পদ্মাসেতু পার হব অথচ বাঙালির সাহিত্যতীর্থ কবি জসীম উদদীনের বাড়ি দেখতে যাব না, তা কী করে হয়! খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফরিদপুর শহরের উপান্তে অম্বিকাপুর অঞ্চলে গোবিন্দপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের তীরেই কবির জন্ম, শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিধন্য বাড়িটি পারিবারিক উদ্যোগে সংরক্ষিত আছে। ভাঙায় রাত কাটিয়ে আমরা তাই পরদিন সকালে একটি মাইক্রো করে দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আমাদের আরাধ্য কবিগৃহের সন্ধানে। জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ হওয়ার সুবাদে সেটি খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আমাদের। রাস্তার বাঁদিকে ক্ষীণকায় কুমার নদী, আর ডানদিকে কবিতীর্থ, যার ঠিক প্রবেশপথের পাশেই অবস্থিত পারিবারিক কবরস্থানে কবিবর্ণিত সেই ডালিম গাছের তলে শায়িত কবি ও তাঁর পরিবারের আরও অনেকে।
টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকতেই চারদিকের স্নিগ্ধ সবুজ নৈসর্গিক পরিবেশ, সুনসান নীরবতা, পরিচ্ছন্ন নিকোনো আঙিনা, সুসজ্জিত গ্রামীণ কুটিরসমুদয় আর তাদের মাঝখানে ছড়ানো জসীম উদদীনের জীবন ও সাহিত্যের বিবিধ ঐশ্বর্যের সৌরভে দেহমন জুড়িয়ে গেল। বেশ অনেকটা জায়গা নিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে এই কবিনিকেতনখানি, যেখানে তাঁর জন্মভিটা, পড়ার ঘর, পিতৃগৃহ, অগ্রজের ভিটা, মায়ের রান্নাঘর, ঢেঁকিঘর এমনকি কবির বাসরঘরটি পর্যন্ত সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি ঘর রয়েছে যেগুলো কবির বিভিন্ন গ্রন্থ এবং কবিজীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে উপজীব্য করে সাজানো। পুরো আঙিনা জুড়েই রয়েছে কবির রচনাবলি থেকে অজস্র, অকৃপণ চিত্র ও উদ্ধৃতির দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে, সুন্দর ও স্মৃতিময়, সত্যিকার বাঙালি সংস্কৃতির সুঘ্রাণমাখা একটি শিল্পিত পরিসর, যা আমাদেরকে গ্রামবাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়।