সে এক সুসময়ের গল্প। সময়টা ছিলো করোনার বিরতিকাল। যখন মেলবোর্নের আকাশে বাতাসে করোনার বিস্তার কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়েছিল। যাচ্ছিলাম হাইওয়ে ধরে ইনভারলক বিচে। ঝকঝকে রোদ্র দেখে চট্ করে সিদ্ধান্ত নেয়া আর ধুম করেই চলে যাওয়া।

সূর্য তখন মাথার উপর। যেতে যেতে হঠাৎ মনে পড়লো এই গরমে তৃষ্ণা মিটানোর জন্য এক বোতল কোক কেনা দরকার। ম্যাপে দেখাল জায়গার নাম ওঁনথাগি আর কাছেই একটা স্টোর, যেখান থেকে কোক কেনা যাবে।

তো সেই উদ্দেশ্যেই যাচ্ছি। হঠাৎ ডান দিকে বাঁক নিতে যাব, চোখ আটকে গেল একটা দোকানে। কাঁচের ভিতর এ কি দেখলাম!!! চিৎকার দিয়ে ড্রাইভার হাজব্যান্ডকে বললাম ঘুরাও, গাড়ি ঘুরাও। বেচারা ভয়ে গাড়ি থামিয়ে দিল। তখন চোখ কচলে বড় করে দেখলাম। না ঠিকই দেখেছি। এ আমাদের প্রাণের রিকশা!

 

মারি স্ট্রিটের উপর (পেট্রোল পাম্পের পাশে প্রথম দোকানটাই) একটা অ্যান্টিক শপের দোকান। নানা দেশ থেকে বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং জিনিসপত্র, কালেকশনস দিয়ে সাজানো। সেখানে খুব সম্মান পাচ্ছে আমাদের বাংলাদেশের রিকশা। রিকশাটার গায়ে, ‘ইসলাম মিস্ত্রি’,  ‘মায়ের দোয়া’ ‘ঢাকা’, ‘বাংলাদেশ, ‘মা’এই লেখাগুলো দেখে কেমন যেন চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো!

দোকানের কর্মরত লোকজনকে খুব গর্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কোথা থেকে পেলে হে এই অমূল্য রতন? এ তো আমাদের সম্পত্তি। তাদের উত্তর ছিল কালেক্টেড। কত ভাবে তাকে বুঝালাম এইটা আমার দেশের, এটা এখানে দেখে আমরা চার জনের পরিবার সবাই খুবই খুবই আনন্দিত। কিন্তু দোকানী সে ভাবলেশহীনভাবে শুধুই বলল  ‘ও’!

সেই দোকানের সংলগ্ন এইটা ক্যাফে। যারা খাচ্ছিল তারা অবশ্য বেশ আগ্রহভরে আমাদের আবেগ আর ছবি তোলাতুলি উপভোগ করছিল। আর মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছিলো । যাই হোক, মনে মনে বললাম… ‘হাসতে দেখো কিন্তু বোঝ না কেন হাসি শেষের নীরবতা’… আর বললাম তোরা এর কি বুঝবি? রিকশাটা যে  আমাদের কাছে কত স্মৃতিময়, কত আবেগের!

কিছুতেই রিকশাটাকে ফেলে চলে আসতে ইচ্ছা করছিলো না। মনে হচ্ছিল রিকশাটাও যেন এতদিন পরে দেশের মানুষ পেয়ে আর একা থাকতে চাচ্ছে না। শেষটায় সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেলেছিলাম, রিকশাটাকে বাসায় নিয়ে যাবো।কিন্তু গাড়ির মালিকের নিষ্ঠুর মন কিছুতেই গলানো গেল না।

তাই, রিকশার খুব কাছে গিয়ে, কানে কানে বলে এসেছি, চিন্তা করোনা আমি তোমার গল্প সবাইকে বলব তারপর দেখবে একে একে সবাই আসবে তোমাকে দেখতে, তুমি আর একা থাকবে না।