শীতের হালকা আভাস পাচ্ছিলাম। গাছের পাতাগুলো কেমন জানি একটু আধটু করে তার যৌবন হারিয়ে আরো পরিণত হচ্ছিলো। ও হ্যা এতো শরৎ মাসের আনাগোনা, তা আমি খেয়ালই করিনি। মেয়েটা বল্লো বাবা, ফল ব্রেকে আমরা কোথায় যাচ্ছি? আসলেইতো, সেই দূর পাহাড়ের হাতছানি আর প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য কখন যে আমায় ইশারা করছে তা অনুধাবন করিনি। অনেকেই বলে বাংলাদেশের কক্সবাজারে কত যাস? উত্তর আসে, আর যামু কই? কিন্তু একবারের জন্য ও বলেনা এমন সুন্দর সমুদ্র সৈকত বারবারই অবলোকন করা যায়। প্রকৃতি কখনোই পুরোনো হয় না। এর সৌন্দর্য দিনকে দিন আরও বাড়তে থাকে। ঠিক তেমনি টেনিসির গ্যাটলিনবার্গ হচ্ছে এমন এক জায়গা যেখানে পাহাড় আর নীল আকাশের সাথে প্রকৃতির বোঝাপড়াটা খুবই চমৎকার। আর সেই মিলন মেলায় কার যেতে ইচ্ছে না করে? আমি নিজেও জানিনা কতবার যে সেখানে গিয়েছি। যতবার যাই ততবারই মনটা স্নিগ্ধ সুষমায় ভরে উঠে।



টেনসির স্মোকি মাউন্টেন ঘিরেই ছোট একটা শহর গ্যাটলিনবার্গ (Gatlinburg)। পাহাড়ের পাদদেশে এরকম নজরকাড়া গোছানো শহরে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে আর ফল ব্রেকেতো আরো বেশি মানুষের আনাগোনা।পুরো শহরটা ঘিরেই পাহাড়ের উচু সীমানায় সব কেবিনগুলো অবস্থিত। আর সেসব কেবিনে দৈনন্দিন জীবনের জন্য যা যা লাগে তার সব ই আছে ব্যাবহার করার জন্য। আমরা শুধু খাবার গুলো রান্না তারপর ফ্রজেন করে আইসবক্সে নিয়েছিলাম। বাসা থেকে ১৭০ মাইল (২৭৩ কি:মি:) দূরে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টার জার্নি।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ২,০৮৫ ফুট উপরে ছিলো আমাদের কেবিন । রক্ত হিম হয়ে যাওয়ার মতোন আঁকাবাঁকা রাস্তা পেরিয়ে যখন কেবিনে আসলাম, বারান্দায় গিয়ে পরন্ত বিকেলের অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে কিছুক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। প্রকৃতি তার দু হাত বাড়িয়ে উজাড় করে দিয়েছে। সকল প্রশংসা সৃষ্টিকর্তার, আমাদের এরকম একটা অসাধারন মুহূর্তের সাক্ষী করার জন্য। শহর থেকে মাত্র দশ থেকে বারো মিনিট দূরেই ছিলো আমাদের কেবিনটা। সন্ধা ঘনিয়ে আসলে, বারান্দা থেকে দেখছিলাম সিটির লাইটগুলো জল জল করে জলছে। মনে হচ্ছিলো অচেনা সমুদ্রে, ভ্রান্ত নাবিকের খুঁজে পাওয়া লাইট হাউজ যা শুধুই আবছা দেখা যায় কিন্তু কত দূর তা বলা মুশকিল।
আরো পড়ুন ঝরা পাতায় জড়িয়ে থাকা ভালোবাসা






টেনিসির পাহাড়ি এই এলাকায় প্রচুর কালো ভাল্লুক এর বসবাস। মূলত এরা এখানকার কিং। এদের চলাফেরা ব্যাপার সেপার ই আলাদা। যে কোন সময় রাস্তায় চলে আসে। এদের জন্য খুব হাই সিকিউরিটি ট্রাশক্যান রাখা আছে প্রতিটি কেবিন এর সাথে। ট্রাশ ব্যাগ গুলা রেখে তারপর লক করে দিতে হয় যেনো খাবারের গন্ধে রাতের বেলা এরা এসে উচ্ছিষ্ট খাবার বের করতে না পারে। দুটা দিন ব্যাপক দৌড় ঝাপ করলাম এদের জন্য, কিন্তু ধারে কাছে আসার নাম নেই। তাই পরদিন সন্ধায় আমাদের কেবিনের বারান্দায় গ্রিল করলাম তাতে যদি গন্ধে ভাল্লুক চলে আসে। কোন লাভ হলোনা, এদের দেখা পাওয়া গেলোনা।
ঝরঝরা বাতাসে সকাল বেলার সূর্য স্নান করতে কার মন না চায়? তাই এক কাপ চা আর টোস্ট বিস্কুট নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম আমাদের বারান্দায়। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি। চারদিকে শুধুই পাখির কলরব। এর মাঝে ডাক পরলো নাস্তা রেডি। মেন্যুতে ছিলো আলু ভাজি, ডিম ভাজা আর পরোটা তার সাথে কড়া লিকারের দুধ চা। দুপুর বেলায় ঝুলন্ত ব্রীজ আর ঘুরাঘুরি তার পরদিন ট্রামে করে আরো উচুতে উঠে বেশকিছুক্ষন সময় কাটিয়ে রাত নটায় চলে এলাম আপন নীড়ে। দুরাত তিন দিনের এই ঝটিকা সফর বরাবরের মতোই আমাদের মনে দাগ কেটে রবে অনেক দিন।
পড়ুন রাসেল করিমের আরো লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।