ইউরোপে অনেকগুলো ছোট দেশ রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি ছোট দেশ লুক্সেমবার্গ। আজ আপনাদের লুক্সেমবার্গ ভ্রমণের গল্প শোনাবো। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেকেই হয়তো এই দেশের নামই জানেন না। কিন্তু সুন্দর এই দেশটি দুর্গ, জাদুঘর আর ইতিহাসের সাক্ষী।

এই দেশের আয়তন দুই হাজার ৫৮৬ বর্গ কিলোমিটার মাত্র । সহজেই বুঝতে পারছেন কত ছোট এই দেশ। রাজধানীর নাম লুক্সেমবার্গ সিটি। লুক্সেমবার্গ জার্মানি, বেলজিয়াম আর ফ্রান্সের সীমানার সাথে যুক্ত। ওইসব দেশের কাছাকাছি হওয়াতে মানুষ মূলত তিন ভাষায় কথা বলে : জার্মান, ফ্রেঞ্চ আর লুক্সেমবুর্গিশ।

প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি লোকজন এখানে বসবাস করে। অর্ধেক জনসংখ্যাই অভিবাসী। কাজের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এখানে আসে। তাই এটি বহুমুখী সংস্কৃতির দেশ।ইউরোপের যেকোন দেশ থেকে সহজেই আপনি এই দেশে যেতে পারবেন। তাছাড়া বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস থেকে সহজেই বাস কিংবা ট্রেনে করে যেতে পারবেন। ব্রাসেলস এ হাঁটতে হাঁটতে আপনি দেখবেন লুক্সেমবার্গ এর একটা অংশে ঢুকে পড়েছেন। ইউরোপে ট্রেন ভ্রমণের মজাই আলাদা। সময়মত ট্রেন যাতায়াত করে এবং আগে থেকে পরিকল্পনা করে টিকেট কাটলে খুব সহজেই অল্প দামে টিকেট কাটা যায়।

ছোট হলে কি হবে, লুক্সেমবার্গ অনেক ধনী রাষ্ট্র। গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিনের তথ্য মতে, বিশ্বের তিন নম্বর ধনী দেশ হচ্ছে লুক্সেমবার্গ। বেকারের হার তেমন উল্লেখযোগ্য না। সামাজিক সুরক্ষা অভাবনীয়। এই ছোট দেশে ১৪০টির বেশি ব্যাংক রয়েছে। বলতে পারেন ইউরোপের অর্থনৈতিক রাজধানী এই দেশ। দেখতে অনেক সুন্দর ছোট, বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০ এর বেশি দুর্গ বা প্রাসাদ আছে এই দেশে। দুর্গের দেশও বলা হয়ে থাকে লুক্সেমবার্গকে। ঘুরে আসতে পারেন ত্রি টাওয়ার্স। দেখতে পারেন সেন্ট মাইকেল ও নটর ডেম চার্চ। জাতীয় জাদুঘর দেখে আসতে পারেন। উইলিয়াম স্কয়ারে এ প্রতি সপ্তাহে রাস্তায় বাজার বসে। সময়মত গেলে দেখে আসতে পারেন।

গ্রান্ড ঢুকাল প্যালেস হচ্ছে অপর একটি দর্শনীয় স্থান। এই প্যালেসের সামনে সিকিউরিটি গার্ডের সাথে গল্প জামানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ভদ্রলোক কোনও কথাই বললেন না। ছবি তোলার অনুমতি চাইলাম। কথা না বলে মাথা একটু নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন। রাজার ডিউটি বলে কথা!

বেড়াতে পারেন দ্য বক কাসেমেন্টস । এটি পাথরের তৈরি এক আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল যা কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বোমার হাত থেকে প্রায় ৩৫ হাজার লোকের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করা হয়েছিল।

অ্যাডলফ ব্রিজ (Adolphe Bridge) হচ্ছে শত বছরের পুরোনো পাথরের তৈরি এক চমৎকার ব্রিজ যার উপর দাঁড়িয়ে থেকে লুক্সেমবার্গের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে গোলাপি রংয়ের বাড়ি দেখতে ভালো লাগবে।
 

এই দেশকে ট্যাক্সের স্বর্গ দেশ বলা হয়। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ব্যবসা করলে আপনাকে অনেক ট্যাক্স বা কর দিতে হয়, কিন্তু লুক্সেমবার্গে ঠিক উল্টো। এজন্যই অনেক কোম্পানির সদর দপ্তর এই দেশে অবস্থিত। তাছাড়া আপনি চাইলে কোন অসাধারণ আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারেন। সরকার সেক্ষেত্রে আপনাকে ট্যাক্স নিয়ে তেমন ঝামেলাই ফেলবে না।

ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এ একটা প্রোগ্রামে ডাচেস অব লুক্সেমবার্গ মারিয়া তেরেসার দেখা মিলেছিল। আগে থেকে অনুমতি নিয়ে দেখে আসতে পারেন। ব্যাংক এর ভিতরের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় ছিল না।
 
আসলে দর্শনীয় স্থানগুলো কাছাকাছি হওয়াতে খুব সহজেই ১-২ দিনের মধ্যেই দেখে আসতে পারবেন। পায়ে হেঁটেই দেখতে পারবেন। দেখতে দেখতে শপিং মলে ঢুঁ দিয়ে কিছু কিনেও নিতে পারেন। তবে আমার বিশ্বাস সেখানে আপনার আবার বেড়াতে যেতে মন চাইবে।

 

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্তমানে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আপনি এ সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

 

ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের প্রায় ৭,০০০ ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।

আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।