দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া ..
অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের একটি দ্বীপ ‘ফ্রেঞ্চ আইল্যান্ড’। পুরো দ্বীপটি একটি ন্যাশনাল পার্ক। এখান থেকে ঘুরে এসে বারবার এ কথাই মনে হয়েছে। ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের আয়োজনে সুযোগ হলো অজানা এই দ্বীপটাকে জানার, নৈসর্গিক পরিবেশে কিছু সময় কাটানোর। আমাদের মেলবোর্নে বাসা থেকে মাত্র ৩৫/৪০ মিনিটের ড্রাইভ, তারপর ফেরিতে ১৫ মিনিট। খুব কাছে হলেও যাবার সুযোগ কখনো হয়ে ওঠেনি।
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের বৃহত্তম দ্বীপ ফ্রেঞ্চ আইল্যান্ডের আয়তন ১৭০ বর্গ কিলোমিটার, লোকসংখ্যা মাত্র ১৩৯ জন। বিদুৎ, পানির জন্য মেইন গ্রিডের সাথে দ্বীপটির কোন সংযোগ নেই, চিকিৎসার জন্য কোন ডাক্তার বা হাসপাতালের ব্যবস্থা নেই। সুখবর হলো এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু পাওয়ার জন্য রয়েছে একটি জেনারেল স্টোর। স্বীকার করতেই হয় এই কৃত্রিম সুবিধাগুলো না থাকার কারণেই দ্বীপটি এখনো প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে ঐশ্বর্যশালিনী।
আরো পড়ুন ইরিনুন্দ্রা ন্যাশনাল পার্ক
বাসা থেকে ড্রাইভ করে আমরা সময়মতো পৌঁছে গেলাম স্টোনি পয়েন্ট (Stoney Point) জেটিতে। জেটি থেকেই ফেরিতে উঠতে হয়। ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের আয়োজনে এবং তত্ত্বাবধানে টিকিট থেকে শুরু করে সবকিছুই ছিল যাত্রার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু মনের গহীনে উঁকি দিচ্ছিল কিছু অসম্ভব চাওয়া। ফেরিতে উঠব কিন্তু জেটিতে নেই ঝালমুড়ি -চানাচুর, বাদাম, আমড়া-শশা নিয়ে ফেরিওয়ালাদের ভিড় অথবা ‘চা-গরম’ বলে ডেকে ওঠা সেই কন্ঠ!!
সকাল ১০.১৫ তে আমাদের ফেরি ছাড়ল আর সাগরের নীল স্বচ্ছ পানি আর ফেনিল ঢেউয়ে নেচে উঠল মন। গান গাইতে না পারলেও গুনগুন করতে করতে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম সবার সাথে। তারপর কিছুক্ষণ ঢেউয়ের সাথে মনে মনে কথা বলা।১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যস্থল ফ্রেঞ্চ আইল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক। জেটি থেকে কয়েক পা হাঁটতেই চোখে পরল স্বচ্ছ পানিতে নুড়ি -পাথরে রোদের আলোর লুকোচুরি খেলা। সবাই দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে দেখতে লাগলেন সেই লুকোচুরি খেলা।
আগেই বলেছি জায়গাটা অফ গ্রিড। এই দ্বীপে ২/১টার বেশি গাড়ি চোখে পড়লোনা । কাজেই ফেরি থেকে নামলেই কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হাঁটার পালা। ভেবেছিলাম জেনারেল স্টোর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার হাঁটা কঠিন কিছু না। কিন্তু বৃষ্টি ভেজা, কাদায় ভরা পিচ্ছিল রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পরে যাবার শংকা একটা চ্যালেন্জ নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার হাঁটার পর সবাই যখন ক্লান্ত, শ্রান্ত, ক্ষুধার্ত তখন দেখা পাওয়া গেল সবেধন নীলমনি সেই জেনারেল স্টোরের যেটা একই সাথে ক্যাফে আর পোস্ট অফিসের দায়িত্বও পালন করছে। এই নির্জন দ্বীপের ছোট্ট একটি দোকানে আলু, পেয়াঁজ থেকে শুরু করে ঘরে বানানো আচার, জেলী আবার দৈনিক পত্রিকাও পাওয়া যাচ্ছে। দোকানের বার্গার, আলু ভাজা আর কফি ছিল অসাধারণ যা আমার হাঁটার কষ্টটাকে ভুলে যেতে সাহায্য করল। এই জেনারেল স্টোরে সাইকেল ভাড়া করে দ্বীপে ঘোরার সুযোগও রয়েছে।
খাওয়া শেষে আরজু আপা আর বুলবুল ভাইয়ের নেতৃত্বে একদল বেরিয়ে পরলেন দ্বীপটাকে জানতে। আরেক দল বেরিয়ে পরল সাইকেল নিয়ে দ্বীপ ভ্রমণে। ফেরি ঘাট থেকে দ্বীপের সর্বোচ্চ পয়েন্ট ফেরি ঘর পিনাকলস লুকআউট যাওয়া আসা মিলিয়ে ১৫ কিলোমিটার হাটা পথ। সাদিকা আপা আর আমার মতো আরামপ্রিয় কয়েকজন বসে গেলাম রোদের নরম আলোয় আড্ডা দিতে।
ফিরে যেতে মন নাহি চায় কিন্তু বিকাল ৪টায় ফেরি। তাই সবাই ৩টার মধ্যে দ্বীপে ঘোরা শেষ করে চলে এলেন স্টোরে। ম্যানগ্রোভ, কোয়ালা, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের দেখা পেয়ে সবাই কিছু প্রাপ্তির আনন্দে আনন্দিত। তবে এইবেলা এবার আর হাঁটার কষ্ট নেই। স্টোরের মালিক অত্যন্ত আনন্দের সাথে তাদের গাড়িতে সবাইকে নামিয়ে দিলেন জেটিতে। তখনও কিছু সময় ছিল হাতে তাই তোলা হলো কিছু ছবি, স্মৃতি হিসেবে কিছু ঝিনুক (Seashell) কুড়িয়ে নিলাম।
অসাধারণ কিছু মূহুর্ত কাটিয়ে এলাম ফ্রেঞ্চ আইল্যান্ডে। মনে গোপন ইচ্ছে কোন এক পূর্ণিমাতে আবারও যাব ঐ দ্বীপে, গায়ে জোৎস্না মাখতে।।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এক দ্বীপে কিছু অসাধারণ সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য ঘুরুঞ্চিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পড়ুন মাহমুদা শায়লার আরো লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।