পুঠিয়ার রাজবাড়ি: সুপ্রাচীন স্থাপত্যের সুপ্রচুর সমাবেশ

‘চিহ্নমেলা’ শেষ হল ১৮ই অক্টোবর। তার পরদিনই এই মহাযজ্ঞের কাণ্ডারী অধ্যাপক শহীদ ইকবাল আমাদের জন্য একটা বাহনের ব্যবস্থা করে রাজশাহির আশপাশটা ঘুরিয়ে দেখানোর আয়োজন করলেন। আমরা মানে, কলকাতার বিখ্যাত লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরির প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্ত ও তাঁর সহধর্মিণী মীরা বৌদি, চিহ্নমেলায় সদ্যপুরস্কৃত লেখক হামিদ কায়সার ও তার পত্নী কানিজ ফাতেমা, এবং আমি ও মাহীয়া। সঙ্গে চলার পথের চলনদার হিসাবে ছিল শহীদেরই ঠিক করে দেওয়া তার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সদ্যস্নাতক সুমন আচার্য। ঠিক হল, জীবনানন্দের কবিতার নায়িকা বনলতা সেনের শহর নাটোর দেখতে যাব আমরা। তবে তার আগে নাটোর যাবার পথেই, রাজশাহি থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুঠিয়ার বিখ্যাত রাজবাড়ি অধ্যুষিত এলাকাটাও খানিক দেখে যাওয়া হবে বৈকি।

ইতিহাস বলে, পুঠিয়ার রাজাদের এই স্থানীয় সাম্রাজ্যের সূত্রপাত মোগল সম্রাট আকবরের আমলেই তাঁর সেনাপতি মানসিংয়ের বাংলা জয়ের পর থেকে। পরে নানা হাতবদল ও বংশপরম্পরায় সম্পত্তি ভাগ হয়ে অষ্টাদশ শতক নাগাদ এর সিংহভাগ অংশ জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণের হস্তগত হয়। মূলত তাঁর আমল থেকেই এই অঞ্চলে অসংখ্য মন্দির, দিঘি, রাজপ্রাসাদ ইত্যাদির নির্মাণ শুরু হয় যার সর্বশেষ স্থাপনা, ইন্দো-ইয়োরোপীয় স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন এই পুঠিয়ার রাজবাড়িটি। এটি নির্মিত হয় ১৮৯৫ সালে, মহারানি হেমন্তকুমারী কর্তৃক তাঁর শশ্রুমাতা মহারানি শরৎকুমারীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরূপ।

 

বর্তমানে এই রাজপ্রাসাদটিই মোটামুটি অক্ষতাবস্থায় টিকে আছে, যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি জাদুঘররূপে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবশ্য এর আশেপাশে ছোটবড় আরও প্রায় গোটা পনেরো স্থাপনা ও বেশ কয়েকটি বিশালায়তন দিঘি রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম শিবমন্দির, দোলমন্দির, গোবিন্দমন্দির, বড় আহ্নিক ও ছোট আহ্নিক মন্দির ইত্যাদি। আমরা বড় শিবমন্দিরটি দিয়েই আমাদের পুঠিয়া পর্যটন শুরু করলেও প্রধানত মূল রাজবাড়ি ও তার অভ্যন্তরের সংগ্রহশালাটিই সময় নিয়ে ঘুরে দেখি।অবশ্য একই অঙ্গনে অবস্থিত অপরূপ টেরাকোটা শিল্পকর্মে শোভিত দুটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা গোবিন্দমন্দির ও ছোট আহ্নিক মন্দির, লাগোয়া দিঘিতে রানির জন্য বিশেষভাবে নির্মিত স্নানের ঘাট, তাঁর অন্দরমহল, ঘোড়াশাল, বন্দিশালা ইত্যাদিও অল্পবিস্তর ঘুরে দেখা হয় বৈকি; সেইসঙ্গে ছবি তোলা হয় সুপ্রচুর। সেসবের মধ্য থেকে নির্বাচিত কয়টি ছবি রইল এখানে বন্ধুদের জন্য।