অন্যান্য স্টেটে দেওয়া হচ্ছে কিনা জানিনা, তবে কোভিডের কারনে সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় ট্যুরিজমে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে সরকার থেকে সবাইকে ৫০/১০০ ডলারের ফ্রী হোটেল ভাউচার বিতরন করা হচ্ছে। এমন একটি ভাউচার বাগিয়ে আমরা মাউন্ট গ্যাম্বিয়ারের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। জায়গাটা অনেক পপুলার। এমন একটা যায়গা যেখানে অনেক ‘থিংস টু ডু’ আছে। কোস্ট ঘেঁষে যদি যান তাহলে যাত্রা পথটাও অনেক সুন্দর। এতদিন গড়িমসি করে যাওয়া হয়নি। গিয়ে নিরাশ হতে হয়নি।

এ্যাডেলেইড থেকে প্রায় পাঁচ ঘন্টার ড্রাইভ। আমরা যাওয়ার দিন ঘুর পথে কুরং ন্যাশনাল পার্ক দিয়ে চালিয়ে গিয়েছিলাম তাই প্রায় পৌনে সাত ঘন্টার মত সময় লেগেছিল। বিকালে রওনা দিয়ে হোটেল মাউন্ট গাম্বিয়ায় পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে গেলো।

মাউন্ট গ্যাম্বিয়ারের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা বোধহয় ব্লু লেক। ছবি দেখে আগেই আন্দাজ করেছিলাম পানির রংটা খুব সুন্দর হবে। এই ঘন নীল পানির সৌন্দর্য দেখার অনুভুতি অন্যরকম। গভীর সাগরে গেলে হয়ত আপনি এমন নীল পানি দেখতে পারবেন, কিন্তু সেই অসীম পানিতে একটু হলেও স্রোত আছে। এই পানি একদম স্থির, সীমানা পরিবেষ্ঠিত। অন্যরকম একটা আকর্ষণ আছে এতে।

লেকের পাশ দিয়েই হাঁটার যায়গা আছে, তাছাড়াও বিভিন্ন উচ্চতায় কয়েকটা লুকআউট আছে। যেকোন একটায় বসে বা দাঁড়িয়ে এই স্থির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

যদি এক/দেড় ঘন্টা ড্রাইভের সময় থাকে তাহলে পাশেই আরেকটা শহরে কিছু কেভ দেখে আসতে পারেন। এই কেভ সিস্টেমগুলোর বৈশিষ্ট্য হল যুগে যুগে প্রাগৈতিহাসিক অনেক প্রাণী খাড়া গর্ত দিয়ে কেভের ভিতরে পড়ে গিয়েছে, তারা আর বের হতে পারেনি। সেইসব ফসিল এনালাইসিস করে অস্ট্রেলিয়ার মেগাফওনা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। তার কিছুটা আমরাও চাইলে দেখে আসতে পারি। ছোট্ট একটা ভিজিটর সেন্টার আছে, তাছাড়া আসল গুহাগুলোতেও টিকিট কেটে নামা যায়।

আরেকটি গর্তের মধ্যে পানি জমে একটি পুকুর হয়েছে, তার নাম রাখা হয়েছে লিটল ব্লু লেক। যদিও নামকরণের খুব একটা সার্থকতা খুঁজে পাইনি, পানির রঙ অনেকটা সবুজ। কিন্তু গরমের দিনে একটু সাঁতরানোর জন্য জায়গাটা খুব আইডিয়াল।

এই পানিতে নামতে পারমিটও লাগেনা। এই এলাকায় দুইটি পুকুর দেখতে গিয়েছিলাম। পুকুরগুলা উপর থেকে খুবই সাধারন, কিন্তু নিচের পানি লাইমস্টোনে ফিল্টার হয়ে একদম টলটলে স্বচ্ছ। পারমিট আর ওয়েট স্যুট থাকলে স্নোরকেল করা যায়। এই ট্রিপ আমি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হলাম, কিন্তু আশা আছে আরেকবার যদি যাওয়া হয়, প্রিপারেশন নিয়ে যাব ইন শা আল্লাহ।

মাউন্ট গ্যাম্বিয়ারের একদম শহরের মাঝেই একটা কেভ গার্ডেন আছে। যদি সিটিতে থাকেন, হেঁটেই যেতে পারবেন।

আরেকটি পরিচিত লোকেশন সিঙ্কহোল। লাইমস্টোন ক্ষয়ে ক্ষয়ে গর্ত হয়ে বেশ কয়েকটা সিঙ্কহোল তৈরী হয়েছে এই এলাকায়। তার একটিতে এরকম সুন্দর একটি বাগান করে দেওয়া আছে। পুরো এলাকাটা অনেক জায়গা নিয়ে সুন্দর করে বানানো, সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে বাগানের মাঝে কিছু সময় কাটাতে পারেন।

সাউথ অস্ট্রেলিয়ার রিজিওনাল শহরগুলাতে অনেক সাইলো আর্ট আছে। ফেরার দিন একটা মিনি টাউনে রাস্তার পাশে খুঁজে পেয়েছিলাম। ফেরার ট্রীপটা অনেক লম্বা লেগেছিল কিন্তু ওভার অল পুরা ট্রীপটা খুব ভাল ছিল।

খাওয়া দাওয়ার ব্যপারটা একটু আলাপ করা যায়। ছোট শহর কিন্তু খাবার অপশন অনেক। ফিরে যাবার দিন ডিনার করার করার জন্য কিংসটন নামের একটি যায়গায় থেমেছিলাম। সেখানকার ট্যুরিস্ট এট্র্যাকশন এই বিশালকায় লবস্টার। চাইলে এখানে একটু ব্রেক নিতে পারেন।