পাখির মতো উঁচু থেকে সমুদ্র আর বনানী দেখবো বলেই পরিকল্পনা। বেশী দূর তো নয়। মেলবোর্ন থেকে মাত্র ১ ঘন্টার ড্রাইভ।

বলছি মর্নিংটন পেনিনসুলার আর্থার সিট ঈগলের কথা। আমার কন্যা দীপিতা আর তার বান্ধবী সোনাইনা দুইজন একসাথে বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে চায়। সেই থেকে দুই পরিবারের একদিন ঘুরতে বেরুনো। তবে তারও বেশকিছু আগে, ক্যাবল কারের টিকিট কিনে রেখেছিলেন আমার স্ত্রী নীলিমা। ফলে পাক্কা সব পরিকল্পনা নিয়ে সেদিন যাত্রা সকাল সকাল। গন্তব্য মর্নিংটন পেনিনসুলার আর্থার সিট ঈগল।

৩০৪ মিটার উঁচু পাহাড়ে ক্যাবল কারে উঠার পথটা চমৎকার।দুই পরিবার। তিনটি শিশুসহ মোট জনসংখ্যা সাত। ফলে একটি পুরো ডাব্বা দেয়া হলো আমাদের। সবাই চড়ে বসার পর যেন ‘ওপরের ডাক’ এলো! ধীরে ধীরে ক্যাবল কার উপরের দিকে উঠতে শুরু করলো। আর আমাদের মনে রোমাঞ্চকর অনুভূতির সূচনা হলো। দেখছি আমরা ওপরে উঠছি, ধীরে ধীরে। অন্যপাশে কেউ কেউ ওপরের খেলা সাঙ্গ করে নিচে নামছেন। পাশাপাশি রশিতে আশা যাওয়া। আমরা চিৎকার করে ‘হাই’ ‘বাই’ বলছিলাম অন্য পারের যাত্রীদের। অচেনা অজানা মানুষের প্রতিউত্তরে আমরা বেশ মজাই পেলাম।

এই করতে করতে দেখছিলাম, গ্রানাইটে পাথরের পাহাড়ের বুকে জন্মানো উঁচু বৃক্ষমালা যেন আমাদের পায়ের নিচে। নীচে ঘোরানো প্যাঁচানো রাস্তা। তাতে ছোট ছোট গাড়ি চলছে। সবুজের সমারোহ দেখছি ওপরের থেকে।

একসময় কে যেনো চিৎকার দিয়ে বললো ঐ তো সমুদ্র! নিচে সবুজ বন, দূরে স্বচ্ছ জলের সমুদ্র, মর্নিংটনের উপকূল আর ওপরে নীল আকাশ। মোহনীয় সেই সৌন্দর্য! প্রাণ ভরে তাই দেখছিলাম। ভাবছিলাম পাখিরা তো এভাবেই সব দেখে। আহা! যদি পাখি হতেম তবে তো এমনি করেই নয়ন জুড়িয়ে ওপর থেকে দুনিয়ার সব সৌন্দর্য দেখতে পেতাম! যাহোক ক্যাবল কারে আমাদের তাই দেখার সুযোগ করে দিলো।

ডাব্বায় বসে মিনিট দশেকের পথ। একসময় আমরা পৌঁছালাম পাহাড়ের ওপরে। সেখানে দেখি আবার সমতল ভূমি, বন বনানী। কী আশ্চর্য! তার মানে ক্যাবল কারেই শুধু নয়, গাড়িতেও যাওয়া যায় এই আর্থার সিট ঈগলে।

আর্থার সিট ঈগলে দেখা মিললো নানান প্রকার উদ্যানের। জানা গেল ছোটবড় ২০টি উদ্যান আছে এখানে।যেখানে মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন আনন্দ করতে। বারবিকিউ চুলা থেকে বিশুদ্ধ পানি কিংবা টয়লেট সব কিছুর ব্যবস্থাপনা চমৎকার লেগেছে। দেখলাম বেশকটি আফগান পরিবার মাঠে নিজেরা রান্না করলেন, খোলা উদ্যানে চাদর বিছিয়ে তাই খেলেন নরম রোদ গায়ে মেখে। বাসা থেকে রান্না নিয়ে এক সময় আমরাও পেটপূজা করে নিলাম সকলে মিলে।

এবার আমাদের বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোর পালা। পথে থাকা সাইনবোর্ড দেখে জানলাম, এসব বনে ক্যাঙ্গারু ঘুরে বেড়ায়। পথে পথে তাজা দুগর্ন্ধময় বিষ্ঠা দেখে মনে হচ্ছিলো, ঝোপ থেকে বুঝি এই ক্যাঙ্গারু বেরিয়ে এলো! তবে কপাল মন্দ। দুপুর বলে ক্যাঙ্গারুর সাক্ষাৎ পেলাম না। তাই ওদের বিষ্ঠা দেখেই এযাত্রা মনকে শান্ত করতে হলো!