বগুড়া শহর থেকে ১০কিঃমিঃ উত্তরে এবং মহাস্থান গড় থেকে ২কিঃ মিঃ দক্ষিণে গোকুল গ্রামের দক্ষিন পশ্চিম প্রান্তে যে স্মৃতি স্তপটি যুগযুগ ধরে অতীতের অসংখ্য ঘটনাবলীর নিদর্শন বুকে জড়িয়ে শির উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ইহাই বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত। এ বাসর ঘর মেড় থেকেমেদ এবং বর্তমানে পুরার্কীতি নামে পরিচিত। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে আনুমানিক খৃস্টাব্দ সপ্তম শতাব্দি থেকে ১২০০ শতাব্দির মধ্যে এটা নির্মিত।ইস্টক নির্মিত এ স্ত্তপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং ত্রিকোনবিশিষ্ট ১৭২টি কক্ষ, অকল্পনীয় এ কক্ষগুলোর অসমতা এবং এলোমেলো বুনিয়াদ এর বোধগম্যতাকে আরো দুর্বোধ করে তুলেছে। বেহুলার কাহিনী সেনযুগের অনেকপূর্বেকার ঘটনা। বেহুলার বাসরঘর একটি অকল্পনীয় মনুমেন্ট। বর্তমান গবেষকদের মতে এ মনুমেন্ট ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এই স্ত্তপটিই বাসরঘর নয়। এই স্ত্তপটির পশ্চিমার্ধে আছে বাসর ঘরের প্রবাদ স্মৃতিচিহ্ন। পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি বাথরুম।উক্ত বাথরুমের মধ্যে ছিল ৮ফুট গভীর একটি কুপ। কুপটিতে বেহুলা লক্ষিনদরমধুনিশি যাপনের পর কুপে রক্ষিত জলে স্নান করে তাতে শুদ্ধতা লাভকরতে সক্ষমহতেন।

লখিন্দর প্রাপ্ত বয়স্ক হলে বেহুলার সাথে তার বিয়ে ঠিক করা হয়। তাদের জন্য তৈরি করা হয় লোহার বাসর ঘর। বাসর রাতে অনেক নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও মনসাদেবী সুতার আকার ধারণ করে ঘরে প্রবেশ করে লখিন্দরকে দংশন করে।সে যুগের রীতি ছিল সাপের কামড়ে কেউ মারা গেলে দাহ না করে ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া হত। লখিন্দরের সঙ্গে ভাসিয়ে দেওয়া হলো বেহুলাকে। ছয় মাস ধরে জলে ভাসতে ভাসতে এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম গেল। এক সময় পচন ধরা শুরু হলো লখিন্দরের দেহে।বেহুলা মনসার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে স্বামীর প্রাণভিক্ষা চেয়ে। এক সময় ভেলাটি এসে ঠেকে একটি গ্রামের ঘাটে। সে গ্রামে বাস করতো মনসার পালক মাতা নিতা। নিতা ঘাটে বসে দেখতে লাগলো মনসার কাছে ভক্ত বেহুলার প্রার্থনা। তার মন গলে গেল। অবশেষে নিতা অলৌকিক ক্ষমতাবলে বেহুলা ও মৃত লখিন্দরকে স্বর্গে উপস্থিত করেন।

চোখ খুলে বেহুলা দেখতে পেল মনসাকে। মনসা বলে উঠলেন, ‘তুমি তোমার স্বামীকে ফিরে পাবে। তবে শর্ত হচ্ছে তোমার শ্বশুরকে আমার পূজারী করতে হবে।’ বেহুলা উত্তর দিল, ‘আমি পারবো মা।’ সাথে সাথে চোখ মেলে তাকায় লখিন্দর। নিতার সাহায্যে আবার মর্ত্যে ফিরে এলো বেহুলা। তার শ্বশুরকে সব ঘটনা খুলে বললো। এরপর চাঁদ সওদাগরের পক্ষে মনসার পূজায় না বলা আর সম্ভব হলো না।

কিংবদন্তির গল্পগাথা যে বেহুলা-লখিন্দরকে নিয়ে, সেই বেহুলা ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বিনসাড়া গ্রামের মেয়ে। ওখানকার ঐতিহাসিক এক জমিদার বাড়ির দুলালী কন্যা ছিলেন অনিন্দ্য রূপে -গুণের অধিকারিণী বিশ্বনন্দিত বেহুলা। ষোড়শ শতাব্দীর প্রাচীন লোককাহিনীর সতী-সাবিত্রী কিংবদন্তির নায়িকা বেহুলা সুন্দরীর বাবার নাম বাছোবানিয়া ওরফে সায় সওদাগর। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আছে বেহুলার পৈতৃক ভিটায় জীয়নকূপ। আর বগুড়ার গোকূলে যুগের পর যুগ পাড়ি দিয়ে টিকে আছে তার বাসরঘর।

 

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্তমানে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আপনি এ সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

 

ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।

আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।