উঁচু ফ্ল্যাট বাড়ি কিংবা উঁচু ছাদওয়ালা তেমন কোন শপিং মল এই শহরে নেই বললেই চলে। প্রকৃতির নির্মল বাতাস আর পুরনো শহরের সৌন্দর্য অবগাহন করতেই বেরিয়ে পড়ি সকাল সাড়ে সাতটায়। উদ্দেশ্য ব্রুনি আইল্যান্ডে যাওয়া।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু করি। ফেরিতে কুড়ি মিনিটের পথ পেরিয়ে আমরা চলে যাই হানি বীতে। সেখানেই সকালের নাস্তায় পাউরুটি, জেলি, চিজ, কলা, ফলের জুস খেয়ে রওনা দেই কেপ ব্রুনি লাইট হাউজের পথে।
আকাঁবাকাঁ আর উঁচুনিচু পথে চলছি। চারপাশে প্রচুর লম্বা, খাটো গাছের সারি। কতগুলোতে নানা রকমের বনফুল। চলছি অগনিত বার পাহাড় গুনে। কখনো রাস্তার পাশ ঘেঁষে আছে নির্জন সমুদ্র। আকাশের রং বদলাতে থাকে আর আমরাও ভরসা পাই গনগনে রোদ দেখে। অন্তত আজকের বেড়ানোটা সার্থক হবে।
আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখতে দেখতে প্রায় দুইশো বছরের পুরনো লাইট হাঊজ এ হাজির হই। পাশের অসাধারণ সমুদ্র, যা ছবি তুলে বুঝানো সম্ভব নয়। সমুদ্রে যেন চলছে জলের নৃত্যে আর পাহাড়ের বুকে পাহাড়, মেঘ, কুয়াশা আগলে রেখেছে আকাশটাকে।
আরো পড়ুন ল্যাভেন্ডারের স্বর্গরাজ্যে একদিন
হে সুন্দর তোমাকে দেখা আমার কখনো শেষ না হোক এই ব্রত নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়ি ক্লাঊডি বে দেখতে। সেখানেও দেখি সমুদ্র লহর তুলে নাচছে। অগনিত ঢেউ আছড়ে পরছে পৃথিবীর বুকে। ক্লাঊডি বে তে শবনমের জুতা ভেসে যাওয়ার ঘটনা হয়তো কোনদিন ভুলবোনা। আমরা প্রচুর হইহই করতে করতে ঘুরছিলাম। ক্লাউডি বে এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পথের মার্জিন ধরে চলছি। মায়াবী পাহাড়ের গা থেকে কিছুটা গন্ধ নিয়ে চলছি এডভেঞ্চার বে তে।
এডভেঞ্চার বে তে এসে সত্যি সত্যি ভীষণ এডভেঞ্চার হলো। তখন সকাল টপকে মধ্যদুপুর। পেট সবার চো চো হাকডাক দিচ্ছিল। দুপুরের খাবারের আয়োজন ন্যাস্ত ছিলো নাজির ভাই এর উপর। আর উনি ভুল বশত কিংবা সকালের তাড়াহুড়ার কারণে দুপুরের খাদ্যপাতি আনতে ভুলে যায়। অগ্যতা কি আর করা! পাশেই একটা সুপার মল থেকে ব্রেড, ফিলার, পিয়াজ, টমেটো, লেটুসপাতা কিনে বার্গার বানানো হলো সেখানকার বারবিকিউ চুল্লিতে। তারপর হইচই করতে করতে খাওয়া।
আরো পড়ুন বে অফ ফায়ার – তাসমানিয়া
খাবার শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার সাগর পাড়ে ছুটা। এবার জলকেলি করতে হলো আমাদের। ছেলেরা সব ফুটবল খেলেছেন আর আমি, শবনম ও স্বপ্না সমুদ্র জলে পা ভেজালাম। এরমধ্যেই আমাদের যুবরাজ মিশরিও মোহাম্মদ কনকনে জলে ডুবে সমুদ্র স্নান সেরেছেন তার ফলাফল হিসেবে তিনি পায়ের পেশিতে টান খেয়ে বাড়ি ফেরা অবধি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিলেন। শেষ বিকেলের আলো তখনো ঝলমল করছিলো।
যাইহোক, এডভেঞ্চার এর পাঠ চুকেবুকে দিয়ে আমাদের ব্রুনি আইল্যান্ডের ডাবল নেকের চুড়ায় উঠার পালা। ব্রুনি আইল্যান্ডে দুই দিকে দুই জলের রং এর সমুদ্র। একদিকে নীলে আর অন্যপাশে সবুজ জলরাশি। প্রচন্ড ক্লান্ত আমি পাহাড়ের অর্ধেক উঠেই হাফসে গেলাম।পরাজয় মেনে নিয়ে কাঠের ব্রীজের দিকে নেমে এলাম। দেখি মেঘ তার পালক ছড়িয়ে দিয়েছে চারদিক। আমি সবুজ জলের সমুদ্রের কাছে নিজেকে শপে দিলাম। সমস্ত আকাশ যেন আমার , বাতাসের রিনরিন শব্দে মাতাল আমি আকাশে উড়ে চলা নাম না জানা পাখির উড়াঊড়ি দেখছি।
এবার ফেরার পালা। ব্রুনি আইল্যান্ড এর কানে ফিসফিসিয়ে বললাম, আবার আসবো ফিরে। আমরা সারাদিনের হইহুল্লোড় মেখে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছু স্মৃতি গেঁথে নিলাম শিরায় শিরায়। পা বাড়ালাম আমাদের হোবার্ট শহরে।
পড়ুন জান্নাতুল ফেরদৌস রুমার আরো লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।