যেদিন থেকে নিজের গন্ডি ছেড়ে দেশ বিদেশ ঘুরতে বের হয়েছি তখন থেকেই মনে ইচ্ছে ছিল জীবনে কখনো সামর্থ হলে অবশ্যই মালদ্বীপ বেড়াতে যাবো। আর অতি অবশ্যই ওয়াটার ভিলাতে থাকতে হবে। গভীর রাতে সমুদ্রের রূপ বীচের পাড় ছাড়া নিজের বিছানায় শুয়ে দেখা বা সেই অদ্ভুত সমুদ্র গর্জনের সাক্ষী হওয়ার ইচ্ছেটা মনে মনে লালন করেছি এই এতোটা দিন। এ বছরও মালদ্বীপ যাওয়া হবে এটা ভাবিনি। আবার যখন সময় বের করে টিকেট করা হলো তখন মনে মনে বেশ বিরক্ত ছিলাম, মায়ের কাছে বেশী সময় থাকা হবেনা তাই। তার ওপর হোটেলের বুকিং দিতে যেয়েও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলাম কোনটা কতদূর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না বলে। তার ওপর আমার খানিক পানিভীতি আছে বলে স্পিডবোটে যাবোনা এটাও মাথায় ছিল। অনেকগুলো ঘেটে শেষে ঠিক হয় হুরুভালি দ্বীপে। যেতে হবে সী প্লেনে। মালে শহর থেকে সময় লাগবে পয়তাল্লিশ মিনিট। আমার আগের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে কোন দ্বীপ শহর থেকে যত বেশী দূরে হয় সেখানকার পানির সৌন্দর্য তত বেশী হয়। শুধুমাত্র খুব বেশী মানুষ এক্সেস করতে পারেনা বলে। তবে পাঁচদিন একই হোটেলে শুধু পানির দিকে চেয়ে থাকার চেয়ে ঠিক হলো প্রথমদিন আমরা কোন দৌড়ঝাঁপে যাবোনা। সেদিন নেমে মালে থেকে যাবো। পরদিন সকালে হুরুভ্যালী। তারপর দুইদিন মালে শহরের কাছাকাছি কোন দ্বীপে থাকবো যাতে করে ফেরার পথে এয়ারপোর্ট পৌঁছানো নিয়ে কোন ঝামেলা না থাকে। কারণ কোন কারণে আবহাওয়া খারাপ থাকলে সী প্লেন ট্রান্সফার বন্ধ থাকে। মানুষজনের রিভিউ দেখে বুঝলাম মা ফুশি আইল্যান্ড মূল মালে শহরের কাছাকাছি। স্পিডবোট বা ফেরীতে সাকুল্যে চল্লিশ মিনিট লাগে। সেভাবেই তাই বুকিং দেয়া হলো।
আগের দিন নেপাল থেকে ফিরে শরীর বেশ ক্লান্ত বলে রাতে একবার বাচ্চাদের মায়ের বাসায় দেখে হোটেল চলে আসি। এখানে একটু বলে রাখি, ঢাকা শহরের মাত্রাতিরিক্ত জ্যাম এড়াতে এবার আমরা এয়ারপোর্ট আসা যাওয়া জনিত দিনগুলোর আগের রাতে কাছাকাছি একটা হোটেলে প্রতিবার স্টে করি। সেই হোটেলের বর্ণনা কখনো দিবো সময় সুযোগ হলে।


এ বছর সব দেশের সব ফ্লাইটগুলো ইচ্ছেমত তাদের সময়সূচী পরিবর্তন করেছে। আমরাও এর বাইরে পড়িনি। যার ফলে বেশ ভোরেই এয়ারপোর্ট যেতে হয়। লাউঞ্জে সকালের নাস্তা সেরে ফ্লাইটে উঠতে পারি সময়মত। এখানে একটা মজার ব্যাপার ছিল। আমার হাজব্যান্ডের ছোটবেলার বন্ধু শুধু বন্ধুর সাথে কিছু সময় কাটাবে বলে নিজের ফ্লাইট স্কেজ্যুল পাল্টে আমাদের ফ্লাইট চালানোর দায়িত্ব নেয়। নয়তো আর কোনভাবেই আমাদের সাথে দেখা করার সময় মেলাতে পারছিলনা। সেই সুবাদে আমার বর অনেকটা সময় ককপিটে কাটিয়ে আসে। আমি অবশ্য ঘুমিয়েই পার করে দেই লম্বা সময়। বিজনেস ক্লাসে সব দেশের প্লেনেই ভীষণ যত্ন করে। তবে বাংলাদেশের ফ্লাইটগুলো আপনাকে ভীষণ একটা বস বস টাইপ ভাব দেবে। ম্যাডাম একটু চা দেই? এখন একটু এটা দেই, ওটা দেই টাইপ আদর পাবেন। তার ওপর আমরা পাইলটের পরিচিতজন তাই খাতির আরো একটু বেশীই ছিল।
প্রায় চার ঘন্টা পেরিয়ে মালদ্বীপের এয়ারপোর্ট পৌঁছাই। আমাদের কেবল একটা চেকইন লাগেজ ছিল। এয়ারপোর্টে লাইনে দাঁড়ালাম আর বের হয়ে গেলাম। অনএরাইভ্যাল ভিসা বলে কেবল একটা ডিক্লারেশন ফর্ম আগের দিন ফিলাপ করতে হয়েছিল। কোন প্রশ্ন নেই, কোন তর্ক নেই, চোখের দিকে তাকালো, নাম জিজ্ঞাসা করলো পাসপোর্ট স্ট্যাম্পড। বাংলাদেশে ডমেস্টিক ফ্লাইটগুলোও এরচেয়ে বেশী সময় নেয়। মালদ্বীপ সে হিসেবে এতোটাই টুরিস্ট ফ্রেন্ডলি সিটি।
হোটেল থেকে নিতে এসেছিল। গাড়িতে করে পনেরো মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাই গন্তব্যে। তবে শহরে ঢুকেই গাড়ি থামিয়ে দিতে হয়। আমাদের হোটেলটা ছিল গ্রান্ড মসজিদের মূল দরজার পাশেই। জুমার নামাজের জন্য মসজিদের চারপাশ গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় শুক্রবারে। অল্প খানিক পথ হেঁটে হোটেলে ঢোকা পর্যন্ত খবর হয়ে যায়। ভীষণ রকম গরম আর হিউমিডিটির জন্য এইটুকু পথ হেঁটেই অবস্থা কাহিল হয়ে যায়।

বিকেলে হাঁটতে বের হয়ে এবার চমকানোর পালা। চারদিকে সবাই বাংলায় কথা বলে। মনে হচ্ছিলো একটু পরিস্কার বাংলাদেশের কোন শহরে আছি। এক জায়গায় থেমে পাশের দোকানে তাকাতেই দেখি বাংলাদেশী ব্যাংক। কি তামাশা! কোথা থেকে নির্ঝরের সাথে এক লোক জুটে গেলো যারা ট্যুর প্ল্যান করে কি কি একটিভিটিজ করা যায় সেসবের। সে জানালো মালদ্বীপে একটা বড় অংশের বাংলাদেশী লোক আছে কাজ করতে এখানে আসে। এয়ারপোর্টে যে লোকটা আমাদের পিক করতে এসেছিল সে ও বাংলাদেশী ছিল। সে বলেছিল সিমকার্ড শহর থেকে নিতে। কারণ আমরা কল করার চেয়ে ইন্টারনেট প্যাকেজ নিতে চাচ্ছিলাম যেটা এয়ারপোর্ট থেকে পাচ্ছিলামনা। যথারীতি বাঙ্গালী দোকানই মিলে গেলো। এখানে একটু বলে রাখি মালদ্বীপের নিজস্ব কারেন্সি মালদিভিয়ান রূপী হওয়া সত্ত্বেও ইউএস ডলারের দৌরাত্ম এখানে বেশী। আমরা নিজেরাও আমাদের ট্রাভেল কার্ড ইউএস ডলারে কনভার্ট করে নিয়ে এসেছি। তবু লোকাল কারেন্সি কিছু থাকুক তাই ডলারও ভাঙানো হলো।
শহরে কি আছে একটু ঘুরে দেখি ভেবে ফেরীঘাট পর্যন্ত আসতেই শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি। অন্য সময় হলে বৃষ্টিতে ভিজেই নেমে যেতাম রাস্তায়। কিন্তু এই বেলা ভেজা কাপড় কোথায় শুকাবো সেই চিন্তায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি ফেরীঘাটে। একটু বৃষ্টি ধরে এলে পরে এবার রাস্তায় নামা আবারও। এখানে একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে কিছু বাঙ্গালী আপনি বাংলাদেশী জানলে খুব আগ বাড়িয়ে গল্প করতে আসবে। আর কিছু এমন ভাব করবে যেন বাংলাদেশ বলে কোন ব্যাপার আছে তাই জানেনা। অনেক ভেবে এটার দুটো কারণ বের করেছি আমি। এক তাদের জব প্লেসের কোন রেস্ট্রিকশন আছে। দুই তারা এতো লম্বা সময় আছে এখানে যে নিজের দেশ বা দেশীয় মানুষ নিয়ে এতো মাথা ঘামানোর মতো আবেগ তারা কাটিয়ে এসেছে।
একটা দুটো পার্ক আর গ্রান্ড মসজিদ যেটা আমাদের হোটেলের লাগোয়া ছাড়া আর তেমন কিছু আসলে এই শহরে দেখার মতো পাইনি। তার ওপর শুক্রবার। সবই কম বেশী বন্ধ বলে আর বেশী ঘুরে না দেখে এক দোকানে সিঙ্গারা সমুচা , আরেক দোকানে এ যাবত কালের সবচেয়ে দামী ডাব (দশ ইউএস ডলার একটা) খেয়ে, দুই জোড়া বীচের স্যান্ডেল কিনে, রাতে কোথায় খাবো দেখে হোটেলের পথে পা বাড়াই। রাস্তাঘাট খুবই সহজ চেনা। বাইক চলে প্রচুর। বেশীরভাগ লোকে পায়ে হাঁটে বলে যানজট নেই তেমন।


ভারত মহাসাগর হোটেলের রুম থেকে দেখা যায়। তার ওপর আগামী কয়েকদিন তো পানির কাছেই থাকবো বলে বাইরের দিকে তেমন একটা দৃষ্টি আসলে দেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। তবু ধুমধাম চোখে বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যার আলো মেখে তীরে আছড়ে পড়া সমুদ্র ঢেউগুলো চোখের জন্য এক অন্যরকম আরামের কারণ হয়।
মালদ্বীপে লোকে মূলত বেড়াতে আসে আইল্যান্ড ট্রিপ করতে। তাই এক আইল্যান্ড থেকে আরেক আইল্যান্ডে কিভাবে যাবেন, কখন যাবেন সে ব্যবস্থা মূলত আপনি যে আইল্যান্ডে যাবেন তারা করে। আগের দিন রাতেই সময়সূচী এবং কোথা থেকে উঠতে হবে সব জানিয়ে দেয়া হয়। সাধারণভাবে যেদিকেই যান যাত্রা শুরু এয়ারপোর্ট থেকে। অর্থাৎ হোটেল থেকে আপনাকে এয়ারপোর্ট নামিয়ে দেবে। তা বোটই হোক আর সীপ্লেনই হোক। আমাদের আগের রাতে জানানো হয় আমাদের সী প্লেন ছাড়বে সকাল আটটায়। সাতটার মধ্যে আমাদের এয়ারপোর্ট থাকতে হবে। হোটেলের সাথে পেটচুক্তি সকালের নাস্তা করা থাকলেও এতো সকালে ওদের রেস্টুরেন্ট খুলবেনা বলে আমাদের প্যাকেটে করে নাস্তা দেয়া হয় রিসেপশনে বসে থাকা অবস্থায়।
এতো সকালে নাস্তা খাওয়ার অবস্থা ছিলনা বলে অল্প কিছু খেয়েই গাড়িতে উঠে যাই। এয়ারপোর্টে চেকইন শেষে আমাদের লাগেজ নিয়ে নেয়া হয়। এবার পালা ওদের লাউঞ্জে বসার। সী প্লেনের লাউঞ্জে ঢুকে থ বনে যাবার যোগাড়। এতো সুন্দর চারদিক, এতো ঝকঝকে তকতকে করে রাখা যে চেয়ারে না বসে ফ্লোরেই বসে থাকা যাবে যেন। একপাশে ক্যান্টিন মত যেখানে খাবারের অর্ডার করে খাবার নিয়ে ভেতরে বা বাইরের ব্যালকনী যে কোন জায়গায় বসতে পারবেন। সবাই এতো গুছিয়ে খাচ্ছিল যেন এতো চমৎকার জায়গায় ভুলেও একটু ময়লা না পড়ে যায়। খাওয়া শেষে বারান্দা থেকে বাইরে গিয়ে দেখি পানির ওপর সারিবদ্ধভাবে সী প্লেন গুলো দাঁড়ানো। আটটা বাজতেই আমাদের নির্ধারিত কক্ষে ডাক পড়লো।
এখানে একটু বলে রাখি মালদ্বীপের দ্বীপগুলোকে ওরা কয়েকটা ভাগে করে নাম দিয়েছে এটল। আমাদের অবস্থান ছিল রা এটল এর একটা আইল্যান্ডে। ঐ এটলের দ্বীপগুলোই মালে শহর থেকে সবচেয়ে দূরে।

সী প্লেনে আমরা ছাড়াও আরেকটা পরিবার ছিল। নিয়ম কানুন বলে কয়ে যাত্রা শুরু হলো। ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে দৌড়ে দৌড়ে এতো কিছু করার শেষে শরীর এতো ক্লান্ত ছিল যে চোখ দুটো প্লেন ছাড়তেই আপনাতেই যেন বন্ধ হয়ে গেলো। এক আধবার চোখ মেলে কেবল দেখেছি গাঢ় নীল সমুদ্র জলের মাঝে সবুজাভ নীলের প্রাচীর দেয়া একের এর এক ভেসে ওঠা দ্বীপের সমাহার। মিনিট চল্লিশেক বাদে দেখি প্লেনখানা ভীষণ দুলছে। দুলুনীতেই ঘুম ভেঙে দেখি মাঝসমুদ্রে প্লেন ল্যান্ড করে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর জানালো এসে গেছি। কিন্তু একি চারদিকে পানি ছাড়া কিছু নেই কেন?
প্লেন থেকে নেমে রীতিমত আতংক নিয়ে দাঁড়াই। পানির মধ্যে ভাসমান ল্য্যান্ডিং প্লেসটা যে ঢেউয়ের তালে ডিঙ্গি নৌকার মতো দুলছে। শক্ত করে রেইল ধরে দাঁড়াতেই শুনি, ওহ নো, ওহ নো। আমাদের সাথে আসা জনৈক ইজিপসিয়ান ভদ্রমহিলা দুলুনীর সাথে তাল রাখতে গিয়ে প্রপাতধরনীতল। সবার কথাবার্তার মধ্যেই উল্টোপাশে নোঙ্গর ফেলে আমাদের দ্বীপ পর্যন্ত নিতে যাওয়া স্পিডবোট।
সারা পৃথিবীর ইন্টারন্যাশনাল হোটেলগুলোর নিয়ম আছে দুপুর দুইটায় চেকইন। ব্যতিক্রম মালদ্বীপের এই হোটেলগুলো। যেহেতু হোটেলে ইন এন্ড আউটের কন্ট্রোল তাদের হাতে তাই অতিথি পৌঁছামাত্র তাদের রুম দিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে। যত দ্বীপের কাছাকাছি হয়েছি তত বেশী যেন মুগ্ধতা ঘিরে ধরেছে। কি অদ্ভুত সুন্দর চারদিক! এটা আমার চতুর্থবারের মতো কোন আইল্যান্ডে থাকার অভিজ্ঞতা। কিন্তু ইতিমধ্যেই আপনারা নিশ্চিত জানেন মালদ্বীপের এই আইল্যান্ডগুলোর পাঁচতারকা খ্যাতির কারণ এবং তাদের বাজার মূল্যমান। কাজেই এই দ্বীপের সাজসজ্জা অন্যরকম হবে এটা আমার খানিক ধারনায় থাকলেও তফাত কতটা হতে পারে সেই ধারনা ছিলনা মোটেও।
বিলাসবহুল ছুটি কাটানোর সব উপকরণ চারদিকে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে দ্বীপের। পৌঁছাতেই ঠান্ডা এক গ্লাস শরবত ধরিয়ে দিয়ে বললো, ‘সব কথা পড়ে হবে আগে যেয়ে সকালের নাস্তা খাও। লাস্ট কল দিচ্ছে। নাস্তা খেয়ে রিসেপশনে চলে এসো’ সেই সকালে তৃতীয়বারের মতো নাস্তা বলে অল্প একটু খেয়েই উঠে চলে আসি। একজন জানালো সে আমাদের দায়িত্বে থাকবে পুরোটা সময়। হোয়াটসএপে সাথে সাথেই টেক্সট করে জানিয়ে দিল কোথায় কি আছে, কখন কি করা হয়, কোথায় যোগাযোগ করতে হবে ইত্যাদি। বাগীতে করে পুরো দ্বীপ একবার ঘুরিয়ে নিয়ে গেলো আমাদের রুমে।
পহেলা দর্শনধারী তারপরে গুণবিচারী এই তত্ত্ব মেনে রুমে ঢুকে প্রথমেই মনে হয়েছে ইটস ওয়ার্থ টু স্পেন্ড দ্যাট মাচ মানি ফর দিস প্লেস। বাথরুমটা এতো বড় যে ঢুকলেই মন ভালো হয়ে যায়। তার ওপর বাথরুমের কাঁচের ফ্লোর দিয়েই দেখা যাচ্ছে নীচে ঝাঁকে ঝাঁকে রঙিন মাছের ঘুরে বেড়ানো। বাইরে ইনফিনিটি স্পা কাম পুল। আর নিজের বারান্দা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামলেই গভীর সমুদ্র। আকাশে এই মেঘ রৌদ্র ছায়ার আনাগোনা। এ যেন পৃথিবীর সীমানার বাইরের কোন জগত। সাথে সাথেই পুলে নেমে যাওয়া। চেন্নাইতে একটা ঘুর্নিঝড়ের সংকেত থাকাতে সমুদ্র বেশ উত্তাল ছিল বলে পানিতে আমি তখন তখনই নামিনি। লম্বা সময় পুলে থেকে শাওয়ার শেষে দেই ঘুম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি লাঞ্চের সময় পেরিয়ে গেছে অনেক আগে। পৃথিবীর যে প্রান্তে মাছ ধরা হোকনা কেন আমার বর মাছ ধরতে যাবেই। কাজেই বিকেলে একটু হাল্কা খাবার খেয়ে সন্ধ্যার আগে আগে চলে যাই মাছ ধরতে। বেচারার কপাল খারাপ। পুরো সময়ে মোট পাঁচটা বেবী শার্ক ধরা পড়েছে তার সুতায়। আকাশে মেঘ থাকায় সন্ধ্যাটা ঠিক সমুদ্রতটে অপরূপ অস্তগামী সূর্যাস্ত হয়নি। কিন্তু এক অদ্ভুত লালিমা ছড়িয়ে দিয়েছিল মেঘের ভাঁজে ভাঁজে। হোটেলে ফিরে আসি আটটা বাজতে। একটু ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবারের পালা। সীফুড প্ল্যাটার অর্ডার করি রাতের খাবারে। ওয়েস্টার্ন স্টাইলে বানানো সে খাবার খেয়ে মুখ কুঁচকে বলে ফেলি, ধ্যাত পয়সা খরচ করে এসব বিস্বাদ খাবার কোন মানে আছে? পেছন থেকে এক ওয়েটার বলে বসে, আপনারা বাঙালী?
– হুম।
আমি তো জানতামনা। কাল দুপুরে এইদিকের টেবিলেই বসবেন, বাঙালী খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে পারবো। শেফও বাংলাদেশী। গরু খাবেন না মুরগী খাবেন?
এই পর্যায়ে অনেকেই ভাবতে পারেন মালদ্বীপের দ্বীপে যেয়েও আপনাকে ভাত তরকারী খেতে হবে? সত্যি কথা হচ্ছে, ইয়ে মানে আমি সেই লেভেলের ভেতো বাঙ্গালী। মাছ কেন খাইনি সেটা পরে বলবো। পরদিন দুপুরের গল্পটুকুও এখানেই বলে রাখি। কেউ যদি আমার কাছে জানতে চায় এবারের ট্রিপে বেস্ট খাবার কোথায় ছিল? আমি জবাব দেবো পরদিন দুপুরে দেশী শেফের করে দেয়া গরুর মাংস ভুনা, ডাল, সালাদ আর ভাত।
যা বলছিলাম, সেদিনের মতো খাবার খেয়ে রাতে বীচে লম্বা সময় দোলনায় বসে থেকে ফিরে আসি নিজেদের রুমে। রাতে আকাশে আধভাঙা এক চাঁদ উঠে চারদিক এমন একটা নরম আলোয় ঢেকে দিয়েছিল যে মনে হয়েছিল গৃহত্যাগী জোছনার চেয়ে এই মরে যাওয়া জোছনার আলোর রূপের শক্তিও বুঝি কোন অংশে কম নয়।

কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে আমার দেশে ট্রিপ এবার কেমন হলো, আমার তখন বলতে হয়, আপনার হাতে সময় আছে? আমার নিদেনপক্ষে আধঘন্টা লাগবে আমার আইটেনারী বলতে। মিলডুরা থেকে মেলবোর্ন, ঢাকা, চিটাগাং, নেপাল শেষ করে মালদ্বীপ আসা। সে হিসেবে মালদ্বীপ যাওয়া পর্যন্ত আমরা ভ্রমনের দুই তৃতীয়াংশ ক্লান্ত। পরদিন ভীষণ গরম ছিল সাথে আমাদের শরীরের ক্লান্তির কারণে সারাদিন কেবল খাওয়া, পুল, ঘুম, খাওয়া, পুল, ঘুম এই করেই কেটেছে। মাঝে একটু টুকটাক দ্বীপের এদিক ওদিক ঘুরে আসা। রাতেই জানিয়ে দিয়েছিল পরদিন সকাল এগারোটা নাগাদ আমাদের সী প্লেন। ফিরতে হবে মালে এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে স্পিডবোটে করে মাফুশি আইল্যান্ড।
রাতেই ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিলাম। সকালে একবারে তৈরী হয়ে চলে যাই নাস্তা খেতে। তারপর পুরো দ্বীপে ঘুরে ঘুরে ছবি তোলা শেষে সী প্লেনের অপেক্ষা। ধবধবে সাদা বালি, স্বচ্ছ সবুজাভ নীল জল, পুরো দ্বীপের পাড় ধরে নারকেল বীথি আর সবুজের হাতছানি চোখ শরীর আর মনে যে শীতল পরশ দেয় তা একজীবনের স্মৃতি করে রাখার জন্য কতোটা যথেষ্ট জানিনা। তবে বলবো সুযোগ এবং সামর্থ থাকলে অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার এই অপরূপ রূপের স্বাদ নিতে যাবার চেষ্টা সবার থাকা উচিত।
ফিরে এলাম মালেতে। দুপুর তিনটার সময় স্পিডবোটের টাইম দেয়া তাই এয়ারপোর্টের আশেপাশে থেকে দূরে যাবার উপায় ছিলনা। ইচ্ছে ছিল ঘুরে আসার ওদের একটা সাবমেরিন রাইড আছে মালে শহরে সেটাতে। কিন্তু সময় না মেলাতে সে ইচ্ছে পূরণ করা যায়নি।
স্পিডবোটে মাফুশি আইল্যান্ড যেতে সময় লাগে চল্লিশ মিনিট মতো। এই বেলা আপনার মনে হবে আপনি বাংলাদেশে চলে এসেছেন। কারণ স্পিডবোটে কম করে হলেও দুই তিন পরিবার পাবেন বাংলাদেশী। সবাই উচ্চস্বরে বাংলায় কথা বলবে যেন দুইন্যায় আর কোন দেশী মানুষ নাই। আর মাফুশি আইল্যান্ডে পা দিয়ে প্রথম যে কথা মনে হবে, একি! কাকসোবাজার আইসা পড়লাম দেহি। দ্বীপটার সবকিছুই বাজেট। হোটেল বাজেট, প্যাকেজ বাজেট, খানাদানা বাজেট। যদিও কাগজে কলমে লেখা থ্রি টু ফোর স্টার হোটেল কিন্তু ঐ যে বললাম চিতকাইত বোর্ডিংয়ের চেয়ে একটু বেটার। এই আইল্যান্ডের একপাশে রয়েছে বিকিনি বীচ। অন্যপাশে আমজনতার বীচ। অর্থাৎ খোলামেলো পোশাকে বিকিনি বীচের বাইরে বের হওয়া নিষেধ। আর বাজেট ফ্রেন্ডলী হওয়াতে অনেক বেশী মানুষের আনাগোনা। তাই দ্বীপের সৌন্দর্য অনেকটাই ম্রিয়মান। সেদিনের মতো এদিক সেদিক ঘুরে আমি হোটেলেই থেকে যাই। নির্ঝর চলে যায় আবারও মাছ ধরতে।
আটটার মধ্যে চলে আসার কথা থাকলেও ফিরতে ফিরতে নির্ঝরের সময় লাগে রাত নয়টা। মাঝ সমুদ্র থেকে আমায় ফোন দিয়েছিল ওয়েদার খারাপ তাই নৌকা নোঙ্গর করে দাঁড়িয়ে আছে। ভাগ্যিস ওর সফরসঙ্গী হইনি। উত্তাল সমুদ্রকে আমি বড়ই ভয় পাই। মাঝসমুদ্র থেকে আমাকে মোবাইলে ভাইবারে কল দিয়েছে। ওদের ইন্টারনেট কতটা ভালো সেটা বোঝাতে এই কথা বলা। আমরা যে মিলডুরা থেকে মেলবোর্ন যেতে কতবার ফোনের কানেকশন হারাই সেই আলোচনায় আর না যাই।

রাতে খাবার খেয়েছি হোটেলেরই নিজস্ব রেস্টুরেন্টে। এবার বলি কেন মাছ খাইনি। এখানে মাছের আইটেম মানেই টুনা ফিশ নয়তো বাছা ফিলেট। মালদ্বীপ এসে এই মাছ খাবার কোন মানে আছে? তবু ওদের ভাতের স্বাদ নিতে একটা মাছ ভাতের আইটেম নিয়েছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে স্বাদ চেখে দেখার জন্য আমরা মোটামুটি সব আইটেম একটা করে অর্ডার দিয়েছিলাম। আমাদের অর্ডার নিয়েছিল যে ছেলে সে ছিল বাঙ্গালী। সে কেবল বারবার বলছিল, এতো খাবার আপনারা দুইজন খাবেন? অনেক টাকা বিল আসবে তো। তাকে কেমনে বলি খাবারের দাম যে স্ট্যান্ডার্ডের একবেলার মিলের এক তৃতীয়াংশ।
পরদিন ট্যুর প্ল্যান করা ছিল হোটেল থেকেই। সেখানে নিজেদের নাম লিখিয়ে চলে আসি রুমে।
গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে পরে বারান্দায় বের হয়ে আসি। আমাদের রুমটা ছিল আটতলায়। সারাদিনভর কোলাহলমুখর বিকিনি বীচ মানবশূন্য। শেষ রাতের এক ফালি চাঁদ কেবল প্রানপন চেষ্টায় চারদিক আলো করতে আকাশে ঝুলে আছে। মৃদু বাতাসে নারকেল গাছগুলো কি অদ্ভুতভাবে দুলছে আর সাথে থেকে থেকে সমুদ্র গর্জন। বাতাসে এক অদ্ভুত নির্জনতার গন্ধ!
মাফুশি আইল্যান্ডের আরেক নাম বিড়াল আইল্যান্ড দিলে মন্দ হবেনা। শিফটিং ডিউটির মতো একেক বেলায় একেক জনের চেহারা দেখা যায়। একটু আহ্লাদ করলে একেকজন ছুটে পারলে কোলে উঠে যায়।
সাড়ে সাতটার মধ্যে ট্রিপের জন্য নীচে রিসেপশনে হাজির হতে বলা হয়েছিল। কাজেই ভোর সকালে উঠেই নাস্তায় হাজির হয়ে যাই। এখানে একটু ট্রিপটা সম্পর্কে বলে রাখি। সকালে প্রথম নিয়ে যাবে স্টিং রে ফিড করাতে এক আইল্যান্ডে। সেখান থেকে স্নোরকেলিংয়ের জন্য নেয়া হবে শার্ক পয়েন্ট নামে এক জায়গায়। তারপর যাবে পানিতে ডুবে যাওয়া এক জাহাজ দেখাতে। ওটাও স্নোরকেলিং করে যাবার মতই। তারপর ভাটায় গজিয়ে ওঠা কোন এক চরে নোঙ্গর করবে। নামটা ভুলে গেছি। সেখানে দুপুরের খাওয়া, ড্রোন দিয়ে ফটোসেশন। তারপর ফিরিয়ে নিয়ে আসা। তিনটার মধ্যে ঘোরাঘুরি শেষ।


সব প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এবেলা বলে রাখি আমি কিন্তু পানিতে তেমন একটা নামিনি। কাজেই যা বর্ণনা দেবো তার বেশীর ভাগই থিওরী। শুরুতেই বলা হয় স্পিডবোট নাকি কি চ্যানেল পার হবে সেখানে সমুদ্র খানিক উত্তাল থাকবে, এ হুঁশিয়ারি দেয়ার পর তো মুখ আরো শুকিয়ে কাঠ। প্রায় চল্লিশ মিনিট ঝাঁকুনি শেষে অবশেষে এক আইল্যান্ডে এসে নৌকা ভেড়ানো হয়। বীচের খুব কাছেই ঝাঁকে ঝাঁকে স্টিং রে হাজির খাবারের খোঁজে। আমার ধারনা এরা খুব কাছাকাছিই থাকে। রোজদিন টুরিস্ট আসে, খাবার খাওয়ায়, খামোখা পরিশ্রম করবে কোন গাধায়? আইল্যান্ডটা আর বাদ বাকীগুলোর মতই। গভীরে নীল জল, পাড়ের কাছে সবুজ। ঝকঝকে রোদের আলোয় বীচের চারধার যেন ঝলমল করছিল। সবাই যেভাবে দৌড়ঝাঁপ করে ওদের খাওয়াচ্ছিল ওভার ডোজ না হয়ে যায় সেজন্য আমরা দূরে দাঁড়িয়ে মানুষের তামাশা দেখেই বেশী মজা পাচ্ছিলাম।
এবার আবার যাত্রা শুরু। গন্তব্য শার্ক পয়েন্ট। আমার সাঁতারু স্বামী সবার আগে পানিতে লাফিয়ে নামলো। ওপর থেকে আমি দেখলাম খুব অল্প সময়ের মধ্যে সে দ্রুত রিভার্স করে নৌকার দিকে ছুটতে শুরু করলো। আমি তো ভয় পেয়ে গেছি কোন সমস্যা হলো কিনা। জবাব এলো এই বিশাল সাইজের কয়েক জন শার্ক নাকি তার দিকে তাকিয়ে মুচকী হাসি দিয়েছিল। জায়গাটার সেফটি আসলে কতটুকু আমি নিজেও জানিনা। তবে যারা নিয়ে যায় তাদের ভাষ্যমতে এরা ট্রেইনড। মানুষ দেখে অভ্যস্ত। আমার কেবল মনে হয়েছে এই গভীর সমুদ্রে এসব মানুষ দেখে অভ্যস্তদের দলে যদি অন্যভস্ত কেউ ঘাপটি মেরে চলে আসে তাহলে তো সর্বনাশ।
আবার যাত্রা শুরু। এবার ভাঙা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখার পালা। অনেকদিন আগে এক শ্রীলংকার মাছ ধরার নৌকা হঠাৎ ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায় সিংহভাগ। তাকেই টেনে আরেকটু গভীরে নিয়ে আসা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। দীর্ঘদিন পানির নীচে থাকার দরুন এর পরতে পরতে জমেছে অসংখ্য কোরাল আর তার ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে রঙীন মাছের ঝাঁক। নিঃসন্দেহে অসম্ভব সুন্দর একটা ব্যাপার! কিন্তু পানিভীতিটা কাটাতে পারিনি বলে যাওয়া হলোনা। আফসোস নেই। কারণ এ জাতীয় কাজকারবার আগে বহুবার করে ফেলেছি।

এবারে শেষ গন্তব্য স্যান্ডি বীচ। মাঝসমুদ্রে ভূঁইফোড়ের মতো জেগে ওঠা দ্বীপ। জোয়ার এলেই পানির নীচে চলে যায়। এবার বিপদে পড়ে গেলাম। কারণ বোট থেমে যেতে হয়েছে অনেকটা দূরে। আর সেই দ্বীপে যেতে হলে কোমর সমান পানি পেরিয়েই যেতে হবে। সে এক তামাশাই বলা চলে! মাথার ওপরে বোঁচকা নিয়ে লাইন ধরে একে একে কোমর সমান পানি পেরিয়ে দ্বীপের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। সবার গা মাথা ভেজা। প্রখর দৃষ্টি পানিতে। কোরাল দিয়ে পা না কেটে যায়। দ্বীপে বসার সাথে সাথেই দুপুরের খাবার দিয়ে দেয়া হলো। ভাত, মিষ্টি মিষ্টি স্বাদের মুরগী, সালাদ। শেষ পাতে তরমুজ। খাওয়ার মাঝামাঝি সময়েই শুরু হলো বাতাস আর বৃষ্টি। পড়িমড়ি করে সব দৌড় আবার নৌকার দিকে।
তিনটা বাজার আগেই ফেরা হয়ে যায় দ্বীপে। যাত্রাপথে বাঙ্গালী পরিবারের সবার সাথে সবার বেশ একটা সখ্যতাও হয়ে যায়। দুপুরে আরাম করে খেতে পারিনি বলে রেস্টুরেন্ট খুঁজে খেতে বসলাম আবারও। বেশ ভালোই ছিল খাবারের স্বাদ। একটাই সমস্যা, মাফুশি আইল্যান্ডের বাইরে বসার সব রেস্টুরেন্টে ভীষণ মাছির দৌরাত্ম্য। রুমে ফিরে নির্ঝর আবারও মাছ ধরতে চলে গেলে এইবেলা আমি যাই শপিংয়ে। আগেই বলেছি মাফুশি হচ্ছে মডিফাইড কক্সবাজার। কাজেই অগুনতি দোকানপাট চারদিকে। অল্প কিছু স্যুভেনির কিনে রুমে ফিরতেই নীচ থেকে ফোন। নির্ঝর চলে এসেছে আগেভাগে এবং নীচে জ্যুসের দোকানে বসে নাকি কি এক অদ্ভুত জ্যুস খাচ্ছে। টক মিষ্টি স্বাদের লালচে সেই জ্যুস আগে কখনো খাইনি। এটা নাকি স্ক্রু পাইনের জ্যুস এই ফল আগে কখনোই দেখিনি। আবারও একটু দোকানে দোকানে ঘুরে ফিরে এলাম রুমে।
পরদিন দুপুরে আমাদের ফ্লাইট ছিল বিধায় সকাল দশটার স্পিডবোটে নামিয়ে দেয়া হয় মালেতে। এয়ারপোর্টে চেকআউটে সময় না লাগলেও চেকইনে বেশ লম্বা সময় লাগে। লাউঞ্জে গিয়ে খাবার শেষ করার সাথে সাথেই ডাক পড়ে ফ্লাইটের। ফ্লাইটে সময়মত উঠলাম। কিন্তু ফ্লাইট তো আর ছাড়েনা। এক প্যাসেঞ্জারকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। ঘন্টা পেরিয়ে সেই প্যাসেঞ্জার যখন প্লেনে ওঠে তখন উত্তেজিত জনতা ফেরার পথে গসিপ করার একটা গল্প পেয়ে যায়। সকালের ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে আসা একা একটা মেয়েকে ভিসা না দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে মালদ্বীপ ইমিগ্রেশন। এয়ার হোস্টেস জানালো অনএরাইভ্যাল ভিসা বলে এমন ঘটনা নাকি প্রায়শই ঘটে।
এবার একটু খরচপাতি সম্পর্কে বলি। আমি এখান থেকেই সব টিকেট, হোটেল বুকিং নিজে নিজেই দিয়েছিলাম। ইউএস বাংলার ফ্লাইটই কেবল সরাসরি মালদ্বীপ যায়। সময় লাগে প্রায় চার ঘন্টা। ইউএস বাংলার বিজনেস ক্লাস প্রাইসের তুলনায় আহামরি কিছুনা। তবে সারাক্ষন যত্নআত্তি করবে, লাউঞ্জ পাবেন, প্রায়োরিটি লাগেজ; এসব সুবিধার জন্য অবশ্যই দাম দিয়ে টিকেট করা ভালো। মালদ্বীপের অনেকগুলো আইল্যান্ডেরই ওয়াটার ভিলা অপশন আছে। ঐ আইল্যান্ডগুলো সবগুলোই ফাইভ স্টার রেটেড। সেরকম সার্ভিস পাবেন। সীপ্লেনের রিটার্ন ভাড়া পড়েছে জনপ্রতি সাড়ে পাঁচশো ইউএস ডলারের মতো। আমি হোটেলের এক্সাক্ট ভাড়াটা ভুলে গেছি। তবে প্রতি রাত হাজার ইউএস ডলারের ওপরে অবশ্যই। মাফুশিতে যে হোটেলে ছিলাম সেটার ভাড়া সে হিসেবে বেশ কম ছিল। ইউএস বাংলার একটা প্যাকেজ আছে চাররাত পাঁচদিনের সম্ভবত। জনপ্রতি খরচ বোধহয় ষাট বা সত্তর হাজার। ফ্যামিলি প্যাকেজ আছে। খোঁজ নিয়ে জেনে নেবেন। তবে ওদের পুরো ট্রিপটাই বাজেট ট্রিপ। প্লেনের ভাড়া আর থাকা সম্ভবত। বাকী সব খরচ নিজেদের যতদূর শুনেছি। তবে শোনা কথায় কান কম দিতে হয়। কাজেই নিজ দায়িত্বে বাকী খোঁজ নিয়ে নেবেন।
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্তমানে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে।
Post Views: 280