বাঘারু নামের গাড়ি তাদের। যাত্রা শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনী থেকে। বাঘারু এরিমধ্যে ঘুরে ফেলেছে সিডনী, ক্যানবেরা, তাসমানিয়া আর ভিক্টোরিয়া। বাংলাদেশের বাঘ আর অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু… দুই নামের মিশেলে এই বাঘারু চষে বেড়াবে গোটা অস্ট্রেলিয়া।
৬ মার্চ তাঁদের আগমন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল শহর সিডনীতে। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, পর্যটক তারেক অণু ও গায়ক ও চিত্রকর কনক আদিত্য। সিডনীতে বাঘারু গাইড হিসেবে যুক্ত হন সিডনী প্রবাসী মাহবুব চৌধুরী। পরে তাদের কুইন্সল্যান্ড থেকে যুক্ত হবেন সাদাত আহমেদ নামের আরো এক পর্যটক।
বাঁদিকের মানচিত্রে বাঘারুদের বিচরণ পথ আর ডানের ছবিতে মাহবুব চৌধুরী, ইনাম আল হক, কনক আদিত্য, ছোট্ট (অরোহী) এবং তারেক অণু
সিডনীতে পা ফেলার মধ্যে দিয়ে ইনাম আল হক পূর্ণ করেছেন সাত মহাদেশ ও পাঁচ মহাসাগর ভ্রমণ করার বিরল অভিজ্ঞতা। এছাড়াও ইনাম আল হক হলেন উত্তর মেরুতে যাওয়া প্রথম বাংলাদেশী।
“অস্ট্রেলিয়ার সব কিছু নতুন লাগছে” – ইনাম আল হক
তারেক অণু আর কনক আদিত্যের পায়ে সস্তা স্যান্ডেল। আরামদায়ক ও বিমানবন্দরে হ্যাসেল মুক্ত পাদুকায় তাদের ভ্রমণ চলবে টানা ৪৮ দিন।অস্ট্রেলিয়ায় ধুলো মাখা পায়ে তারা দেখবেন সমুদ্র সৈকত, বুনো নিস্বর্গ, পাখি, পশু। আর পথে পথে চলবে কনক আদিত্যের গান।
সিডনীতে নেমে সিডনী হারবার ব্রিজ, অপেরা হাউজ, সফেদ সৈকত, উলুংগং, ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন, ন্যাচার রিজার্ভ ঘুরে দেখা এরিমধ্যে শেষ। ক্যানবেরাতেও প্রকৃতি পরিবেশ ও প্রাণী জগৎ দেখা চলেছে সমান তালে।
অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র দ্বীপ তাসমানিয়া যাবার আগে, তাঁদের একদিনের বিরতি ছিলো ভিক্টোরিয়ায়। গেল ১০ মার্চ শুক্রবার এপিংএ প্রবাসী সঞ্জিব ইকবালের বাড়িতে, দলটির সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয় ঘুরুঞ্চি টীমের। সালাউদ্দিন আহমদ ও মাহবুব স্মারকের সাথে সাক্ষাতে ইনাম আল হক ও তারেক অণুর তুলে ধরেন তাদের ছয়দিনের সফরের সংক্ষিপ্ত সার আর ভালো লাগার নানান কথা।
ইনাম আল হকের কাছে প্রশ্ন ছিলো, বয়স যখন আশি পেরিয়ে গেলো, এই বয়সে কেন এলেন অস্ট্রেলিয়ায়? জবাবে খানিকটা মজা করে, বললেন, সৃষ্টিকর্তা তাঁকে দীর্ঘ জীবন দিয়েছেন। ভ্রমণের জন্য শক্তি সামর্থ দিয়েছেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া দেখা না হলে তিনি তাঁর কাছে কী জবাব দেবেন…. সেই চিন্তা বা দুশ্চিন্তা থেকেই এসেছেন অস্ট্রেলিয়ায়।
জানতে চেয়েছিলাম, অস্ট্রেলিয়ার কোন জিনিসটি ভালো লেগেছে? ইনাম আল হকের সোজা জবাব। …”খুব ভালো লাগছে এখানকার প্রকৃতি, বুনো নিস্বর্গ, পশু, পক্ষি। একদম নতুন লাগছে। যা মনে হয় না পৃথিবীর অন্য কোথাও এদের দেখেছি!”
অণু, কনক, মাহবুবের সমন্বয়ে চার জনের টীমের প্রশংসা করে ইনাম আল হক বলেন, ভ্রমণ যার প্রাণ তিনি তো ঘরে থাকতে পারবেন না। অস্ট্রেলিয়া সফরের মূল গাইড মাহবুবের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ঘরে তাঁর তিন মাসের শিশু। সেই সন্তানকে রেখে তিনি বেড়িয়েছেন দু্ই মাসের অস্ট্রেলিয়া সফরে।
ইনাম আল হক জানালেন, অস্ট্রেলিয়া ও তার প্রকৃতি নানান দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ববহ। প্রথমত এ মহাদেশটির খবর হাজার বছরেরও জানতে পারেনি বাকি মহাদেশের মানুষ। অথচ পেনজিয়ার সময়টায় মহাদেশটি যুক্ত ছিলো এশিয়া আর আফ্রিকার মূল ভূমির সাথে। সেই হিসেবে এই মহাদেশ অন্য পুরনো মহাদেশের মানুষের কাছে এক নতুন ভূমি, নতুন দেশ। এখানকার অনেক পশু পাখি আছে যেটি পৃথিবীর অন্য কোথাও তার দেখা পাওয়া যাবে না।
অস্ট্রেলিয়ায় তারেক অণুর এটির দ্বিতীয় সফর হলেও গায়ক কনক আদিত্যের প্রথম। ছয় দিনের দেখা অস্ট্রেলিয়া নিয়ে কনকের উচ্ছ্বসিত মন্তব্য.. ‘সফর দারুন হচ্ছে। খুব ভালো লাগছে এখানে এসে।’
অণুর আশা এবারের অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে যাবেন। সফর শেষে আরো বিস্তারে লিখবেন তিনি আর ইনাম আল হক।আর সফরের শেষে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গায়ক কনক আদিত্য কয়টা গান লেখেন, সুর করেন সেটা হয়তো সময়েই বলে দেবে।