পালং খিয়াং ঝর্ণা থেকে আমরা যখন বড় মাছ খুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, আমাদের গাইড রাজু তঞ্চৈঙ্গার ভাষ্য, “তোদের খুব তাড়াতাড়ি খুমে নিয়ে যাবো। রাস্তা সহজ। লক্ষীরাম পাড়া থেকে ২০/২৫ মিনিট লাগবে। পাহাড়টা নামলেই মাছখুম।” আমি মনে খুব খুশি। একে তো রাস্তা সহজ আর সময়ও কম লাগবে, মানে কষ্ট কম।
রুংরাং পাহাড় থেকে নেমে আসা কাতল ঝিরি যেখানে তৈন খালের সাথে মিশেছে , সেখান থেকে খানিকটা উজানে এই মাছ খুম (যদিও পাহাড়ি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ভাষায় “বড় মাছ কুম”)। এখানে অনেক বড়ো বড়ো মাছ পাওয়া যায়, বিশেষ করে মহাশোল। আর পথটি অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় কোন পর্যটক তো দূরের কথা, পাহাড়িরাও খুব একটা মাড়ায় না এই পথ।
লক্ষীরাম পাড়ায় সুজন ভাইয়ের হাতে রান্না করা পাহাড়ি মিষ্টি কুমড়োর অমৃত স্বাদের একটা তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে যেই রওনা দিলাম, গাইড রাজুর নতুন ফরমান, “পাহাড়টা খুব খাঁড়া আর পিচ্ছিল। তোরা সাবধানে নামিস”। রাজুর এই কথা শুনে ভরা পেটে ভয়ে গুর গুর করতে লাগলো। কিন্তু কোন উপায় নেই। নামতেই হবে।
প্রায় ১০০০ ফুটের মতো উঁচু ও প্রায় ৮০ ডিগ্রির মতো ঢালু একটা পাথুরে পাহাড় আমি নেমেছি শুধু মাত্র আমার সহযাত্রীদের অসীম সহযোগিতায়। একে তো পাথুরে পাহাড়, তার উপরে সাপোর্ট নেয়ার জন্যে কিছুই নেই যে ধরে নামবো। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পা ও পাশ্চাৎদেশের উপর ভর করে অবশেষে পৌছলাম মাছখুম।
পৌছে মনে হলো পরিশ্রম স্বার্থক।