কোভিড-১৯ এর লকডাউন কবল থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা মেলবোর্নবাসিরা যেন ঝাঁপিয়ে পরেছিলাম ঘুরাঘুরি তে এই ক্রিস্মাস হলিডেতে। ভাবখানা এমন ছিল যেন এখন যত পারি ঘুইরা লই আবার কুনদিন তালা দিয়া দেয় তার ঠিক আছে?
হারে রে রে রে রে, আমায় রাখবে ধ’রে কে রে – দাবানলের নাচন যেমন সকল কানন ঘেরে, জপতে জপতে দলবল নিয়ে রওনা দিলাম গন্তব্য Mornington Peninsula Beach। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে দেখলাম শুধু আমরা একা বাঁধন ছাড়া পাই নাই পুরো মেলবোর্ন সেই দিন বীচে চলে এসেছে। কয়েকটা বীচ ঘুরতে ঘুরতে কোথাও পার্কিং না পেয়ে যখন হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছি ঠিক তখনি গুগল ম্যাপে দেখিয়ে দিল ড্রোমানা বীচ এর পাশের সেইফটি বীচ। ম্যাপের লোকেশনটাই যেন আমাদের বলে দিচ্ছে এখানে যাও এখানে ভীর নাই।
প্রচন্ড ভিড়ে জায়গা না পেয়ে এখানে বীচ থেকে কিছুটা দুরেই পার্কিং করে পোটলা বোচকা টেনে আনতে হয়েছিল। কিন্তু যা বুঝলাম বীচ সংলগ্ন পার্কিং টা বেশ বড়। ফেস্টিভ সিজন না থাকলে পার্কিং নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না সাধারনত। নীরব একটা জায়গা খুজে আমাদের তাঁবু পুঁতে আর ম্যাট বিছিয়ে আস্তানা গাড়লাম। ঘুরতে ঘুরতে আমাদের বাচ্চাকাচ্চা দলের ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল তাই সিধান্ত নিলাম আগে লাঞ্চ করে তারপর সমুদ্রে ঝাঁপাঝাপি। পরোটা -গোশত খেয়ে তুমুল এনার্জি সঞ্চয় করে সবাই মিলে ঝাঁপিয়ে পরলাম পানিতে।
অস্ট্রেলিয়ার যে কয়টা সমুদ্র সৈকতে গিয়েছি এ পর্যন্ত সব কয়টা তে কিছু না কিছু বিপদজ্জনক নোটিশ বোর্ড বা সাইন লাগান দেখেছি। এই বীচ টা নামকরণ এর সার্থকতা বীচ টা তে না আসলে জানতেই পারতাম না আসলে।নামের মতই সেইফ শান্ত এই ড্রোমানা বে এর শ্যালো পানির বীচ। সমুদ্রের ভিতর অনেক দূর পর্যন্ত পা এর নীচে মাটির অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাই নিশ্চিন্তে হেঁটে যাওয়া যায়। অফ্রেন্ডলিস্ট্রেলিয়ায় সব কিছুতে যেমন কিডস করার একটা প্রয়াশ থাকে এ বীচ টাকে সেরকম মনে হয়, যেন এটা বাচ্চাদের জন্যই তৈরী করা একটা বীচ। একটা ছোট জেটি আছে কোস্টাল এরিয়াতে। এর উত্তরে তাকালে দেখা যাবে Mount Martha পাহাড়ের নৈশর্গিক দৃশ্য এবং দক্ষিনে দেখা যাবে Arthurs Seat।
সারাদিন কাটিয়ে দেয়ার মত একটা দুর্দান্ত জায়গা এই সেইফটি বীচ। বীচ থেকে কিছুটা উপরে সমুদ্র তটে টেন্ট বা ম্যাট বিছিয়ে সমুদ্র দেখে উপভোগ করতে করতে টের ই পাওয়া যাবে না সময় কখন চলে যাবে। সুর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য টা আমাদের সেদিন হয় নি তবে অপেক্ষায় আছি আরো একদিন ঢুঁ মারার।
সব মিলিয়ে বীচটা চমৎকার কিন্তু চাঁদের ও কলঙ্কের মত এখানের মেইন সমস্যা হল পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট এর অভাব এবং অস্ট্রেলিয়ার সব বীচের মতই চেঞ্জ রুম বা শাওয়ারের অভাব।