১৮ জন বাবু হাতির সাথে মুলাকাত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু দু:খের ব্যাপার হলো, এরা সবাই অনাথ। কারো কারো বাবা মা থাকলেও নানা কারণে তারা পরিবার ছাড়া। এই যেমন ছোট্ট হাতি রামা। ভীষণ চন্চল। বয়স ১৬ মাস। ওকে পাওয়া গিয়েছিল একটা গর্তের ভেতর। দেখা গেল ওর পায়ে সমস্যা আছে, হাঁটতে গেলেই পরে যায়। হয়তো দলছুট হয়ে গিয়েছিল। আরেকজন রোহো। ওকে কেন যে ওর দল ত্যাগ করে তা জানা যায় পরে। ও এপিলেপটিক। প্রায়ই খিঁচুনি উঠে বেচারা বিপদে পরে যায়। আবার আড়াই বছর বয়সী নালেকুকে পাওয়া গিয়েছিল ওর মায়েরই মৃতদেহের সামনে। আবার শুগুরুইয়ের মা এতটাই অসুস্থ ছিল যে শুগুরুই মায়ের দুধ খেতে না পেয়ে প্রায় মারাই যাচ্ছিল। তাই ওর জীবন বাঁচাতেই বাকিদের মত ওকেও আনা হয় কেনিয়ার শেলড্রিক ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত আশ্রমে।

বাচ্চা হাতির বেঁচে থাকার জন্য জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ অপরিহার্য। কিন্তু নানা কারণে মায়ের দুধ না পাওয়া এই বাচ্চাগুলোকে এই আশ্রমে আনা হয়, তিন থেকে চার বছর বয়স পর্যন্ত তাদের এখানেই লালন পালন করে ধীরে ধীরে ওদের জঙ্গলে ছাড়া হয়। সেই প্রক্রিয়াও দীর্ঘ। কোন কোন বাবু হাতি আড়াই বছরের মাঝেই বেশ শক্তপোক্ত হয়ে জঙ্গলের বন্য হাতির দলে ভীড়ে যাবার জন্য তৈরী হয়ে যায়। আবার কারো কারো সময় লেগে যায় অনেকদিন। এমনও হয় যে ওরা গেল, দলে ভিড়তে না পেরে আবার ফেরত এলো। আবার ধীরে ধীরে পারলো। এই সময়টার মধ্যে বাবুগুলোকে ফর্মূলা দুধ খাইয়ে পরম যত্নে লালন পালন করে যায় এই সেন্টারের কীপাররা।

হাতি সহ অন্যান্য বন্য প্রাণীর মৃত্যু হওয়া উচিত স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে। অথচ এই যে অনাথ বাচ্চাগুলোর অনাথ হবার পেছনে বড় কারণ হচ্ছে মানুষ। মানুষ সংখ্যায় যত বাড়ছে ততই বন্য প্রাণীর জায়গা ছোট হচ্ছে। পানি কিংবা খাবারের উৎসে মানুষের দখল বেড়ে যাচ্ছে। ফলে খাবারের অভাবে প্রাণ হারায় ওরা। জায়গা দখলের লড়াইয়েও হার মানতে হয় এই প্রাণীগুলোকেই। আবার দুর্লভ আইভোরির জন্য নির্বিচারে হাতিদের হত্যাও করে এই মানুষই। এর ফলে সবচেয়ে বেশি মাশুল দিতে হয় বাচ্চাগুলোকে। মা ছাড়া, দলের সুরক্ষা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যায় এদের পক্ষে।

 
এখানে একটা অন্ধ গন্ডারও আছে। নাম ম্যাক্সওয়েল। ম্যাক্সওয়েলকে বাকি জীবন এখানেই থাকতে হবে কেননা জঙ্গলে গিয়ে নিজের টেরিটরি স্খাপনের মত ক্ষমতা তার নেই।
শেলড্রিক ট্রাস্টের গন্ডার এবং বাবু হাতি গুলোর ভরণ পোষণ করা হয় পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের অনুদানে।কিন্তু এই অনুদানের প্রয়োজনই হতোনা যদিনা আমরা মানুষেরা ওদের আবাসস্থল, প্রিয়জনকে কেড়ে না নিতাম। নিজেদের লোভ একটু সামলে রাখতাম! প্রকৃতি মানুষের জন্য যতটা, ততটাই অন্য সব প্রাণীর জন্য। কারোর জীবনের মূল্য কারো থেকে কম না। রাইনো হর্ন কিংবা আইভোরি সম্পূর্ণভাবে বেচাকেনা বন্ধ রেখে, প্রকৃতিতে সহাবস্থান করে, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারে সচেতন হয়ে, জন্মনিয়ন্ত্রণ করে পৃথিবীতে ভারসাম্য বজায় রাখতে যদি নাই পারি তো আর নিজেদের সৃষ্টির সেরা বলার কোন অধিকারই আমাদের থাকবেনা।

 

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্তমানে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আপনি এ সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।