গন্তব্য মালাকোটা

২০২০ সালের ভয়াবহ আগুনে পুড়তে পুড়তে বেঁচে যাওয়া ইস্ট-গিপসল্যান্ডের ছোট একটি শহর মালাকোটা (Mallacoota)। ভিক্টোরিয়ার রাজধানী মেলবোর্ন থেকে টানা ৬ ঘন্টার লম্বা সময়ের ড্রাইভ আর সিডনি থেকে প্রায় ৭ ঘন্টা। প্রায় এক হাজার লোকের বাস এই শহরে।

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা মালাকোটা শহর । এক পাশে সমুদ্র, এক পাশে খুব অগভীর খাঁড়ি, ওয়ালাগারাহ নদীর মোহনা। ২০২০ সালের ভয়াবহ আগুনের হাত থেকে বাঁচতে এখানে আশ্রয় নিয়েছিল হাজারো হাজারো মানুষ। পর্বত সমান আগুন ধেয়ে এসেছিল, জীবন বাঁচাতে অনেকেই পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। দেখলে অবাক হবেন যে বিচের পাড়ের গাছ ঘাস কোনো কিছুই পুড়তে বাকি নেই।

সারাবেলা পাখির কলরবে আর সাগরের ঢেউয়ের গর্জনে মুখর হয়ে থাকে পুরো মালাকোটার প্রাকৃতিক পরিবেশ। বৈচিত্র্যময় পরিবেশ উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে পর্যটকরা এবং অবস্থান নেন বিচের তীর ঘেসে থাকা ক্যাম্পিং – ক্যারাভান পার্কে।

গত বছরের ভয়াবহ আগুন এবং COVID এর কারণে মালাকোটা শহরে পর্যটকরা আসা বন্ধ থাকায় শহরবাসিদের ব্যাবসা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। আপনি এ শহরে বেড়াতে আসলে শহরবাসিদের বেশ সাহায্য হবে।

কোথায় যাবেন

আপনি মেলবোর্ন, সিডনি বা ক্যানবেরার যে প্রান্তে থাকুন মালাকোটা আপনার থেকে মাত্র মাত্র কয়েক ঘন্টার দূরে। কাজেই আজই আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা করে ফেলুন। এতটাই সুন্দর জায়গা যে একটু সময় নিয়ে না আসলে শুধু মালাকোটা ঘুরে দেখা শেষ হবে না আর মালাকোটার আশেপাশের এলাকা তো রয়েছেই। শেষতক আফসোস না থেকে যায়।

  • মলাকোটা কোস্টাল ওয়াক
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের – বাঙ্কার জাদুঘর
  • গাবো আইল্যান্ড – বোট ট্রিপ
  • জিপসি পয়েন্ট
  • সিক্রেট বিচ
  • ক্রোয়াজিঙ্গলং ন্যাশনাল পার্ক
  • ওয়ালাগারাহ নদীর অগভীর খাঁড়ি
  • বাস্টিঅং পয়েন্ট
  • কোয়ারী বিচ
  • বেটকা বিচ

কি করবেন

বুশওয়াকিং/হাঁটাহাটি: 
কোনো একটি জায়গায় বেড়াতে গেলে সবকিছু কাছে থেকে দেখবার অন্যতম উপায় হলো সে জায়গার আশেপাশে হাঁটাহাঁটি করে দেখা। তাতে ঐ ভূদৃশ বা সংস্কিতি সবাই খুব ভালো করে বোঝা যায় । বুশওয়াকিং হলো অস্ট্রেলিয়ার একটা অনন্য একটিভিটি। কোথায় কিভাবে এই একটিভিটি করছেন এর উপর নির্ভর করে এটা কখনো রাম্বলিং,হাইকিং, ট্র্যাম্পিং, ট্রেককিং ইত্যাদি। সবগুলোই আপনাকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম করবে।

ফিশিং/মাছধরা:
দ্বীপদেশ অস্ট্রেলিয়ার মানুষের কাছে ফিশিং বা মাছধরা একটি জনপ্রিয় একটিভিটি । বিশেষভাবে আমাদের বাংলাদেশী কমুনিটির ভাইয়াদের কাছে এটা নেশার মতো। যাই হোক, মালাকোটা এমন একটা বেড়াবার জায়গা যেখানে আপনি ফ্যামিলি হলিডেতে আসলে আপনি পরিবারের খুব কাছে থেকেও মাছ ধরতে পারবেন।

কায়াকিং:
মালাকোটার চারপাশে অনেক অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে পানি খুব স্বল্প গভীর, কাজেই মালাকোটা যাবার বেলায় গাড়ির ছাদে কায়াকটাকে শক্ত করে বাঁধতে ভুলবেন না । তাছাড়া এখানে রয়েছে অনেক বোট-হায়ার যেখান থেকে নৌকা/কায়াক ভাড়া নিয়ে চালাতে পারেন। এখানকার পানি খুব স্বল্প গভীর, কাজেই বিপদের সম্ববনা কম। বাচ্চারা কায়াকিং খুবই পছন্দ করে।

পাখি পর্যবেক্ষণ:
মালাকোটার জলে এবং স্থলে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অস্ট্রেলিয়ান নেটিভ পাখি । তবে নদীর পানির কাছাকাছি বা বিলবাং (অক্সবো লেক – অশ্ব খুরাকৃতি লেক) অথবা খাঁড়ির (ক্রিক) কাছাকাছি এদের প্রাচুর্যতা বেশি । তবে “গোল্ডেন হুসটলার” পাখিটি অনন্য সুন্দর। এর বুকের দিকটা উজ্জ্বল হলুদ, পাখাগাঢ় সবুজ, গলা সাদা বর্ণের এবং পা কালো । এত সুন্দর করে পাখিটি ডাকে যে আপনি শুনলেই বিমোহিত হয়ে পড়বেন।

ছবিতোলা:
ছবি তুলতে কে না পছন্দ করে । মালাকোটার চারপাশটা এতটাই সুন্দর যে কয়েক মুহূর্তেই অনেক অনেক ছবি তুলে ফেলতে পারবেন । সেলফি, পারিবারিক ছবির বাইরে ল্যান্ডস্ক্যাপ, সূর্যাস্ত-সূর্যোদয়, লং এক্সপোজার, প্রকৃতি, বন, পাখি হয়ে উঠতে পারে আপনার ছবি তোলার বিষয়।

মালাকোটার গাছপালা (ফ্লোরা) এবং প্রাণিকুল (ফনা) অস্ট্রেলিয়ার অন্নান্য এলাকার তুলনায় অন্যতম এবং ব্যাতিক্রমী কারণ এই জায়গাতেই দক্ষিণের শীতল (কূল-টেম্পারেট) বনভুমি আর পূর্বদিকের উষ্ণ (ওয়ার্ম-টেম্পারেট) বনভুমির মিলন হয়েছে। কাজেই এই মিলন সন্ধীতে যে গড়ে আদিম বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে, যে সকল গাছপালা এবং স্তন্যপায়ী, উভচর, মেরুদন্ডী (ভার্টিব্রাটা),সরীসৃপ, মাছ, কীট-পতঙ্গ এবং পাখিসহ যে সকল প্রাণিকুল দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো বিরল প্রজাতির।

এই প্রকৃতির মাঝে ঘুরতে বের হলে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করবেন ভিন্নভাবে। যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল এড়িয়ে সর্বশেষ কবে প্রকৃতির মাঝে একান্ত নিবিড়ে আপনার সময় কাটিয়েছেন মনে করতে কি? হা বলছি একান্ত নিবিড়ের কথা যে বীচে আপনার ফ্যামিলি ছাড়া অন্য কোনো ফ্যামিলি নেই, যে পথে কেবলমাত্র আপনি আপনার পরিবার সহ হাঁটছেন কিংবা এমন কোনো রাস্তা যেখানে আপনার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি নেই। হয়ে উঠবেন প্রিয়জনের কাছে আরো প্রিয়।