ওয়েস্টার্ন সাহারার রাজধানী লাইয়ুন এ আছি আজ প্রায় ৯ মাস। মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা থেকে এটি প্রায় দেড় ঘণ্টার ফ্লাইট।

এখানকার মূল আদিবাসীদের সারাওই বলা হয়ে থাকে, তবে মরক্কোর শাসনে থাকার কারণে এখানে প্রচুর মরোক্কান বাস করেন। তারা বেশিরভাগই এসেছেন মরক্কোর বিভিন্ন জায়গা থেকে – যেমন মারাকেশ, আগাদির, কাসাব্লাঙ্কা ইত্যাদি। বেশির ভাগ মানুষই মুসলিম। খুব ছোট একটা শহর এই লাইয়ুন যাকে এল-ইয়ুন ও বলা হয়ে থাকে। এক পাশে সাহারা মরুভূমি আর অন্য পাশে আটলান্টিক মহাসাগর।

মরক্কোর মানুষ ফুটবল পাগল। আর এবারের বিশ্বকাপে মরক্কোর অসাধারণ পারফরমেন্স ছোট্ট এ শহরেও সাড়া জাগিয়েছে। বয়ে এনেছে উল্লাসের ঢেউ। মরক্কো একটার পর একটা ম্যাচ জিতে আর মানুষ রাস্তায় নেমে উদযাপন করে।

শহরটা এত ছোট যে কোন সিনেমা হল, বড় কোন শপিং মল অথবা এন্টারটেইনমেন্টের জন্য অন্য তেমন কিছুই নেই এখানে। আছে কিছু পার্ক। বিকালে সবাই পরিবার সহ এসে এখানে বসে সময় কাটায় অথবা তাঁবু আর খাবার নিয়ে চলে যায় আটলান্টিকের পাড়ে। তবে প্রচুর কফি-শপ আছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে আর বিকাল থেকে দেখা যায় সেখানে বসে কফি বা আতাই (স্পেশাল মরোক্কান চা) খাচ্ছে আর টিভিতে ফুটবল খেলা দেখছে। বিকেল বেলা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের একসাথে ফুটবল খেলা দেখলেই বোঝা যায় ফুটবল ওরা কতটা ভালোবাসে।

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠার পর এই ফুটবল পাগলদের কি অবস্থা হতে পারে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। শনিবার ছিল সেই দিন। যেদিন তারা ইতিহাস গড়ে ফেলে পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে। যেদিন যেদিন মরক্কোর খেলা থাকে সেদিন যেন এক বিশেষ আমেজ থাকে। খেলা শুরু হবার আগেই অফিসগুলো ফাঁকা হয়ে যেতে শুরু করে। অনেক সময় আগে ছুটিও দিয়ে দেয়, অনাকাঙ্ক্ষিত গোলযোগ এড়াতে। যদিও এখন পর্যন্ত এমন কিছু এই শান্ত শহরে আমি দেখিনি। আবার ম্যাচ জিতে গেলে আনন্দ মিছিল বের হয় আর এত ছিমছাম সুন্দর শহরটাতেও বিশাল ট্রাফিক জ্যাম লেগে যায়। প্রচুর গাড়ি রাস্তায় বের হয়, অনবরত হর্ন দিতে থাকে (সাধারণত এখানে খুব দরকার ছাড়া গাড়ির হর্ন কেউ দেয় না)। প্রতিটা গাড়িতে উড়তে থাকে মরোক্কান পতাকা। এত গাড়ি বের হয় যে এক সময় দেখা যায় পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় যেন দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম কমাবার জন্য। আজও খেলা শেষের বাঁশিটার পরই বের হয়েছি সবার সাথে আনন্দ উপভোগ করতে। বড় রাস্তা গুলোতে আগেই পুলিশ পাহারা ছিল। অন্যবারের মতো এত গাড়ি ছিল না। কম গাড়ি চলতে দেয়া হয়েছে। মানুষ পায়ে হেঁটে পতাকা উড়িয়ে, ভেঁপু বাজিয়ে আনন্দ করছে। আর একটা ব্যাপার দেখেছি। আমাদের দেশে হিন্দুদের মাঝে এটা দেখা যায়। পূজার সময় উলু ধ্বনি দেয়া। এটা এখানে আমি দেখেছি। যেকোনো আনন্দ প্রকাশে এরা উলু দিয়ে থাকে। মেয়েরা একসাথে উলু দিয়ে নেচে আনন্দ উদযাপন করে। সত্যি অসাধারণএক অভিজ্ঞতা। কাতার না গিয়েও খুব বেশি কিন্তু মিস করছি না ফুটবল। বিশ্বকাপের পুরো আমেজ লাইয়ুনে বসে পাচ্ছি। এখন দেখা যাক সামনের ম্যাচে কি হয়! এবার তারা লড়বে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের সাথে।