যাইতেছিলাম ডিজনিল্যান্ড! আমার গায়ক কাম নায়ক কাম ডিরেকটর বন্ধু আরজীন পথ বাৎলে দিলেন। সে এক আড়াই ঘন্টার যাত্রা, ইতোমধ্যে আমি একটু ঘুমিয়েও নিয়েছিলাম। ঘুম ভেঙ্গে এক মেক্সিকান বুড়োর সাথে আলাপ, তিনি আমাকে ফিলিপিনো ভেবে ফিলিপিন্সের যাবতীয় তথ্য জিজ্ঞাসা শুরু করিলেন!
 
এ এক নতুন বিপদ শুরু হইয়াছে বিদেশবাসী হইবার পর থেকে! সেদিন মেলবোর্নে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি, প্রতিবেশি অজি ভদ্রলোক তাঁর ল্যাপটপ বগলদাবা করে এসে বলিলেন, আমি এই ইমেইলটা বুঝিতে পারছিনা, ফিলিপিনো ভাষায় লেখা মে বি। তুমি একটু বুঝিয়ে দিবে! আমি হা করিয়া তাকাইয়া বলিলাম: আমিতো বাংলাদেশী। ভদ্রলোক বলিলেন: ইটজ ওঁকে ইফ ইউ ডোন্ট ওয়ানা টেল বাট ডোন্ট লাই! আমি আরো বড় হা করিয়া বলিলাম: সত্যই আমি বাংলাদেশী! ভদ্রলোক যারপর নাই হতবাক হইয়া চলিয়া গেলেন। ভাবিতেছি ফিলিপিন্সের উপর লেখাপড়া শুরু করিয়া দিবো কিংবা নাগরিকত্ব আবেদন করিবো। অথবা পাসপোর্ট বগলদাবা করিয়া ঘুরিবো যাহাতে মরিয়া প্রমাণ না করিতে হয় আমি বাংলাদেশী!
 
যাই হোক, আমি বাংলাদেশি শুনিয়া মেক্সিকান বুড়োরও খুব আফসোস যে আমার চেহারার সাথে বাংলাদেশটা কোনভাবেই যাইতেছেনা আফসোসের ঠেলায় তিনি বাস থেকে নামিবার সময় এক বোতল পানি দিয়া দিলেন যেন ডিজনিল্যান্ড গিয়া লস এঞ্জেলস এর গরমে চক্কর খাইয়া পড়িয়া না যাই সো সুইট তো ডিজনিল্যান্ড নামিয়া আর কিছু চিনিনা, পাইলাম আরেক কোরিয়ান আপা। আপলোড করা ছবি তাঁহার সৌজন্যেই পাওয়া, কিন্তু তাঁহাকে ধন্যবাদ দিবার আগেই তিনি উধাও হইলেন প্রক্ষালন কক্ষে যাবেন বলিয়া । উধাও হইবার আগে অবশ্য আমিও উধাও হইব কিনা তা জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন এই বলিয়া যে: ইউ বাথরুম ওকে ! আমি না বুঝিয়া মাথা দুলিয়ে বলিলাম: ওকে! তিনি আবারো বলিলেন: ইউ ওয়েটিং, আই বাথরুম কামিং! তখন বুঝিলাম তিনি প্রক্ষালন কক্ষে যাইবেন।

এরপর লাইনে দাড়াঁইয়া দেখি কুরবানী ঈদের গাড়ীর য্যাম এর লাহান অবস্থা ! তাহার উপর আবার এক আমেরিকান তরুনী আসিয়া ফিসফিসিয়ে বলিলেন : ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড ইংলিশ ! মনে পড়িয়া গেল আইএলটিএস স্পীকিংয়ে ৭ পাইয়াছিলাম, সো বলিলাম: ইয়েস আই ডু! তিনি বলিলেন: আই উইল গিভ ইউ টুয়েন্টি বাকস ইফ ইউ প্রিটেন্ট দ্যাট ইউ নো মি, সো দ্যাট আই ক্যান এনজয় দ্যা রাইড আর্লিয়ার ! আমি ভাবিলাম হায় হায়, মহিলা কয় কি! দুর্নীতি থামানকারীর বউরে ঘুষ দিতে চায়! অবশেষে টিআইবিতে কর্মরত হাবি মোহাম্মদ হোসেনের চেহারাখানা ভাবিয়া বলিলাম: সরি। 

রোলার কোষ্টারে আমার চিৎকার উদযাপন করিতে সামনের সিটে বসা পিতা ও তার ৭ বছর বয়সী কন্যা বার বার পিছনে তাকাইতেছেন যেন আমিও রাইডের অংশ! ডিজনিল্যান্ড ঘুরিয়া মনে হইল বাচ্চা ছাড়া বাচ্চাদের আনন্দ করিবার স্থানে আসিয়া পড়িয়াছি। মনস্থির করিলাম বাচ্চা হইলে একবার লইয়া আসিতে হইবে নিশ্চয়ই!

তারপর ইতিউতি ঘুরিয়া, এক-আধখানা রাইডে চড়িয়া আর তিনখানা ছবি ও ভিডিও করিয়া আইফোনের ব্যাটারী খতম করিলাম। বাড়ী ফিরিবার পথে মনে পড়িয়া গেল আমার গায়ক কাম নায়ক কাম ডিরেকটর বন্ধু আরজীন ফোন করিতে বলিয়াছিলেন কারণ আমার ফিরিতে রাত হইবে এবং আমাকে “ব্ল্যাক” ছিনতাইকারী ধরিবে!

ছিনতাইকারী ধরিবে তাতে আমি যতটা না ভীত ছিলাম তার চেয়ে বেশি ভীত ছিলাম যে আমি ফোন না করিলে আমার গায়ক কাম নায়ক কাম ডিরেকটর বন্ধু আরজীন কি জানি কি সিনেমা বানায়ে ফেলবে !

আমি সত্যই ভাল জ্যোতিষি, আমার গায়ক কাম নায়ক কাম ডিরেকটর বন্ধু আরজীন আমার খোঁজে ডিজনিল্যান্ডের আড়াই ঘন্টা যাত্রার দেড় ঘন্টা পাড়ি দিয়া দিয়েছিলেন! শুধুমাত্র পুলিশ আর বাংলাদেশে মোহাম্মদ হোসেনকে খবর দেয়া বাকি। ইতিমধ্যে আমি বাসায় ফিরিয়া আরজীনকে তাহার বন্ধুর নম্বর হইতে ফোন করায় সিনেমার ক্লাইমেক্সখানা পানসে হইয়া গিয়াছিল আর কি!

পুনশ্চ: আরজীন ১০ বছর হল LA তে থাকেন, গায়ক হিসেবে এখন অনেক সুনাম তার। আমি NC তে একটা কনফারেন্সে যাওয়ার সময় ওর ওখানে গিয়েছিলাম।