আজকাল অনেকেই জানতে চান ওমুক তারিখে ওমুক ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে কেউ আসবেন কিনা! বয়স্ক বাবা, মা, কিংবা শশুর বা শাশুড়ী আসবেন, তারা ইংরেজী জানেনা, কেউ একটু হেল্প করবেন কিনা।
আমার পরামর্শ হলো, উনারা যদি বয়স্ক হন তবে তবে হুইলচেয়ার সার্ভিস বুক করে দেন আর কোনো কিছুরই দরকার নেই। শুধু তোতা পাখির মতো “হুইল চেয়ার” শব্দটি মুখস্ত করিয়ে দিবেন। কয়েকটা আলাদা আলাদা কাগজে বড় বড় অক্ষরে কিছু প্রয়োজনীয় ইংরেজী বাক্য যেমনঃ I’m going to New York / My flight number…/ I want to go to Bathroom / I need water / I need Help / Help me to find out my seat / I need a wheelchair help….ইত্যাদি লিখে দিতে পারেন। তার নিচে ছোট করে বাংলা তরজমা লিখে দিবেন। ইংরেজী পড়তে না পারলেও তিনি যেনো বুঝতে পারেন যে কোন দরকারে কোন কাগজে লেখা ইংরেজী বাক্যটি দেখাতে হবে। যখন দরকার হবে তখন যেনো সেই কাগজটি কাউকে দেখাতে পারেন। ইউটিউবে প্রথমবার বিমান ভ্রমণের উপর অনেক বাংলা ভিডিও আছে, সেগুলো দেখতে বলবেন। বিমানে বাথরুম ব্যবহার নিয়মের উপর অনেক ভিডিও ইউটিউবে আছে, সেগুলোও দেখতে বলতে পারেন। একটা ছোট খালি প্লাস্টিকের বোতল ব্যাগে রাখতে বলবেন যেনো বাথরুমের ট্যাপ থেকে পানি (যদি দরকার হয়) নিতে পারেন।
যাদের দুবাই এয়াপোর্টে ট্রান্জিট হবে তারা অনলাইন থেকে “মিট এন্ড এ্যাসিস্ট” নামে একটা সার্ভিস কিনতে পারেন। মারহাবা নামে একটা প্রতিষ্ঠান দুবাই এয়ারপোর্টে এই সার্ভিস দেয়। অনেকেই ট্রান্জিটের সময় হুইল চেয়ার না পাবার অভিযোগ করেন, এই সার্ভিস সব ব্যবস্থা করে দিবে। শুধুমাত্র ট্রান্জিট ট্রান্সফার হেল্পের জন্য $২১.৭৮ ডলার এবং ট্রান্জিট সময়ে যাত্রিকে সংগ ও সেবা দেবার জন্য $৫০.৩৬ ডলার চার্জ করে। আরেকটু নিশ্চিন্ত হবার জন্য আপনি দুটো সার্ভিসই অনলাইনে বুক করতে পারেন।
তবে আপনার যাত্রীকে এটাও বলে দিবেন, যদি প্লেনে কারো সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় সেই সম্পর্কটুকু যেন বিমানের ভিতর থাকাকালীন সময়ে সীমাবদ্ধ রাখতে। বলে দিবেন, বিমান থেকে নামার সময় যেনো তার পিছে পিছে চলে না যায়। বিমান থেকে বের হবার সময় বিমানের গেট থেকে কোনোভাবেই যেনো হুইল চেয়ারে বসা মিস না করে। কারণ হুইল চেয়ারের সাথে রেজিষ্ট্রি করে আবার আরেকজনের উপর নির্ভর করা মানেই দুই নৌকায় পা দেবার সমান। শেষে একুল-ওকুল দু’কুলই হারাতে হতে পারে।
কারণ যার সাথে সখ্যতা হয়েছে তিনি হয়তো নিজের ঝামেলা সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যাবেন, আপনার যাত্রীর দিকে ঠিকমত নজর দিতে পারবেন না। অথচ আপনার যাত্রী হুইলচেয়ার ছেড়ে তার হেল্পের আশায় বসে থাকলে একটা কনফিউজিং অবস্থা তৈরি হতে পারে। তারচেয়ে আপনার যাত্রীকে যদি হুইল চেয়ার সার্ভিসে উপর আস্থা রেখে তাদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে সেটা শেখান তাহলে নিশ্চিত থাকুন যে হুইল চেয়ার প্রোভাইডার সবকিছু সুন্দরভাবে করবেন। আপনার যাত্রীকে কিছুই করতে হবেনা।
আপনার যাত্রীর হাতে পাঁচ/দশ ডলার ক্যাশ দিয়ে রাখবেন যাতে উনি হুইলচেয়ার ব্যক্তিকে কিছু টিপ দিতে পারেন, এটা কার্টেসী। যাইহোক আপনি যদি উনার একাকিত্ব বা বিমানভ্রমণ ভীতি কমানো অথবা সঙ্গ বা কমফোর্টের জন্য কাউকে খোঁজেন তবে সেটা ভিন্ন কথা, কিন্তু খেয়াল রাখবেন যতক্ষণ বিমানের ভিতরে থাকবেন এবং ট্রান্জিট এয়ারপোর্টে অবস্থান করবেন ততক্ষণ অন্যের সাথে খাতির হোক, কিন্তু বিমানে ওঠা এবং নামার সময় যেনো হুইলচেয়ার না ছাড়ে, যতক্ষণ হুইলচেয়ার না পায় ততক্ষণ বিমানের গেটে দাড়িয়েই যেনো ঐ “ হুইলচেয়ার” শব্দটা বার বার উচ্চারণ করে।
আরো পড়ুন লাল পাহাড়ের পথে
আমার এক বন্ধুর মায়ের টিকিট হুইলচেয়ার করা ছিলো। কিন্তু জেএফকে এয়ারপোর্টে এসে সেই আন্টি এক আপুর সাথে গল্প করতে করতে হুইল চেয়ারে না চড়ে আপুর সাথে হেটে হেটে লাগেজ বেল্টের কাছে চলে গেছে। আপুটি সেই আন্টির ইমিগ্রেশনে হেল্প করেছেন কিন্তু আন্টির লাগেজ আসতে দেরী হওয়ায় আপুটি সেই আন্টিকে লাগেজের ওখানে বসিয়ে রেখেই তার মতো তিনি বাড়ী চলে গেছেন। আর আন্টি মুরুব্বী মানুষ সেখানে দুইটা লাগেজ আর হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে বসেই আছেন। আন্টি ভাবছেন, তার ছেলে আসবে, বিমান বন্দরের ভিতরে ঢুকে লাগেজ বেল্টের পাশে বসে থাকা মাকে নিয়ে যাবে আর ওদিকে আমার বন্ধুটি চার নম্বর গেটে চার ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে কিন্তু তার মা আর বের হয়না। সময় যত যায় বন্ধুটির চিন্তা ততো বাড়তে থাকে। তার মা এসেছে কিনা, নাকি দুবাই রয়ে গেছে, নাকি হারিয়ে গেছে, নানান চিন্তা। শেষে এক হুইলচেয়ার কর্মীকে রিকোয়েস্ট করে তার মায়ের ছবি দিয়ে ভিতরে খুঁজতে পাঠালো। অনেক খোঁজার পরে কর্মীটি তার মাকে পেয়ে বাইরে এনেছে। অথচ তার মা যদি আপুটির উপর ভরসা না করে বিমানের গেট থেকেই হুইলচেয়ারে বসে পড়তেন তাহলে ইমিগ্রেশন, লাগেজ সবকিছুই হুইল চেয়ার সার্ভিসের লোকেরা করে দিতো এবং নিরাপদে নিশ্চিন্তে বাইরে নিয়ে আসতো। কিন্তু আপুর সাথে গল্প করতে করতে আন্টি অতি আনন্দে হুইল চেয়ার ছেড়ে দিয়ে যে ভুল করেছেন তার জন্য বন্ধুটির কত বড় একটা ঝামেলা এবং টেনশন পোহাতে হলো। একবার সেটা চিন্তা করে দেখুন যদি আপনার বেলাতে এমন ঘটনা হতো।
পড়ুন তরিকুল ইসলাম মিঠুর আরো লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।