বেলেজান বিবির সন্তান আতাহার আলী যখন মায়ের সাথে অভিমান করে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বিরাহিমপুর গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন তখন তিনি ২০ বছরের টগবগে যুবক। গ্রাম ছাড়ার পর আতাহার আলী যোগ দেন পুলিশ বাহিনীতে।
সময়টা ১৯৭১ সাল। আতাহার আলীর কর্মস্থল তখন ময়মনসিংহে। তিনিও অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। একসময় যুদ্ধ শেষ হয়, দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু ছেলের জন্যে বেলেজান বিবির অপেক্ষা আর শেষ হয় না।
এক বছর পর রাজবাড়ীর গ্রামে বেলেজান বিবির কাছে সেক্টর কমান্ডারের একটা চিঠি এলো। তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা আতাহার আলী, যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু কোথায় তার কবর, কোথায় শহীদ হয়েছে তার সন্তান, কিছুই উল্লেখ নেই সেই চিঠিতে। এবার তার অপেক্ষা, সন্তানের কবরের খোঁজ যদি পাওয়া যেতো তবে সেই কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মা সন্তানের জন্যে দোয়া করতেন।
বেলেজানের বাকি সন্তানদের অনেক খোঁজাখুঁজিতে ৪১ বছর পর ২০১২ সালে জানা গেল, তার আতাহার আলী শুয়ে আছেন বাংলাদেশ – ভারতের সীমান্তে , সুনামগঞ্জের ডলুরাতে। খোঁজ পাওয়ার ২ বছর পর ২০১৪ সালে ৯০ বছরের বৃদ্ধা মা বেলেজান বিবি আসলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ তার সন্তানের কবরে, চোখের জলে ভিজিয়ে দিলেন সেই কবর। শেষ হলো সন্তানের জন্যে এক মায়ের অপেক্ষার।
Previous image
Next image
এমনি ৪৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে শহীদ হয়ে শুয়ে আছেন এই ডলুরাতে। ৪২ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও ৬ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাদের কারো বাড়ি সুনামগঞ্জে , কেউ হবিগঞ্জের , কেউবা কিশোরগঞ্জের। এই যেমন আতাহার আলীর বাড়ি রাজবাড়ী। এরা সবাই ডলুরার আশে পাশে বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। শহীদদের পরম যত্নে এই স্থানে কবর দেওয়ার কাজটি করেছেন আনসার কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়া, তার নিজ পৈত্রিক ভূমিতে। কবরস্থানটির পরেই ভারত সীমান্তের নো ম্যানস্ ল্যান্ড, ওপারে মেঘালয়ের বালাট।
এই এলাকায় খুব একটা পর্যটকের আনাগোনা নেই। এবারের সুনামগঞ্জে বাইক ট্যুরে গিয়ে ঘুরে এলাম ডলুরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান।
Post Views: 46