হাওয়াই যাওয়ার সময় অ্যামাজন থেকে খানিকটা বাধ্য হয়েই পতাকাটা কিনলাম, দেশের পতাকা না থাকলে নাকি ট্যুরটা কমপ্লিট হবে না!
 
হাতে সময় না থাকায় জ্যাকসন হেইট্সে যেয়ে কিনতে পারি নাই, অর্ডার দেওয়ার সময় বুঝতে পারি নাই যে এটা এত বড়! পতাকা তো কিনলাম, কিন্তু ছবিটা তুলবো কোথায় পতাকা নিয়ে? খুব ই চিন্তায় পরে গেলাম। আজকাল দেখি মানুষজন বাড়ির পেছনে বাঁশবাগান বা ঘরের সামনে পুকুর পারে যেয়েও পতাকা ধরে ছবি তুলে, দেশপ্রেম দেখায়। আমার কাছে পতাকার মর্মার্থটা আরো বেশি, তাই পতাকা নিয়ে ছবি তুলতে হলে খুব ভেবে লোকেশন বাছতে হবে। 

কোকো হেড ট্রেইলের ইতিহাস:
কোকো ক্রেটার টা একটা নিষ্ক্রিয় আগ্নেয়গিরি। ধারনা করা হয় সর্বশেষ বিস্ফোরণ হয়েছিল সাত হাজার বছর আগে। এখানকার রেলওয়ে স্টেশনটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোকো ক্রেটারের শীর্ষে অবস্থিত সামরিক বাঙ্কারগুলি থেকে লোকজন এবং সরন্জাম সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হত। রেলপথটি ১৯৪২ থেকে ১৯৪৩ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।

এরকম একটা বিশেষ জায়গায় যেয়ে দেশের পতাকা ধরে ছবি তোলাই যায়। কোকো ক্রেটার টা হনলুলু এয়ারপোর্ট থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দুরে। আমি একদিনে সর্বোচ্চ ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হাইক করেছি। কোকো ক্রেটার রেইলওয়ে ট্রেইলহেড পার্কিং লট থেকে মোট ৪.৫ কিলোমিটার। দ্বীপের মাঝে থেকে এক এক দিকে ২.২ কিলোমিটার। দুটো পানির বোতল, একটা কলা, একটা আপেল, ক্যামেরা আর ট্রাইপড নিয়ে রওনা দিলাম। আমি বেভেছিলাম ২.২ কিলোমিটার যেতে আর কি এমন কষ্ট হবে। আমি এইটা খেয়াল করিনি যে ১.৫ কিলোমিটারে এলিভেশন গেইন হবে প্রায় ৩০০ মিটার। প্রথম দিকে বুঝতে পারিনি পরে রেল লাইনে ওঠার পর বুঝতে পারলাম যে পুরা রাস্তায় কোন ছায়া নেই, পুরো টনটনে রোদ।

একটু পর পর বিশ্রাম নিয়ে, পানি খেয়ে, একটু একটু করে আগাচ্ছিলাম। অর্ধেক পথের কাছে যেতেই রেল লাইনটা যেন খাড়া উপরের দিকে , হেটে ওঠা যাবে না, রেইল লাইন ধরে হামাগুড়ির মত করে সবাই উপরে উঠছে । উঠতে উঠতে শুনলাম, যত কষ্ট হচ্ছে ওঠার সময়, নামতে নাকি খুব সহজ।

খানিকটা পথ পেড়োতেই পানি শেষ হয়ে গেল। দোটানায় পরে গেলাম। এমন একটা জায়গা যে অন্যকারো কাছে পানি চাওয়া মানে অবিচার করা । এদিকে মাথার উপর কাঠফাটা রোদ, বড় কোন গাছ নাই যে একটু ছায়াতে বসবো। এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকতেই বুঝতে পারলাম পানি ছাড়া আর যাওয়া যাবে না। শেষের রাস্তাটুকু বড্ড কঠিন ছিল, কোনোমতে হামাগুড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম। উপরে উঠে কোন পানির সোর্চ ও পাবো না, কিছুক্ষণ বসে থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম নেমে আসবো ।

আমার এনার্জি লেভেল তখন প্রায় শেষ! ট্রাইপডটাও তখন বেশ অস্বস্তি দিচ্ছে। মনে হচ্ছিল সব ফেলে রেখে চলে যাই। ওখান থেকে পরে গেলে নিচে নামার পরিবর্তে সোজা উপরে চলে যাব এরকম ভয়ংকর একটা অবস্থা।

মনে ভরসা ছিল যে নামার পথ টা সহজ। এই প্রথম কোন হাইক শেষ না করে ফিরে আসতে হচ্ছে, অজুহাত পর্যাপ্ত পানি ছিলনা। যাই হোক সত্যটা হল আমি আমি ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসতেছি। নামতে শুরু করে দেখি আমার পা কাপতেছে, আমার এ্যাক্রোফোবিয়া নাই যে ভয়ে পা কাপবে। পায়ে জোর পাচ্ছিলাম না, নামার সময় টা ও একই রকম কঠিন। যারা বলেছিল নামাটা সহজ তাদের কে সামনে পেলে ঠিক কামড়ে দিতাম, এরকম মিথ্যাচার কেন করলো? এদিকে গলা শুকিয়ে কাঠ, অন্যদিকে পা কাপছে, কিছু ধরে যে নামবো সেরকম কিছু ও নাই । যাক কচ্ছপের গতিতে নামতে নামতে একটু সেইফ জোনে এসে হঠাৎ মনে পরলো ব্যাগে পতাকা টা আছে, বের করে ছবি তুলে ফেললাম। প্রথম কোন ট্যুরে পতাকা নিয়ে ছবি তুললাম। সবার ক্লান্ত করুন চেহারা দেখে কাউকে ছবি তুলে দেওয়ার রিকুয়েস্ট করতে ও লজ্জা লাগছিল।

ছবিটা স্মরনীয় হয়ে থাকবে, এরপর কখনো হাওয়াই যাওয়ার সুযোগ হলে এই হাইকটা কমপ্লিট করবো।

সতর্কতা :
  • পর্যাপ্ত পানি নেওয়া উচিত
  • সানস্ক্রিন
  • ব্যাকপ্যাকে কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিস নেওয়া যাবে না। (আমার ব্যাগে লাল স্কার্ট সহ বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছিল, উপরে ওঠার সময় মনে হচ্ছিল যে কেউ পেছন থেকে টানছে, নিচে নামার সময় মনে হচ্ছিল কেউ পেছন থেকে ঠেলছে)
  • ভাল হাইকিং সু
  • কমফর্টেবল ড্রেস
  • ৩-৫ ঘন্টা সময় রাখতে হবে
  • হাইকিং শুরু করতে হবে খুব ভোরে যাতে রোদ টা বিরক্ত না করতে পারে।