কোথায় যাবেন শরতে

Avatar

Byসালাহউদ্দিন আহমদ, অস্ট্রেলিয়া

Mar 8, 2024 #অটাম, #অস্ট্রেলিয়া, #আকাশ, #আটাম কালার, #আদিবাসী, #আবহাওয়া, #আমেরিকা, #ইউরোপিয়ান, #ইকোসিস্টেম, #ইনস্টাগ্রাম, #ইংলিশ, #ঋতুচক্র, #এডিলেড, #ওয়াইনারি, #কলোনী, #কাশ, #কুইন্সল্যান্ড, #ক্যানবেরা, #গতিসীমা, #গরম, #গার্ডেন, #গ্রাম, #ঘুরুঞ্চি, #ছুটি, #জনপদ, #জনপ্রিয়, #জার্মান, #ট্রাভেল, #তাসমানিয়া, #নিরাপদ ভ্রমণ, #পঞ্জিকা, #পত্রঝরা, #পরিবেশ, #পর্ণমোচী, #পর্যটক, #পার্থ, #পাহাড়, #প্রকৃতি, #প্রাইভেট, #ফল, #ফুল, #ফেব্রুয়ারি, #বন, #বন্যা, #বাংলাদেশী, #বাস্তুতন্ত্র, #বৃক্ষ, #বেড়ানো, #ব্রাইট, #ভিক্টোরিয়া, #ভূদৃশ্য, #ভ্যালি, #মেলবোর্ন, #রাজধানী, #রাজপথ, #ল্যাটিন, #শরৎ, #শহর, #শিউলি, #শীত, #সবুজ, #সাবধান, #সালাহউদ্দিন আহমদ, #সিডনি, #সুরক্ষিত, #সৌন্দর্য, #হাই কান্ট্রি, #হেরিটেজ, #হোবার্ট

অস্ট্রেলিয়ার ঋতুচক্রের পরিক্রমায় পুড়িয়ে ছারখার করা গরমে প্রকৃতি যখন অতিষ্ঠ ঠিক তারপরই আসে শরৎ। ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগে তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রী সে: এ নেমে আসে, জানান দেয় শরতের আভাস। আমরা বাংলাদেশীরা যখনি  শরতের কথা মনে করি, সবার আগে মাথায় চলে আসে শিউলি কিংবা কাশ ফুলের কথা। অস্ট্রেলিয়ার শরতেও কাশ ফুল ফুটে তবে সেটা বেশি জনপ্রিয় নয়। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অংশে শীতের প্রকট বেশি বিধায় বিভিন্ন গার্ডেন এবং শহরের রাস্তার পাশের পর্ণমোচী বৃক্ষ হলুদ, কমলা, লাল, খয়েরি রঙ প্রদর্শন করে।

শরৎকে ইংরেজিতে “অটাম”। অটাম এবং ফল দুটো শব্দই ব্রিটিশ ইংলিশ থেকে এসেছে এবং একই অর্থে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু, উত্তর আমেরিকায় “ফল” শব্দটি ব্যবহার হয়। অটাম অনেক পুরোনো শব্দ, ১৩০০ সালের দিকে ল্যাটিন থেকে ইংলিশে আনা হয়। ১৬০০ সালের দিকে বিভিন্ন কবিতায় “পাতার পতন” (দা ফল অফ দা লিফ) ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের পঞ্জিকায় জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ এই তিন মাস “গুড়নমূল” বা “ওয়াল্টজআর্নমিররি” নাম পরিচিত। এ সময়টাতে তারা দলবদ্ধ ভাবে থাকতেন এবং বন্যা হবার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়।

পর্ণমোচী বৃক্ষের (ডেসিডুয়াস ট্রী) শরৎকালের রং প্রদর্শন সর্বত্র “আটাম কালার” নামে পরিচিত। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে যে সকল পর্ণমোচী বৃক্ষে দেখতে পাওয়া যায় তাদের সিংহভাগই স্থানীয় জাতের গাছ নয়। ১৯ শতকে যখন ইউরোপিয়ান কলোনীর বিস্তার ঘটে সে সময় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী বাস্তুতন্ত্রে (ইকোসিস্টেম) এবং ভূদৃশ্যে অনেকে পরিবর্তন আসে, তাদের মধ্যে একটি হলো বিভিন্ন জনপদে এবং তার নিকটবর্তী এলাকার স্থানীয় বৃক্ষ পর্ণমোচী বৃক্ষ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়।

যাই হোক, শরৎ অস্ট্রেলিয়ার সবার কাছে অনেক প্রিয় একটা সময়। এ সময়টাতে আমি পরিবার নিয়ে আশে পাশের ছোট ছোট শহর যেখানে এরকম পত্রঝরা বৃক্ষের ব্যাপক সমারোহ দেখা যায় এবং বিভিন্ন উদ্যানে অনেক ঘুরে বেড়াই। আবহাওয়াজনিত কারণে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ অংশে যেমন, পার্থ, এডিলেড, মেলবোর্ন এবং সিডনি সহ আশে পাশের অনেক শহরে আটাম কালার দেখতে পাওয়া যায়। এই লেখায় আপনাদের সামনে অস্ট্রেলিয়ার যে সকল জায়গায় আটাম কালার দেখতে পাওয়া যায় তার কয়েকটি জায়গার বর্ণনা করছি।

আরো পড়ুন শীতের আভাস 

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া

ব্লাকউড ভ্যালি অঞ্চলে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সবচে সুন্দর অটাম কালার দেখা যায়। আপনাকে যেতে পার্থ শহর থেকে খানিকটা দূরে বালিঙ্গাপ (Balingup), নান্নুপ (Nannup) এবং ব্রিজটাউনে (Bridgetown)।

সাউথ অস্ট্রেলিয়া

সাউথ অস্ট্রেলিয়া রাজধানী এডিলেড শহরের আশেপাশে সবচেয়ে ভালো কালার দেখবার জায়গা হল মাউন্ট লোফ্টি (Mount Lofty) এবং হ্যাহ্ণদর্ফ (Hahndorf)। এডিলেড শহর থেকে মাত্র আধা ঘণ্টার দূরত্বের মধ্যে এই দুই শহরের অবস্থান। হ্যাহ্ণদর্ফ জার্মান অধ্যুষিত খুবই সুন্দর জায়গা। মাউন্ট লোফ্টিতে আপনি পাবেন ওয়াইনারি, ছবির মতো সুন্দর রাস্তা এবং মাউন্ট লোফ্টি গার্ডেন।

তাসমানিয়া

তাসমানিয়ার ক্র্যাডল মাউন্টেন অঞ্চলের ফাগুস ট্রি (এক ধরণের স্থানীয় ব্রীচ), রয়েল তাসমানিয়ান বোটানিক গার্ডেন,হোবার্ট শহরের আশেপাশে, মাউন্ট ফিল্ড ন্যাশনাল পার্ক, লাঞ্চেস্টন শহরের হেরিটেজ হাইওয়ে এবং রিচমন্ড উল্লেখযোগ্য।

কুইন্সল্যান্ড

কুইন্সল্যান্ডের উষ্ণ আবহাওয়া পর্ণমোচী বৃক্ষের জন্য তেমন উপযোগী নয়, তবে, আপনারা টুওউওম্বা (Toowoomba), মাউন্ট ট্যাম্বোরিন (Tamborine ) এলাকায় যেতে পারেন।

নিউ সাউথ ওয়েলস

সেন্টিনিয়াল পার্ক, অবার্ন বোটানিক গার্ডেন, রয়েল বোটানিক গার্ডেন, অরেঞ্জ (অরেঞ্জ), ব্ল মাউন্টেন বোটানিক গার্ডেন, টুমুট (Tumut), মেফিল্ড (Mayfield) গার্ডেন, অবেরন (Oberon), বাথর্স্ট (Bathurst), ক্যামেলিয়া গার্ডেন, ক্যাটেই (Cattai) ন্যাশনাল পার্ক।

ক্যানবেরা

বিগত কয়েক দিনের প্রচেষ্টায় ঘুরুঞ্চি টীম ক্যানবেরা শহরের যে সকল রাস্তায় রঙিন পত্রঝরা বৃক্ষ রয়েছে তার একটি তালিকা রাস্তার নাম সহ প্রস্তুত করেছে। অনেক দিনের প্রচেষ্টায় ঘুরুঞ্চি টীম ক্যানবেরা শহরের যে সকল রাস্তায় রঙিন পত্রঝরা বৃক্ষ রয়েছে তার একটি তালিকা রাস্তার নাম সহ প্রস্তুত করেছে। বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি (শরতে রঙ্গিন ক্যানবেরার রাজপথ) পড়ুন।

ভিক্টোরিয়া

মেলবোর্ন শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয় এমন একটি শহর হল গ্লেলিয়ন (Glenlyon)। এই শহরের কাছাকাছি আরো কয়েকটি শহর হল ডেলসফোর্ড (Daylesford) এবং ট্রেন্টহ্যাম (Trentham)। গ্লেলিয়ন শহরে রয়েছে মাত্র ৪০০ লোকের আবাস। শরৎকালে এই শহরের পরিবেশ পথের সবাইকে বিমোহিত করে। গণপরিবহনে এই শহরে আসতে অনেক সময় লাগে তবে মেলবোর্ন থেকে কলডার হাইওয়ে ধরে গ্লেলিয়ন পৌঁছাতে আপনার সময় লাগবে মাত্র ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট।

শরৎকালে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় শহরের নাম মাউন্ট মেসিডোন (Mount Macedon)। মাউন্ট মেসিডোনের অনার এভিনিউ ইনস্টাগ্রাম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার শীর্ষে থাকে। এক কিলোমিটার অনার এভিনিউ ছবির মতো সুন্দর করে সাজানো। মেলবোর্ন থাকে কলডার হাইওয়ে ধরে ৪০ মিনিটে এখানে পৌঁছানো সম্ভব, এছাড়া ভি-লাইন ট্রেন থামবে মেসিডোন স্টেশনে। স্টেশন থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ।

আবহাওয়াজনিত কারণে অস্ট্রেলিয়ার ভিটোরিয়ার অটাম কালার সর্বাধিক সুন্দর এবং অস্ট্রেলিয়ার সেরা। ভিক্টোরিয়ার হাই কান্ট্রি নাম পরিচিত এলাকাগুলো যেমন ব্রাইট (Bright), মাউন্ট বিউটি (Mount Beauty), বিচওয়ার্থ (Beechworth), মির্টলফোর্ড (Myrtleford), ইয়াকান্দনদাহ (Yackandandah), পরেপুঙ্খা (Porepunkah) খুবই জনপ্রিয়। মেলবোর্ন শহরের আশেপাশের অনেক উদ্যান, অনেকগুলো সাবআর্ব, অনেক রাস্তায় এ জাতীয় গাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে  ডানডেনং এবং ইয়ারা ভ্যালি অঞ্চলের নানা উদ্যান যেমন মাউন্ট ডানডেনং আরবোরেটাম, আলফ্রেড নিকোলাস গার্ডেন, জর্জ টিন্ডাল গার্ডেন এবং রডোডেনড্রন গার্ডেন। মাউন্ট মেসেডোনের অনার এভিনিউ, উডেন্ড, ডেলসফোর্ড, গ্লেনলওঁ শহরগুলো ইনস্টাগ্রাম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার শীর্ষে।

সাবধানতা:

অবশই আমাদেরকে প্রাথমিক কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন:

  • গ্রামীণ পরিবেশে গাড়ি চালানো অনেকের কাছেই নতুন হতে পারে, সবাই সাবধানে চালাবেন।
  • খুব সকালে এবং পড়ন্ত বিকেলে যারা গাড়ি চালাবেন তাদেরকে খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হবে। এই সময়টাতে বিভিন্ন প্রাণী রাস্তায় চলে আসে।
  • রাস্তায় চলার সময় আপনার গতিসীমা লক্ষ্য রাখুন। ছোট শহরের রাস্তার সর্বোচ্চ গতিসীমা ৪০কিমি থেকে ৬০কিমি হতে পারে।
  • রাস্তার পাশেই হঠাৎ করে হুট করে থামিয়ে দিবেন না। নো স্ট্যান্ডিং জোনে দাঁড়াবেন না। এই শহরগুলোতে এ সময়কালে পার্কিং টিকেট ইসু হবার ঘটনা ঘটে।
  • প্রতিবন্ধী চিহ্ন দেয়া জায়গা (যদি আপনার কাজে না লাগে) ছেড়ে গাড়ি পার্কিং করুন।
  • কোনো “ব্যক্তিগত সম্পত্তি” (প্রাইভেট প্রপার্টি) – বা কোথাও “প্রবেশ করবেন না” (ডু নট এন্টার) সাইনবোর্ড থাকলে সেখানে যাবেন না।
  • ভদ্রতা বজায় রাখুন। অতিরিক্ত পর্যটকদের করণে অনেকে সময় স্থানীয়রা বিরক্ত হন, কাজেই তাদের এড়িয়ে চলুন, বিবাদে জড়াবেন না।

পড়ুন সালাহউদ্দিন আহমদের আরো লেখা

 

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

 

ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।

আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।