ফেব্রুয়ারী ২০১৭, নোমানের তখন মাত্র সাড়ে ছয় বছর । গুনে গুনে ৬ বছর ৬ মাস ৮ দিন। আমরা ঠিক করলাম মাউন্ট কোসিয়াসকো (Kosciuszko) যাবো। মাউন্ট কোসিয়াসকো মেইনল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার সবচে উঁচু পর্বত (২,২২৮ মিটার)। আন্দিজ (প্রায় ৬,৯৫৯ মিটার) বা হিমালয়ের (৮,৮৪৯ মিটার) তুলনায় অনেক উঁচু পর্বত নয় এটি। তবে, ভিক্টোরিয়া বা নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে অনেক অনেক দূরের পথ। জন মানুষ শূন্য ছোট ছোট শহরের পাশ দিয়ে, নির্জন পাহাড়ী পথ দিয়ে কোসিয়াসকো যেতে হয়।
খুব ভোরে রওনা হয়ে গিয়েছিলাম আমরা। রাতে অবস্থান করেছিলাম ওয়াংগারাত্তা (Wangaratta) বলে একটা জায়গায় যা মেলবোর্ন থেকে ৩ ঘন্টার পথ। ওয়াংগারাত্তা থেকে কোরিঅং (Corryong) কাঁকোবান (Khancoban) হয়ে থ্রেডবো (Thredbo) পাহাড়ি রাস্তায় বিরতিহীন ৪ ঘন্টার পথ। তার মানে মেলবোর্ন থেকে টানা ৭ ঘন্টার, ক্যানবেরা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টা এবং সিডনি থেকে ৭ ঘন্টার পথ। সবচে ভাল হয় যদি থ্রেডবোতে থাকার ব্যবস্থা করে নেন। থ্রেডবোতে বেশ বড় শহর।

থ্রেডবোর শহরের উচ্চতা ১,৩৬৫ মিটার। আমরা যেদিন থ্রেডবো পৌঁছালাম তখন তাপমাত্রা ছিল ২৫ ডিগ্ৰী। আমরা লিফ্ট চেয়ারের টিকেট কিনতে গিয়ে জানলাম মাত্র ৫০০মিটার উপরে ঈগল নেস্ট (Eagles Nest – উচ্চতা ১,৮৩৪ মিটার) তাপমাত্রা -২ ডিগ্রী। জানুয়ারি মাসের এই ভ্রমণে আমাদের তাপমাত্রার তারতম্য মাথায় কাজ করেনি, যাইহোক, গাড়িতে ফিরে সম্বল যা কিছু ছিল সব গায়ে ছড়িয়ে লিফ্ট চেয়ারের উঠে বসলাম। কয়েক মিনিটেই থ্রেডবো থেকে ঈগল নেস্ট পৌঁছে গেলাম (১.৮ কিলোমিটার)। আমাদের মাউন্ট কস্কিউজকো অভিযানের শুরু এখান থেকেই। বলে রাখা ভালো যে আপনি লিস্ফট চেয়ারের ছাড়াও এখানে আসতে পারেন। তবে, সেক্ষেত্রে আপনাকে ৩.৫ কিলোমিটার পথে এবং প্রায় ৫০০ মিটার উচ্চতা পায়ে হেটে অতিক্রম করতে হবে।

আরো পড়ুন লোসার: কাঞ্চনরঙা শেষ বিকেলের গল্প

ঈগল নেস্টে লিফ্ট চেয়ার থেকে নেমে পড়লাম। এখন থেকে মাউন্ট কোসিয়াসকো সামিটের দূরত্ব ৬.৫ কিলোমিটার। আমরা জানতাম এই দূরত্বের কথা। বুশওয়াক এবং নানা রকম আউট ডোর এক্টিভিটির সাথে ছোট্ট নোমান বেশ পরিচিত এবং খুব সাচ্ছন্দ বোধ করে। গুটি গুটি আমরা এগুতে থাকলাম। প্রায় ৩ ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম অস্ট্রেলিয়ার সবচে উঁচু পর্বতের শিখরে। আমরা ধারণা করেছিলাম আমরা হয়তো পুরোটা পথ যেতে পারবো না, আরজু আর আমি বলাবলি করছিলাম যতোটুক সম্ভব যাই।


আরো পড়ুন তারুণ্যের পর্বত জয়

পর্বতের শিখরে পৌঁছে আমরা প্রায় একঘন্টা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। যাবার পথে ছিল বড় হ্রদ, বিস্তৃত মালভূমির ন্যায় ভূদৃশ্য, পাহাড়, বিশাল বিশাল প্রস্তর খন্ড, লুক-আউট ইত্যাদি। প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে একটা পিট টয়লেটও ছিল। খুব অবাক হয়েছিলাম জানুয়ারি মাসেও মাত্র ২,০০০মিটার উচ্চতায় তুষারে জমা বিশাল বরফ দেখতে পেয়ে।
পড়ুন সালাহউদ্দিন আহমদের আরো লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।