মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে উৎসাহিত করা ও প্রকৃতি ভিত্তিক ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলাই ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের উদ্দেশ্য। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে নিয়মিত প্রকৃতি ভিত্তিক ভ্রমণ আয়োজন করে আসছে যা বাংলাভাষী প্রবাসীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সে ধারাবাহিকতায় এবারে (রবিবার ৩ ফেব্রুয়ারী , ২০২৪) ঘোরাঘুরির আয়োজন ছিল ব্রিসবেন রেঞ্জ ন্যাশনাল পার্কের গ্রাস ট্রি ট্রেইলে ১৪ কিলোমিটার বুশওয়াক হাইক। এবারের আয়োজনের অন্যতম উদ্দেশ্যে সবাই মিলে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো এবং গ্রাস ট্রি বা জ্যান্থোরিয়ার (Xanthorrhoea australis) সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। এই আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন সেজুতি, আজাহার, আরজু, নোমান এবং সালাহউদ্দিন। যদিও প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নানা ব্যাস্ততায় আরো কয়েকটি পরিবার শেষ পর্যন্ত যুক্ত হতে পারেননি।
জ্যান্থোরিয়ার বা গ্রাস ট্রি অস্ট্রেলিয়ার অনন্য একটি অস্ট্রেলিয়ান উদ্ভিদ। আদিবাসী ভাষায় একে বলা হয় বুক্কুপ (bukkup), ব্যাগআপ (baggup) বা কাউই (kawee)। গ্রাস ট্রি সাধারণত নিম্ন মানের মাটিতে অর্থাৎ যে মাটিতে পুষ্টিগুণ কম সে রকম জায়গায় জন্মে। অন্নান্য সকল অস্ট্রেলিয়ান গাছের মতোই এই গাছ ফসফরাস অসহিষ্ণু। এই গাছের কাণ্ড কয়েক মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং প্রায়শই শাখাযুক্ত হয়। এই গাছ খুব ধীর গতিতে বাড়ে, অনুকূল পরিবেশে বছরে সর্বোচ্চ ২.৫ সেন্টিমিটার বা ১ ইঞ্চির মতো বাড়তে পারে। কাজেই একজন মানুষের সমান উচ্চতার গাছের বয়স ৬০-১০০ বছর হতে পারে। প্রথম ফুল হতেও অনেক বছর সময় নেয়। যদিও প্রতিবছর ফুল ফোটে না, তবে বুশফায়ারের পরে প্রচুর পরিমাণে ফুল ফোটে। ফুলগুলি বর্শার মতো প্রায় ২ মিটার লম্বা হয় হয়। ভিক্টোরিয়ায় সাধারণত শীতের শেষে (অগাস্ট -ডিসেম্বর) মাসে ফুল ফোটে।
গ্রাস ট্রির ফুল এবং কচি বীজ খাদ্য উপযোগী।তবে বীজ পেকে গেলে রোস্ট করে খেতে হয়। এছাড়া বীজ থেকে আটা বানানো যায়। কচি পাতার গোড়ার অংশ খাওয়া যায়। আগ্রহীরা এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।

আরো পড়ুন কোসিয়াসকো বিজয়

খুব সকালে মেলবোর্ন থেকে রওনা হয়ে সকাল ৮টায় আমরা পৌঁছে গেলাম ব্রিসবেন রেঞ্জ ন্যাশনাল পার্কের বোর গালি (Boar Gully) ক্যাম্পগ্রাউন্ড। মেলবোর্ন থেকে খুব সহজেই এখানে আসা যায়। এই ন্যাশনাল পার্ক বসন্তে ফুলে ফুলে চারদিক ভরে গিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে। বোর গালি ক্যাম্পগ্রাউন্ড হলো একটা ট্রেইলহেড অর্থাৎ ট্রেইলের শুরু অথবা শেষ। এখান থেকে ৩ দিনের বুরচেল (Burchell) ট্রেইল হাইক করা যায় ।
ক্যাম্পগ্রাউন্ডে ক্যাম্পিং করার উপযুক্ত ছয়টি ক্যাম্পসাইট রয়েছে। প্রতিটি সাইটে সর্বোচ্চ ছয়জন লোক থাকতে পারেন। ক্যাম্পগ্রাউন্ড জুড়ে ফায়ারপ্লেস, পিকনিক টেবিল এবং টয়লেট সুবিধা রয়েছে। পার্ক ভিক্টোরিয়ার ওয়েবসাইট থেকে ক্যাম্পসাইট আগে থেকেই বুকিং করতে হয়। আমরা পৌঁছে দেখলাম কয়েকটি পরিবার ক্যাম্পিং করছে। আমরা ক্যাম্প গ্রাউন্ডের পাশের কার পার্কে গাড়ি পার্ক করলাম। এখানে ফোনের নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল। কাজেই এখানে আসলে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে। সাথে অফলাইন ম্যাপ (যেমন এভেন্জা ম্যাপ) নিয়ে আসা উচিৎ হবে। ঘুরুঞ্চির এই আর্টিকলে এভেন্জা ম্যাপ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


এই বুশওয়াক হাইকে আমরা ১৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবো এমনটি ঠিক করা হয়েছিল। এই ট্রেইলটি ছিল অস্ট্রেলিয়ান ওয়াকিং ট্র্যাক গ্রেডিং সিস্টেম গ্রেড ৩। ওয়াকিং ট্র্যাক গ্রেডিং সিস্টেম বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ঘুরুঞ্চির এই আর্টিকেল পড়ে দেখতে পারেন।
- মোট দূরত্ব: ১৩,৮৪৭ মিটার
- সর্বোচ্চ উচ্চতা: ৪৪১ মিটার
- সর্বনিম্ন উচ্চতা: ৩১৯ মিটার








বুশওয়াক হাইকে অনেক মরা গ্রাস ট্রি দেখা গেলো। ফাইটোফথোরা সিনামোমি (Phytophthora cinnamomi) যা দারুচিনি ছত্রাক নামে পরিচিত এক ধরণের মাটি-বাহিত ছত্রাক (Mould)। এই ছত্রাকটি গ্রাস ট্রিতে সংক্রমিত হলে “ডাইব্যাক” অথবা “রুট রট” অর্থ গাছটি মরে যায় অথবা শিকড় পচে যায়। একবার সংক্রামিত মাটি বা পানি একটা বনের পরিবেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই জীবাণু বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক প্রজাতির একটি এবং বিশ্বের ৭০ টিরও বেশি দেশে উপস্থিত রয়েছে। এখানে আসার আগে জুতা পরিষ্কার করে আসা উচিত এবং ট্রাকের বাইরে না যাওয়া উচিৎ। এতে সংক্রামণের সম্ভাবনা কমে যাবে।

পরবর্তি সময়ে ব্রিসবেন রেঞ্জ ন্যাশনাল পার্কে যেতে আগ্রহীরা পার্কস ভিক্টোরিয়ার এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
আমাদের পরবর্তী বুশওয়াক এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে আর যাচ্ছি – ফোর ব্রাদার্স রক (Four Brothers Rocks)। ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের আয়োজনে এই “ফ্রি ইভেন্টে” যে কেউ যোগ দিতে পারবেন। আমাদের পরবর্তী ইভেন্টগুলো সম্পর্কে জানতে ঘুরুঞ্চির ফেইসবুক গ্রুপের ইভেন্ট পেজে চোখ রাখুন। সফল পরিকল্পনার এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সবাইকে বুকিং করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। আমাদের ইভেন্টে পেজে “going” দিন।
ফোর ব্রাদার্স রক ইভেন্টি রমজান মাসের শেষ সপ্তাহে। রোজা রেখেও (যাদের জন্য প্রযোজ্য) যারা ৭ কিলোমিটার পথ যেতে পারবেন ইভেন্টটি কেবল তাদের জন্যই।
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।