আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে উগান্ডা নানা কারনেই বিখ্যাত। তবে উগান্ডার সবচেয়ে বিখ্যাত বা কুখ্যাত মানুষ বোধহয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন দাদা। সেনাবাহিনীর পাচক বা কুক ছিলেন শুরুতে। পরে সোমালি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষ হয়ে স্বজাতির লোকজনকে কচুকাটা করে বীরত্ব(!) বা নৃশংসতা দেখানোর কারনে তাকে লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি দিয়ে অফিসার বানানো হয়। এরপর তো আকাশ হলো তার সীমানা। ১৯৭১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থান এ প্রেসিডেন্ট মিল্টন ওবুতেকে ক্ষমতাচ্যুত করে হয়ে যান উগান্ডার প্রেসিডেন্ট।
 
বছর আটেক ক্ষমতায় ছিলেন। যেহেতু নিজে লেখাপড়া জানতেন না, তাই তার সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ত সমাজের শিক্ষিত মানুষের উপর। ইন্টেলেকচুয়াল শ্রেনী ছিল তার মূল টার্গেট। ইসরায়েল সরকার তাকে অস্ত্র রাখার জন্য একটা অস্ত্রাগার বা আরমোরি বানিয়ে দিয়েছিল। ইদি সেই অস্ত্রাগারকে বানিয়ে ফেলেছিল তার গোপন টরচার সেল। বিশাল অন্ধকার কক্ষ যেখানে বিন্দুমাত্র আলো বাতাস পৌঁছাতো না সেখানে আটকে রাখা হত বন্দীদের। খাবার পানি এবং বাতাসের অভাবে সাফোকেশনে সাধারণত তিন দিনের মধ্যেই মৃত্যু হত বন্দীদের। এভাবে আট বছরে হাজার হাজার বিরুদ্ধ মতের মানুষকে বরন করে নিতে হয়েছিল এই অসহনীয় মৃত্যু। এর মধ্যে ইদির এক স্ত্রীও ছিল।
ইদি অবশ্য পরে পশ্চিম বিরোধী জোটে যোগ দিয়ে ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গরম বক্তৃতা ও পদক্ষেপ দিয়েছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলে তিনি প্রথমে লিবিয়া ও পরে সৌদী আরবে পালিয়ে আশ্রয় নেন। ওখানেই ২০০৩ সালে নিভৃতে মৃত্যুবরণ করেন।
 
তো তার এই টরচার সেলটি কাবাকা প্যালেস বা উগান্ডা রাজবংশের প্রাসাদের একদম ভেতরে অবস্থিত। আমার এবার উগান্ডায় আসার একটা কারণ ছিল এই প্যালেস এবং ইদির এই গোপন সেল দেখা। সবুজ ঘাসে মোড়ানো পথে হাটতে হাটতে ঘুনাক্ষরেও ভাবিনি কি নৃশংস সত্যের সামনাসামনি হতে যাচ্ছি। সেলগুলোর দরজা খুলে নেয়া হয়েছে এখন। কিন্তু ভেতরের দেয়ালে বন্দীদের হাতের ছাপ, নখ আচড়ে দেয়ালে বিভিন্ন কথা লেখা এসব এখনো রয়ে গেছে। দেখলেই অদ্ভুত এক বিষন্নতা এসে ঘিরে ধরে চারপাশে।
কাবাকা প্যালেস এখন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। দশ ডলার টিকিটে একজন গাইড সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাবে। প্যালেসটি উগান্ডার রাজধানী কাম্পালার মাঝামাঝিতে অবস্থিত। কিছুটা এডিনবরা প্যালেসের আদলে তৈরি এখানে আরো রাখা আছে ইদি আমিনের ব্যবহৃত কামান ও গাড়ি।
 
প্রাসাদের ভেতরের সেই রক্তপাত ও নৃশংসতার ইতিহাসের কারনে বর্তমান রাজা এখানে কখনোই রাত্রিযাপন করেন না। শুধুমাত্র বিশেষ দিবসে দাপ্তরিক কাজে এখানে আসেন।
 
কাবাকা প্যালেস ও ইদি আমিন দাদার টর্চার সেল দেখে বিষন্ন মনে পা বাড়ালাম বাহাই টেম্পল এর দিকে। সে গল্প আরেকদিনের জন্য তোলা থাক।