত আমাদেরকে দিঘাপাতিয়ার রাজবাড়ি তখা উত্তরা গণভবনটি ঘুরিয়ে দেখানোর সব ব্যবস্থা পাকা করে রেখেছিল।
 
রাজপ্রাসাদের সামনে স্থাপিত ফলক-লিখন পড়ে ও আমাদের গাইডের কথা শুনে জানা গেল, এই প্রাসাদের আদি সংস্করণটি নির্মাণ করেছিলেন দিঘাপতিয়ার প্রথম রাজা দয়ারাম রায়, আজ থেকে প্রায় তিনশত বছর আগে। তাঁর চতুর্থ প্রজন্মের বংশধর রাজা প্রসন্ননাথ রায় ১৮৬০ সালে এটিকে উদ্যান, মন্দির, জলাধারসমেত আরও সুরম্য ও সুবিস্তৃত আকার দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৮৯৭ সালের ভয়ংকর ভূমিকম্পে সেটি প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বংশের ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ রায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে অতঃপর বর্তমান প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।

১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাঁরা তা পরিত্যাগ করে কলকাতা চলে যান এবং তৎকালীন পাকিস্তান সরকার সেটিকে অধিগ্রহণ করে তাদের গভর্নর হাউসে রূপান্তরিত করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু এটিকে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানে নিয়মিত বিভিন্ন প্রশাসনিক ও মন্ত্রিপরিষদের সভার আয়োজন করেন।

বর্তমানে অবশ্য ভবনটি তালাবদ্ধই থাকে। বদরে মুনীরের প্রভাব ও সাংগঠনিক দক্ষতায় আমরা সেখানে প্রবেশাধিকার লাভ করি এবং তার নিয়োজিত চৌকস প্রদর্শকের কাছ থেকে প্রাসাদের ইতিহাস, স্থাপত্য, বিভিন্ন কক্ষের ব্যবহার, আসবাবপত্র, গৃহসামগ্রী, অলংকরণ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি।

সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা পুরো অঙ্গনটা তার উদ্যান, দুর্লভ বৃক্ষরাজি, ভাস্কর্যাদি, সরোবরসমূহ, সংগ্রহশালা, রাজকুমারের প্রাসাদ, বন্দিশালা, বৃদ্ধাবাস তথা গ্র্যান্ডমাদারস হাউস ইত্যাদি ঘুরে দেখি। অতঃপর বদরে মুনীরের সহৃদয় আমন্ত্রণে তাদের পৈতৃক বাড়িতে গমন এবং ভরপেট মধ্যাহ্নভোজন শেষে কবিতার আড্ডায় চমৎকার অপরাহ্ণ যাপন। তবে সেই গল্প পরের কিস্তিতে।