সাপ্তাহিক ছুটির দুইদিনের সাথে একদিন যোগ হলেই মনে হয় কোথাও বেড়াতে যাই। তাই একদিন সকালে উঠেই বেড়িয়ে পড়ি অজানাতে। উদ্দেশ্য ছিল এমন কোথাও যাওয়ার – যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা একটু ভিন্ন ভাবে। বেড়িয়ে পড়লাম দুই ছেলে নিয়ে লং ড্রাইভে। আমাদের গন্তব্য পয়েন্ট লিও এস্টেট ভাস্কর্য পার্ক।

মেলবোর্ন থেকে ৯০ কিঃমিঃ দূরে পয়েন্ট লিও এস্টেট ভাস্কর্য পার্ক। সেখানে যাওয়ার রাস্তাটাও দারুন। আমার ছোট ছেলে রাস্তার কিছু ভিডিও করেছে যখন আমি ড্রাইভিং করছিলাম। রাস্তার দুই ধার দিয়ে সবুজ লম্বা গাছগুলো খুব সুন্দর। আশ্চর্য্যজনক ভাবে রাস্তা বেশ খালি থাকতে ড্রাইভিং করতে বেশ ভালো লাগছিলো।

রাস্তার সৌন্দর্য আমাকে সবসময় আকৃষ্ট করে। এস্টেটের রুচিসম্পন্ন ঢোকার জায়গা থেকে শুরু করে ভিতরের বিলাস বহুল ব্যবস্থা দেখে আমরা মুগ্ধ। ওখানে গিয়ে আগেই টিকেট কেটে ঢুকে পড়লাম ভাস্কর্য পার্কে। পার্কে আছে মোট ৬০টি ভাস্কর্য আছে। যেতে পারেন আধা ঘন্টার হাঁটা পথে অথবা এক ঘন্টার পথে। সবগুলো ভাস্কর্য দেখতে হলে এক ঘন্টার হাঁটা পথই আপনাকে বেছে নিতে হবে। আমরা যেদিন পার্কে যাই, সেদিনের আবহাওয়া খুবই ভালো ছিল। রোদ ছিল কিন্তু গরম ছিল না। আর সমুদ্র লাগোয়া হওয়াতে হালকা ঠান্ডা বাতাসে হাঁটতে বেশ ভালো লাগছিলো। দেশি বিদেশি শিল্পীর বানানো প্রতিটি ভাস্কর্য বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিলো।

পার্কে ঢোকার মুখেই দাঁড়িয়ে আছে বিখ্যাত KAWS & GORMLEY নামের এক ভাস্কর্য। এটির উচ্চতা ৫.৫ মিটার । আমার বড় ছেলের খুবই পছন্দের ভাস্কর্য। সে KAWS এর সাথে ছবি তোলার জন্য ওর KAWS এর টি শার্ট পরে গিয়েছিল। যে ছেলে কখনো বেশি ছবি তুলতে চায়না, তার ছবি তুলেই আমরা আমাদের পার্কে ঘোরাঘুরি শুরু করি। প্রত্যেকটা ভাস্কর্য সাজানো হয়েছে বেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে সমস্ত পার্ক জুড়ে। প্রত্যেকটা ভাস্কর্যের সাথে রয়েছে শিল্পীর খানিক বর্ননা। আমার পছন্দ হয়েছে বেশ কয়েকটা , কিন্তু একটা ভাস্কর্য একটু বেশি ভালো লেগেছে। ভাস্কর্যের নাম হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন। “Sculpture is the art of the intelligence” – Paul Picasso সত্যিই একেকটা ভাস্কর্য যেন একেকজন শিল্পীর গভীর বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন।

জন গ্যান্ডাল এবং তার পরিবারের ৩৫০ একর Pt Leo Estate এ আছে ১৯ একর এ পার্ক, ৫০ একর vineyard । এটি অবস্থিত মেরিকস (Merricks), মর্নিংটন পেনিন্সুলাতে (Monrninton Penninsula) এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫০ মিলিয়ন ডলার। রুচিসম্পন্ন পরিবেশ আর বিলাসিতার সমন্বয়ে এক দর্শনীয় জায়গা এস্টেটটি।

ভাস্কর্য পার্কে ঢোকার টিকেট মাত্র ১০ ডলার। বাচ্চা ও স্টুডেন্ট ডিসকাউন্ট টিকেট ৫ ডলার। বাইরের কোনো খাবার নিয়ে ঢোকা যাবে না। ওখানে আছে ২ টি রেস্টুরেন্ট। খাবারের দাম একটু বেশি, কিন্তু খেতে খুব ভালো। এতদূর ড্রাইভিং করে এতো সুন্দর একটা জায়গা দেখে মনটা খুব ভালো হয়ে গেছে। মনে মনে দিন গুনছি আবার কবে লং উইকেন্ড আসবে, আবার অন্য কোথা বেড়াতে যাব।