ছুটির দিনে বাসায় বসে নিজে বানিয়ে চা খাইতো সবসময়ে। ইস্টারের লম্বা ছুটিতে মনে হলো একটু ভিন্ন ভাবে চা খেলে মন্দ কি! তাই সকালে উঠে রওনা দিলাম চা খাওয়ার উদ্দেশ্যে, সঙ্গে দুই ছেলে। গন্তব্য ড্যানডেনং রেঞ্জের লুকানো সৌন্দর্য সাসাফরাস গ্রাম।
সাসাফরাস গ্রামটি মেলবোর্ন শহর থেকে ৪৩ কিমি দূরে, জনসংখ্যা ১০৬১। এই গ্রামের নাম রাখা হয়েছে সাসাফরাস গাছের নামে। ১৮৯৩ সালে কৃষিকর্মের জন্য এই গ্রামটি বিখ্যাত ছিল। গ্রামটিতে যাওয়ার পথটা খুবই সুন্দর। আমি ভেবেছিলাম হয়তো শরতের পর্ণমোচী রঙিন পাতা দেখতে পাবো। কিন্তু তেমন কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলাম না। কিন্তু রাস্তার সৌন্দর্যের কোনো কমতি ছিল না। মাউন্ট ড্যানডেনং টুরিস্ট রোড এর দুই পাশে অনেক রকম সুন্দর সুন্দর দোকান আছে। পার্কিং পাওয়া খুব কষ্টের।
আগাথা – ক্রিস্টির নভেলের চরিত্র মিস মার্পলে। তারই নামে এই টি রুম। মিস মার্পলে টি রুম খুবই বিখ্যাত ডেভোনশায়ার চা’র জন্য। মাউন্ট ড্যানডেনং টুরিস্ট রোডের উপর উনিশশো শতাব্দীর অদ্ভুত সুন্দর এই টি রুম। অনেক লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। আমার মত অনেক চা প্রেমীরা এসেছেন ।এর ফাঁকে আশেপাশের দোকান গুলো ঘুরে দেখলাম। টি লিভস নামে একটা দোকানে ঢুকে মোটামুটি মাথা ঘুরে গেছে। কত যে রকমারি চায়ের কাপ আর কেটলির সমারোহ।মিস মার্পলে টি রুমের ডেকোরেশন দেখে মনে হয় আমি যেন টাইম মেশিনে ঊনিশশো শতাব্দীতে চলে গেছি। আর চাতে চুমুক দিয়ে মনে হলো ৬০ কিমি ড্রাইভ করা সার্থক। যারা আমার মতো চা খেতে পছন্দ করেন , সময় পেলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন এই চায়ের দোকানে।
মাউন্ট ড্যানডেনং – মেলবোর্নে যারা থাকেন তারা নিশ্চয় গেছেন এখানে। আমরাও অনেকবার গিয়েছি কিন্তু কখনো পুরোনো হয়না এই জায়গাটা। পাহাড়ের উপর থেকে মেলবোর্ন শহরের স্ক্যালিনে দেখতে খুবই ভালো লাগে আমার। মেজ , গার্ডেন, রেস্টুরেন্ট, জায়ান্ট চেয়ার, ফরেস্ট হাটা পথ – সবকিছু মিলিয়ে ঘোরাঘুরির একটা সুন্দর জায়গা। সারাদিন বেশ সুন্দর একটা সময় কাটানোর পর এবার ফেরার পালা। বহুদিন মনে থাকবে ৬০ কিমি দূরে. এই এক কাপ চায়ের কথা। কিশোরে কুমারের ওই গানটা গেতে ইচ্ছে হচ্ছে – “এক কাপ চা মুখে তুলতেই মনে পরে যায়. …..”
এতদূর যখন এসেছি, তাই ঘুরতে গেলাম পাশেই অবস্থিত আলফ্রেড নিকোলাস মেমোরিয়াল গার্ডেন। ১৩ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই গার্ডেনে আছে ছোট বড় এবং আকাশচুম্ব্বী গাছের সমারহ। আরো আছে ছোট্ট পানির ঝর্ণা, লেক আর হাউস বোট। লেকের জন্য রাস্তা থেকে বেশ কিছু দূর নিচে নামতে হয়। ছায়া ঘেরা মায়াবী এই লেক দেখে মনে হয় কোনো সিনেমার সেটে চলে এসেছি। সবকিছু বেশ সাজানো গুছানো। লেকের চারিদিকে ঘোরাঘুরি করলাম আর ছবি তোলা শেষে ভাবছি আর কোথায় যাওয়া যায়। লেকের নিচে নাম সহজ ছিল, কিন্তু উপরে ওঠা কষ্ট। যাই হোক গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম পরবর্তী গন্তব্যে।