বছরের সবচেয়ে বড় স্কুল হলিডে চলছে। সবাই কোথাও না কোথাও বেড়াতে বেড় হয়ে যায় এ সময়। ক্রিসমাস আর নিউ ইয়ারের ছয় সপ্তাহের এ ছুটিতে পুরো অস্ট্রেলিয়া ঘুমায়। আমি বাংলাদেশের বিজয় দিবসের দিন আমি ও একরকম বিজয় উৎযাপন করেছি, নিজের ছোট্ট বাসা আমার সন্তানদের সাথে। আমরা সামার বুক রিডিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি কিন্তু শেষ করতে পারিনি, বাইসাইকেল চালানো শিখেছে সুফি। ছোটো টাও তার ফিকচার বুকস ভালোবাসে। কিন্তু ঘুমের রুটিনের বারোটা বেজে আছে। তো আমার হলিডে তোলা ছিলো শেষ দু সপ্তাহের জন্যে। আমার টাকা পয়সার অবস্থা গড়ের মাঠ, আমার ক্যাম্পিং এর প্রায় সবই ছিলো, কিন্তু একা একা ছোট্ট দুই ছেলেকে নিয়ে ক্যাম্পিং এ যেতে সাহস হচ্ছিলো না, খুঁজে পেতে লিভারপুল থেকে দেড় ঘন্টা দূরের ওয়াইজ ম্যান ফ্যারির (Wisemans Ferry), হকসবেরি (Hawkesbury) নদীর সামনে, নিউ স্কী গার্ডেন এর ক্যাম্পিং সাইটে ১ দিনের জন্যে বুক দিলাম ৫০ টাকা রেন্ট। পিকনিক টেবিল, চেয়ার, শেল্টার, হট পেল্ট, পাওয়ার পয়েন্ট, রাবিশ বিন, টয়লেট, শাওয়ার, ওয়াটার সাপ্লাই আছে, ফায়ার পিট, কিয়োসক, মানে ছোট্ট রেস্তোরাঁ ও আছে এই সাইটে। কিন্তু আমার কপাল খারাপ ছিলো, প্রথম দিন সারাদিন বৃষ্টি হলো।
দুই ছেলেকে তৈরি করে যেতে যেতে ৪টা বেজে গিয়েছিলো। একদম নদীর সামনে তাঁবু খাটালাম। আমার পাশে সত্তোর এর উপরের বয়সী এক কাপল ছিলো, নিউ ক্যাসেল থেকে আসা। আর এক পাশে একজন সিংগেল বাবা আর তাঁর কিশোরী মেয়ে, তাঁরা নৌকা চালানো, সাতার, আর মাছ কাটায়,পারদর্শী। কি চমৎকার এক্টিভ বাবা, আর তাদের সম্পর্ক। আমি যখন একা একা টেন্ট খাটাতে স্ট্রাগল করছিলাম তাঁরা সবাই এসে হাত লাগিয়েছিলো। পল আর সু থাকে নিউ ক্যাসেলে। আমার ছেলেদের নানা- নানু হয়ে গেলো, নক্ষত্রকে সবাই রানার এর খেতাব দিলো, বেহুশের মতো নদীর দিকে দৌড় মারে। সু চেয়ার দিয়ে ব্যরিকেড দিয়ে দিলো। তাঁরা চারদিন ছিলো, আমাকে একা একা বাচ্চাদের নিয়ে ক্যাম্পিং করতে দেখে অনেক প্রশংসা করলো, আর বললো আমি তাদের ছোট সন্তানের চেয়ে ও ছোট, নিউ ক্যাসেল গেলে যেনো অবশ্যই তাদের বাসায় থাকি।


যেহেতু সেখানে কিয়োসক ছিলো আমি স্ন্যাকস, ফল ছাড়া তেমন খাবার নিয়ে যাইনি, আর সেটাই বন্ধ থাকে বুূধবার, কিন্তু ক্যাম্পিং সাইটের থেকে তিন মিনিট দূরেই রেস্তোরাঁ, ক্লাব আছে ম্যারিটাইম মেম্বার দের। সেখানে খেতে গেলাম, রিমোট এড়িয়া হিসেবে ও খাবার খুবি ভালো দামের ছিলো। সেখানে রেস্তোরাঁ মালিক এমা ও তার বর কি যে চমৎকার ছিলো, গল্প করলো, আমার ছেলেদের প্রশংসা করলো। তাঁরা থাকে নদীর অন্য পাশে, সেইন্ট এলবানস গ্রামে। তিনটা গ্রাম আছে নদীর ওপাশে। সেখানে ট্রাক এ করে পানি যায়। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নাই। সোলার প্যানেল দিয়ে চলে। আর ফোন এর কোন সিগনাল নাই গ্লেনোরির পর থেকেই, সেটা অন্তত আধা ঘন্টা দূরে, সেখানেই শেষ উলিস, বেকারি আছে। ফেরী ২৪/৭ খোলা থাকে আর ফ্রী। আমাকে বললো নদীর ওপাশে গ্রামে ঘুরে যেতে, ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। আর আমার সাত বছরের অস্ট্রেলিয়া জীবনে এতো চমৎকার, বন্ধুসুলভ, হেল্পফুল অসি দেখিনি। আমাদের দেশে ও হয়তো এরকম রিমোট এরিয়া নাই। ওয়াইজম্যান ফেরী হলো ছোট্ট শহরতলি, নদী পার করে ওপাশের গ্রামের লোকজন আসে, এ পাশের রেস্তোরাঁয়, বেকারিতে, বাজার করতে। ছোট্ট একটা পুলিশ স্টেশন, পাবলিক স্কুল আছে।

আরো পড়ুন পরিবারসহ ক্যাম্পিং করার কথা ভাবছেন?

আসার পথে একটা লুক আউট, নদীর ওপাশে কনভিক্ট ট্রেইল আছে। আর একটা বুড্ডিস্ট মনাস্টেরি। বৃস্টির কারনে পাহাড় ধ্বসে রাস্তা বন্ধ আর পিচ্ছিল হয়ে ছিলো বলে, আর বাচ্চাদের নিয়ে ওয়াকিং বা হাইকিং এর সাহস করিনি, এমনিতে সুফির সাইকেল, ক্যাম্পিং এর জিনিসপত্র আনতে গিয়ে, বেবি স্ট্রলার আনার জায়গা ছিলো না। পরদিন ফেরীতে করে নদীর ওপাশে গ্রামে ঘুরতে গিয়ে রেবল রোডে চাকা ফাংচার করে ফেরার পথে ব্লোই করলো চাকা। ফোনে নেটওয়ার্ক ও নাই, কি যন্ত্রণা। কিন্তু আল্লাহ হান্নাহ নামে একজনকে পাঠাই দিলো আমাদের উদ্ধার করতে। আমার বয়সি সেরকম ফিট এক মেয়ে সেন্ট আলবানস থেকে ক্যাসেল হিল যাচ্ছিলো আমার গাড়ির অবস্থা আর বাচ্চাদের দেখে, নিজে থেমে, আমাকে আর বাচ্চাদের লিফট দিলো গ্লেনোরি অব্দি। তাঁর গাড়িতে ছিলো তিনটে পাপি, কিছু পাখি, সে বলেছিলো আমি অপেক্ষা করলে ঘন্টা দুয়েক পর সে আর তাঁর পার্টনার আমার চাকা লাগিয়ে দিবে। আমি রোড সাইড এসিস্ট্যান্ট এ ফোন দিয়ে, শহরতলীর ছোট্ট বেকারিতে বডে প্রিয় মোকা আর এগ বেনেডিক্ট, আর বাচ্চাদের জন্যে ফিশ এন্ড চিপস এনজয় করছিলাম। আমরা বই, সাইকেল, বল নিয়ে গিয়েছিলাম, দিনের বেলায় বাচ্চারা উপভোগ করেছিলো দারুন, কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই বেশ গাই গু করলো, বিদ্যুৎ নাই, দূরে গিয়ে টয়লেট, টেন্ট এ ছোট্ট আলোয়, বৃষ্টির নিচে ঘুমানো। কিন্তু সারাদিনের ধকলে ক্লান্ত হয়ে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলো।





আরো পড়ুন নিটমিলুক ন্যাশনাল পার্কে ক্যাম্পিং

সকালটা অসাধারণ ছিলো। ঝলমলে রোদ, মিস্টি তাজা বাতাস, নীল আকাশ, নীল পানি, পাখি আর পানকৌড়িদের আনাগোনা। গাছের পাতায় পাতায় সূর্যের নাচন, আর ঘাসের ডগায় মুক্তোর মতো জ্বল জ্বল করছিলো আলোরা। ফয়েল পেপারে নক্ষত্রের খিচুড়ি গরম করা হয়েছিলো, ব্রেড, সিরিয়াল, মিল্ক, আম, কমলা আর ফায়ার পিটে পানি গরম করে কপি বানিয়ে, আদুরে রোদে পিঠ পেতে চুমুকে চুমুকে সকালটা উপভোগ করেছি দারুন। মাছদের খেলা দেখেছি, নদীতে স্পিড বোট আর নৌকা চালাচ্ছিলো অনেকেই। যাঁদের আমার মতো বনে, সমুদ্রে, জংগলে গিয়ে হারিয়ে যেতে ভালো লাগে। কিন্তু পকেট গড়ের মাঠ, ক্যাম্পিং খুব ভালো অপশন। শুরুতে এরকম শাওয়ার, টয়লেট সুবিধাসহ জায়গায় যাওয়া ভালো। ফ্রী ক্যাম্প সাইট ও আছে যেখানে গোল একটা টয়লেট ছাড়া কিছু নাই। সবচেয়ে ভালো ছিলো বাচ্চারা ফোন গ্যাজেট থেকে দূরে ছিলো।

আরো পড়ুন মালালায় ক্যাম্পিং

পড়ুন শায়লা হক তানজুর লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।