প্রবাস জীবনে লং উইকেন্ড মানেই একটু দূরে কোথাও যাওয়া দিন কয়েকের জন্য। এবারের লেবার ডে লং উইক-এন্ডে, আমরা গিয়েছিলাম অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের অনন্য সুন্দর টুরিস্ট লোকেশন টেরাঙ।
অনেক আগে থেকে একোমোডেশন বুক করতে হয় নইলে পছন্দসই গুরুত্বপূর্ণ টুরিস্ট লোকেশন-এ থাকা একদিকে যেমন বেশ দুস্কর অন্যদিকে পাওয়া গেলেও তা প্রায়শই হয় ব্যয়বহুল। আর যদি অনেকে মিলে বড়ো গ্রুপ-এ যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয় তাহলে এক জায়গায় একোমোডেশন পাওয়া আরো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। আর এইজন্যই আমরা মাঝে মাঝে বেছে নেই জনপ্রিয় বা ব্যস্ত লোকেশনগুলো থেকে ৩০/৪০ মিনিট দূরের কম পরিচিত কোনো লোকেশন। এতে যেমন লং উইকেন্ড-গুলোতে বেড়ানো যাওয়ার সুযোগ থাকে তেমনি কোলাহল-মুক্ত, নির্জঞ্ঝাট পরিবেশে একসাথে বেশ কয়েকটি পরিবার থাকতে পারা যায়।
মেলবোর্নের ওয়েস্টার্ন সাবআর্ব থেকে প্রায় সোয়া দুই ঘন্টার দূরত্ব। ছোট্ট ছিমছাম শহর। টুরিস্ট এট্ট্রাকশন হিসাবে চিন্তা করলে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা পরিচিত জায়গা নয়। কিন্তু যারা আমার মতো শেষ সময়ে কোনো জায়গায় বেড়ানোর জন্য খুঁজি বা বড়ো গ্রুপ নিয়ে ভ্রমণে যেতে চাই, তারা চিন্তা করতে পারেন এই ধরণের কোনো লোকেশন।
মাস খানেক আগে বুকিং দেয়া হয়েছিল এই লোকেশন প্রায় ছয়/সাত ফ্যামিলির জন্য। বেশ সহজেই এবং মুটামুটি মানের ও নাগালের মধ্যে। অভিপ্রায় একসাথে দুই রাত কাটানো ও আশপাশের টুরিস্ট লোকেশন-এ ঘুরাঘুরি। গুগল সার্চ করে দেখলাম ভিক্টোরিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুরিস্ট স্পট টুয়েল্ভ অপ্পস্টল থেকে দুরুত্ব প্রায় পঞ্চাশ মিনিট, পিটারবরো ও লন্ডন ব্রিজ ৪০ মিনিট আর ওয়ারনামবুল ও এর আশেপাশের লোকেশন যেমন থান্ডারপয়েন্ট, হপকিন্স ফলস, লেক পাৰ্টৰ, টাওয়ার হিল রিজার্ভ, এইসব গুলোরই দূরত্ব ২৫ থেকে পঞ্চাশ মিনিটের মধ্যে।
কিভাবে যাবেন:
আগেই বলেছি ওয়েস্টার্ন সাবআর্ব থেকে টেরাঙ-এর দূরত্ব সোয়া দুই ঘন্টার। যদিও জিপিএস আপনাকে দেখাবে জিলং রিং রোডের পাস্ দিয়ে হেমিল্টন হাইওয়ে ধরে। এই পথে দূরত্ব প্রায় ১০/১২ মিনিট কম। কিন্তু এই রাস্তা দুই লেনের। অন্যদিকে প্রিন্সেস হাইওয়ে ধরে গেলে সময় ১০ মিনিট বেশি লাগলেও কোলাক পর্যন্ত দেড় ঘন্টার রাস্তা চার লেনের, তাই তুলনামূলক ভাবে বেশ নিরাপদ। আমরা এই পথ দিয়েই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর এ পথে আশেপাশে অনেক পেট্রল স্টেশন ও ছোট বড়ো টাউনগুলো থাকে। কোনো কিছু দরকার লাগলে বা খাওয়াদাবার-এর অনেক কিছুই নাগালের মধ্যে থাকবে।
যদি সকাল সকাল টেরাঙ-এর উদ্দেশে যাত্রা করতে পারেন তাহলে কোলাকে বেশ কয়েকটা জায়গায় থামতে পারেন, যেমন সুবিশাল কোলাক লেক, তার পাশে মুটামুটি মাঝারি আকারের কোলাক বোটানিকেল গার্ডেন অথবা কোলাক মেমোরিয়াল স্কোয়ার। বাসা থেকে কোনো কিছু নিতে ভুলে গেলে কোলাক থেকে নিতে পারেন।
কোথায় ঘুরবেন:
ছোট্ট শহর টেরাঙ। লোক সংখ্যা মাত্র দুই থেকে আড়াই হাজারের মধ্যে। দুই রাত্রির এই ভ্রমণে তেমন কিছু ঘুরে দেখিনি। গুগল সার্চ করে দেখে নিতে পারেন টেরাঙ-এ কোনো আকর্ষণীয় স্থান আছে কিনা। আমাদের দ্বিতীয় দিন টেরাঙ থেকে প্রথমে গিয়েছি ওয়ারনামবুলের নিকবর্তী হপকিন্স ফলস-এ , যা টেরাঙ থেকে মাত্র ২৫ মিনিট দূরত্বে। সেখান থেকে ওয়ারনামবুল শহর মাত্র ১৫ মিনিট দূরত্বে। ঘুরলাম থান্ডার পয়েন্ট আর ওয়ারনামবুল কোস্টাল রিজার্ভ, আর প্যাডেল বোট চালালাম লেক পাৰ্টৰ-এ। এর বাইরেও আরো বেশ কয়েকটি জায়গা আছে ওয়ারনামবুল-এ, যদিও যেতে পারিনি সময়-অভাবে, যেমন লোগান বিচ, হোয়াল ওয়াচিং এরিয়া, টাওয়ার হিল রিজার্ভ, কানন হিল লুক-আউট, ফ্লাগস্টাফ হিল মেরিটাইম ভিলেজ ইত্যাদি। সময় করে আপনারা এগুলো ঘুরে আসতে পারেন।
চেক –আউট:
দশটার দিকে আমরা নাস্তা সেরে রেডি হয়ে বাক্সপেট্রা গুছিয়ে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্য, একটু ঘুরে পথে। যাতে দেখে আসতে পারি আরো দুই একটা জায়গা। বৃষ্টির দিন ছিল আমাদের ফেরত আসার দিন। যাইহোক রওনা দিলাম পিটারবরো, টেরাঙ থেকে ৩৫ মিনিট দূরত্বে। গাড়িতে বসেই দেখলাম বিচের সৌন্দর্য, বৃষ্টির কারণে। সেখান থেকে বিখ্যাত গ্রেট ওশান রোড ধরে ১০/১১ মিনিট দূরে লন্ডন ব্রিজ। বৃষ্টির ছাট একটু কম থাকায় নামলাম, দেখলাম আর চায়ের পর্বও সারলাম। বৃষ্টির দিন বলে পরবর্তী গন্তব্য সোজা কোলাক প্রায় ৫৫ মিনিট দূরত্বে। কোলাক লেক আর বোটানিকেল গার্ডেরনের পশে জড়ো হলাম সবাই, সারলাম দুপুরের খাবার | তারপর সোজা গন্তব্য যার যার বাড়ি। হোম সুইট হোম।
কিছু নির্দেশনা :
- যারা নামাজ পড়েন তারা প্রেয়ার ম্যাট নিতে ভুলবেন না
- অনলাইনের এই যুগে সবাই এখন স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন। তাই পেট্রল স্পাই বা এই জাতীয় কোনো এপ্প থেকে দেখে নিতে পারেন কোথায় পেট্রল বা গাড়ির জ্বালানির দাম কেমন, সেই অনুযায়ী গাড়িতে জ্বালানি ভরতে পারেন খরচ বাঁচানোর জন্য
- আমার জানামতে আমরা বাঙালিরা বেশির ভাগই খাবার সঙ্গে নিয়ে যাই। তাই একোমোডেশন বুক করার আগে জেনে নিতে পারেন ওখানের কিচেনের অবস্থা কি রকম যেমনঃ ফ্রীজ, রান্নার চুলা ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে কিনা ইত্যাদি
- রান্নার ব্যবস্থা যেমনি থাকুক, ইলেক্ট্রি ফ্রাই পেন, গ্যাসের স্টোভ ইত্যাদি গাড়িতে রাখা ভালো, চা বা খাবার গরমে কাজ দিবে
- টয়লেট পেপার, টিসু পেপার ও কিচেন টাওয়েল সঙ্গে রাখবেন
- কান্ট্রি সাইড-এর বেশির ভাগ এলাকায় দোকানপাট তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়, বড়ো বড়ো শপিংমল থাকে না সুতরাং কোনো কিছু কেনাকাটার থাকলে সন্ধ্যার আগে আগেই সেরে ফেলতে চেষ্টা করবেন
- প্রয়োজনীয় সবকিছু সঙ্গে নিয়েছেন কিনা চেক লিস্ট করে নিতে পারেন, অনর্থক ভোগান্তি এড়ানোর জন্য
- অপরিচিত রাস্তায় সাবধানে গাড়ি চালাবেন