সে অনেক অনেক দিন আগের কথা! জীবিকার সন্ধানে ভারত মহাসাগরের তীর ঘেঁষে মোম্বাসা নামক এক জায়গায় বসতি গড়ে পর্তুগীজরা। ১৪৯৩ সালে প্রথমবারের মত এ অন্চলে তাদের আগমন। তখন মোম্বাসা শহর আরবদের দখলে। আরবরা সেখানে জমিয়ে দাস ব্যবসা করতো। এর প্রায় একশ বছর পর আরবদের থেকে পর্তুগীজরা মোম্বাসার দখল নেয় এবং সামরিক দুর্গ হিসেবে ১৫৯৬ সালে এখানে গড়ে তোলে ‘ফোর্ট জিসাস’ (Fort Jesus)।
একজন মানুষের আদলে মূলত জিশু খ্রিষ্ট দু’হাত ছড়িয়ে তাঁর পিঠ দিয়ে শুয়ে আছে এরকম অবয়বে এ দুর্গের ডিজাইন করা হয়েছে বলে এর এমন নামকরণ হয়েছে বলে কথিত আছে। পর্তুগীজদের সময়ে এই দুর্গের ভেতর গোলা-বারুদের মজুত, সৈন্যদের থাকার জায়গা ইত্যাদি ছাড়াও, একটি গীর্জাও স্থাপন করা হয়। এর মাঝে দফায় দফায় যুদ্ধ চলতে থাকে। আরবরা বিশেষত ওমানীরা পর্তুগীজদের থেকে এ অন্চলের ক্ষমতা পুনরায় কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সফল হয়না। এরকম ১০০ বছর যুদ্ধের পর একপর্যায়ে ওমানীরা পুরো দুর্গটিকে বাইরে থেকে ঘেরাও করে ফেলতে সক্ষম হয়। এর মাঝে মহাসাগরের বুকে একবার পর্তুগীজ জাহাজ দেখা গেলে সেটিকেও কামান দিয়ে ডুবিয়ে ফেলে আরবরা।
প্রায় তিন বছর দুর্গের ভেতর পর্তুগীজদের আটকে রেখে পুরো বাহিনীকে নিঃশেষ করে ফেলে আরবরা আবার দুর্গের দখল নেয়। এসময় দুর্গের ভেতরের গীর্জাটিও তারা ভেঙে ফেলে। এরপর প্রায় আরো ১০০ বছর ধরে ওমানীরা সেখানে শাসন করে। এর মাঝে তারা ভারত থেকে, আরবের অন্যান্য দেশ থেকে আরো নানা জীবিকার মানুষকে এই অন্চলে কাজের জন্য নিয়ে আসে।
১৮০০ শতকের শেষ ভাগে আফ্রিকার বিভিন্ন অন্চল ইউরোপিয়ানরা দখলে নিতে শুরু করে। যেমন সোমালি ছিল ইতালীর দখলে, জিবুতিতে ছিল ফ্রেন্চ আধিপত্য, সোমালিল্যান্ডের দখল নিয়েছিল ব্রিটিশরা। অবস্থা বেগতিক বুঝে আরবরা আগেভাগেই ব্রিটিশদের এ অন্চলে আমন্ত্রণ জানায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
১৮৯৫ সালে পুরো কেনিয়া জুড়ে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়। কেনিয়ার নামকরণও ব্রিটিশদের হাত ধরেই হয়। মাউন্ট কেনিয়ার প্রাচীন নাম ছিল ‘ কিরিনইয়াগা’। ব্রিটিশরা উচ্চারণের সুবিধার্থে এর নামকরণ করে ‘কিনিয়া’ যা পরবর্তিতে কেনিয়া রূপ পায়। ব্রিটিশদের সাথে ওমানীদের কখনো যুদ্ধ করতে হয়নি। কিন্তু অনেক চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে যেমন ব্রিটিশরা এসেই এখানে দাস ব্যবসা বন্ধের ব্যাপারে আরবদের সাথে চুক্তি করে।এভাবেই ব্রিটিশ শাসনামলেও মোম্বাসাতে আরবদের আধিপত্য বজায় থাকে। ব্রিটিশ আমলে এই দুর্গ ব্যবহৃত হতো কারাগার হিসেবে। ব্রিটিশ আইনের বিরোধীদের জায়গা হতো এই দুর্গের ভেতর একসময় ব্যবহৃত অস্ত্র রাখার অন্ধকার কক্ষে। একপর্যায়ে ব্রিটিশরা স্বাধীন রাষ্ট্র কেনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এই দুর্গকে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে যায়।
১৯৬৩ সাল পরবর্তী সময়ে কেনিয়ার জাতীয় জাদুঘরের আওতায় এ দুর্গ সংরক্ষিত আছে। এখনো এ দুর্গের ভেতর প্রাচীন স্থাপনা ও নিদর্শন এবং ডুবিয়ে দেওয়া পর্তুগীজ জাহাজের থেকে উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র এর ভেতরে প্রদর্শিত হয়। ওমানের সুলতানের প্রাসাদও সংরক্ষিত রয়েছে এখানে। ২০১১ সালে ইউনেস্কো (UNESCO) ফোর্ট জিসাসকে বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
মাহজাবিন ফেরদৌসের আরো লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্তমানে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আপনি এ সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।