Upper Yarra Reservoir Park Ghurunchi Magazine Bangladesh Australia

মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে উৎসাহিত করা ও প্রকৃতি ভিত্তিক ভ্রমণে আগ্রহী করে তোলাই ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের উদ্দেশ্য। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে নিয়মিত প্রকৃতি ভিত্তিক ভ্রমণ আয়োজন করে আসছে যা বাংলাভাষী প্রবাসীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। সে ধারাবাহিকতায় এবারে (রবিবার ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) ঘোরাঘুরির আয়োজন ছিল ইয়ারা রেঞ্জ (Yarra Ranges) ন্যাশনাল পার্কের ধার ঘেঁষা আপার ইয়ারা রিসার্ভারে (Upper Yarra Reservoir)। উদ্দেশ্যে সবাই মিলে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানো এবং ছেলে মেয়েদের ড্যাম ইঞ্জিনিয়ারিং, পানি সরবরাহ ব্যাবস্থাপনা এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শেখার একটি দুর্দান্ত সুযোগ করে দেয়া। এই আয়োজনে যোগ দিয়েছিলেন মেলবোর্নের বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কয়েকটি পরিবার। যদিও প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নানা ব্যাস্ততায় আরো কয়েকটি পরিবার শেষ পর্যন্ত যুক্ত হতে পারেননি।

পড়ুন বাও বাও ন্যাশনাল পার্কে ঘোরাঘুরি 

আপার ইয়ারা রিসার্ভার:

আপার ইয়ারা রিসার্ভার মেলবোর্নের পূর্বদিকের ছোট শহর ওয়ারবার্টনের বাইরে রিফটন (Rifton) এলাকার মধ্যে অবস্থিত। আপার ইয়ারা রিসার্ভার ভিক্টোরিয়ার সবচে বড় রিসার্ভার থমসনের (Thomson) সাথে পাইপ দিয়ে সংযুক্ত। আপার ইয়ারা রিসার্ভার থেকে সিলভান (Silvan) এবং কার্ডিনিয়া (Cardinia) রিসার্ভারে পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়। মূলত এই পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক দিয়েই মেলবোর্নের বেশিরভাগ সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়। মেলবোর্নের পানি ব্যাবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে মেলবোর্ন ওয়াটার।

আপার ইয়ারা রিসার্ভার নির্মাণ ইতিহাস:

১৯২৮ সালে আপার ইয়ারা অঞ্চলকে স্থায়ীভাবে পানি সরবরাহের জন্য নির্বাচন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৪০ সালে আপার ইয়ারা জলাধার নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪৮ সালের পর এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।  ১৯৫৭ সালে যখন এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় তখন মেলবোর্নের পানি ধারণ ক্ষমতা তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছিলো। যদিও এই রিসার্ভার নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ইয়ারা নদীর পানি উপচে মেলবোর্নে যে বন্যা হতো সেটা নিয়ন্ত্রণে আনা।

ঐতিহ্যবাহী অভিভাবক:

উরুন্ডজেরি (Wurundjeri) আদিবাসী জনগণ আপার ইয়ারা রিসার্ভার এবং তার আসে পাশের এলাকার জমির ঐতিহ্যবাহী অভিভাবক। আমাদের সকলের উচিত হবে ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টে তাদের চলমান ভূমিকাকে স্বীকৃতি এবং সন্মান দেয়া।

পানি সরবরাহের পাইপলাইনের এই ম্যাপটির জন্য ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিন মেলবোর্ন ওয়াটারের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে।

আপার ইয়ারা রিসার্ভার সম্পর্কে গুরুত্ত্বপূর্ণ তথ্য:

  • ক্যাচমেন্ট এলাকা: ৩৫০ বর্গকিলোমিটার
  • পৃষ্ঠ এলাকা: ৭.৫ বর্গকিলোমিটার
  • মোট ক্ষমতা: ২০০,০০০ মেগালিটার
  • বাঁধের উচ্চতা: ৯০ মিটার
  • বাঁধের দৈর্ঘ্য: ৬১০ মিটার

ইয়ারা রেঞ্জ ন্যাশনাল পার্ক:

ইয়ারা রেঞ্জ ন্যাশনাল পার্কের অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার সেন্ট্রাল হাইল্যান্ডে, মেলবোর্ন থেকে প্রায় ১০০ কিমি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। সেন্ট্রাল হাইলান্ড হলো মেলবোর্নের সুপেয় পানির মূল উৎস এবং বিশ্বের সবচে লম্বা ফুলের গাছ ভিক্টোরিয়ার মাউন্টেন অ্যাশের (Eucalyptus regnans) নিবাস। প্রায় ৭৬০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই বনভুমিকে ১৯৯৫ সালে ন্যাশনাল পার্ক তালিকাভুক্ত করে সংরক্ষণের আওতায় আনা হয়। শুধু তাই নয় এই ন্যাশনাল পার্কেকে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার (IUCN) – ক্যাটাগরি ২ হিসেবে তালিকায় আনা হয়েছে। ক্যাটাগরি ২ হওয়ার প্রাথমিক অর্থ হলো পার্কটি প্রাথমিকভাবে বাস্তুতন্ত্র (ecosystem) সংরক্ষণ কাজে ব্যবহার হবে।

মেলবোর্নের বিশুদ্ধ পানির গুনগত মান:

মেলবোর্নের পানি পান করলে আপনার মনে হবে – “সেই স্বাদ, এত স্বাদ ক্যা”। এর পেছনে রয়েছে চারটি প্রধান কারণ:

  • মেলবোর্ন বিশ্বের মাত্র দুটি শহরের মধ্যে একটি যেখানে খাবার পানি প্রধানত সংরক্ষিত ক্যাচমেন্টে থেকে আসে। এখানে পানিকে শুধুমাত্র জীবাণুমুক্ত করা হয়। ইয়ারা রেঞ্জ ন্যাশনাল পার্কের বনভূমি প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসাবে কাজ করে। বৃষ্টির পানি মাটি চুয়ে ভূগর্ভে প্রবেশ করে এখানে মাটি ফিল্টাবের মতো কাজ করে এবং স্পঞ্জের মতো পানি ধরে রাখে। পরবর্তীতে এই পানি ধীরে চুয়ে খাঁড়িতে প্রবেশ করে (creek) এবং নদীতে চলে যায়। ওয়াটার ক্যাচমেন্টে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।
  • পানি সংরক্ষণের জলাধারগুলি পানির গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করে। পানি ফ্লিট্রেশন হয়ে জলাধারগুলোতে আসার পর প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় ধরে জমা হয়ে থাকতে পারে। পানিতে কোনো ময়লা থাকলেও তা ধীরে ধীরে তলানি হিসেবে জমা হয় অথবা প্রাকৃতিক ভাবে পরিস্কার হয়ে যায়।
  • মেলবোর্নের পানি ব্যাবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা মেলবোর্ন ওয়াটার কঠোর মানদণ্ডে পানি বিশুদ্ধকরণ পক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সম্পূর্ণরূপে গুণমান নির্দেশিকাগুলি পূরণ করা হলেই কেবল পানি সরবরাহ করা হয়।
  • জলাধার থেকে শোধিত পানি মেলবোর্ন ওয়াটারের মোট ৩৮টি ছোট পরিষেবা কেন্দ্র থেকে বড় পাইপের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। পরিষেবা কেন্দ্র গুলোতে সবসময় যেন পানি থাকে তা নিশ্চিত করতে এগুলোতে কয়েক দিনের জন্য পানি ধরা থাকে। এই পয়েন্ট পানির গুণমান পরীক্ষা করা হয়। সেখান থেকে একটি ছোট পাইপ সিস্টেমের মাধ্যমে সরাসরি ট্যাপ সিস্টেমে প্রবাহিত হয়।
**আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে জন্য আন্তর্জাতিক পানি স্বাদ টেস্টিং প্রতিযোগিতায় মেলবোর্ন দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল!

আপার ইয়ারা রিসার্ভার পার্ক এরিয়া পানীয় সরবরাহের ক্যাচমেন্টের সংলগ্ন, তাই দূষণ এড়াতে সবার মনোযোগ থাকা প্রয়োজন। বিভিন্ন এক্সেস পয়েন্টগুলোতে ‘জনসাধারণের প্রবেশাধিকার নেই’ এমন চিহ্ন দেয়া আছে। কাজেই, সে এলাকাগুলোতে যাওয়া যাবে না। বুশফায়ার খাবার পানিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দূষিত করে ফেলতে পারে। কাজেই কোনোভাবে আগুন যেন না লাগে, সে ব্যাপারে সবার সতর্ক থাকা আবশ্যক।

  • কোনো আবর্জনা তৈরী হলে তা বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে
  • কুকুর এবং অনন্য পোষা প্রাণী নিয়ে বনে হাঁটার অনুমতি নেই
  • সমস্ত দেশীয় গাছপালা এবং প্রাণী সুরক্ষিত
  • মাছ ধরার অনুমতি নেই
  • আগ্নেয়াস্ত্র এবং অন্যান্য অস্ত্র বহন করা নিষেধ
  • আপার ইয়ারা রিসার্ভার টোটাল ফায়ার ব্যান ডিস্ট্রিকে অবস্থিত। পার্ক এরিয়াতে শুধুমাত্র নির্ধারিত ফায়ারপ্লেসগুলিতে আগুন জ্বালানোর অনুমতি রয়েছে। তবে ফায়ার ব্যান (total fire ban day) দিনগুলোতে কোন আগুন জ্বালানো যাবে না।

বসন্তের প্রথম সপ্তাহে দিনটি ছিল রৌদ্রকরোজ্জ্বল। শীতের শেষে কুড়িগুলো থেকে হলুদ ফুলেরা সবে মাত্র উঁকি দিতে শুরু করেছে। হৈচৈ আর শোরগোলে বোঝা যাচ্ছিলো যে এখানে বেড়াতে আসা সবাই আবহাওয়া এবং লোকেশন বেশ উপভোগ করেছেন। আজহার ভাই এবং তার পরিবার দুসপ্তাহ হলো বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। আমাদের সাথে এবারে প্রথম তাদের বাইরে আসা। তারা সবাই মুগ্ধ নয়নে চারপাশ দেখছিলেন।

বাবা দিবস – পিতৃত্ব ও পিতৃসত্তার গুরুত্ব এবং তাৎপর্য স্মরণ করিয়ে দেয়। আজ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বাবা দিবস বা ফাদার্স ডে। এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে কামরুন নীপা বাবা দিবস উদযাপনের পরামর্শ দেন। আমাদের প্রিয় মুখ শায়লা আপা সবার জন্য চটপটি এবং ফুচকা নিয়ে আসেন। গাছের ছায়ায় মাটিতে বসে সবাই সাদিকার চটুল কথাবার্তা আর চটপটি – ফুচকা বেশ আনন্দ নিয়ে উপভোগ করেছেন। বাবা দিবস উদযাপনের জন্য মুখরোচক কেকের নিয়ে আসেন তানিয়া এবং জিয়া দম্পতি।

এখানে যারা বেড়াতে আসবেন তারা একটু প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। অনেকে পাহাড়ি পথে ড্রাইভ করতে সাচ্ছন্দ বোধ করেন না। সকালে এবং শেষ বিকেলে অনেক রাস্তায় বন্যপ্রাণী চলে আসে। সেক্ষেত্রে সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে। এখানে টেলস্ট্র (telstra) ছাড়া অন্য কোনো মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় নেই। কাজেই সে ক্ষেত্রে আসার আগে ম্যাপ দেখে আসবেন বা অফ লাইন ম্যাপ নিয়ে আসবেন। পার্কস ভিক্টোরিয়ার এই ম্যাপটি আপনার কাজে আসতে পারে।

 

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের স্বতঃস্ফূর্ত 

অংশগ্রহণে বর্তমানে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে।