মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছুর দোষ এই রংগিন টিভিটার। তখন ছিলোনা ইন্টারনেট, তাই টিভিই ছিলো ভরসা। ডালাস, মায়ামি ভাইস, বে-ওয়াচ, নাইট রাইডার নামের টিভিশোগুলো দেখে তেমন কিছুই বুঝতাম না কিন্তু উঁচু উঁচু কাচের বিল্ডিং আর রাস্তা ঘাট, বড় ক্রুজ শিপ এসব দেখে কল্পনার জগতে আত্মতুষ্টির একটা ছবি একে ফেলতাম। আর ভাবনায় ছিলো ইস!!! যদি এমন বড় শিপে (ক্রুজে) ঘুরতে পারতাম।
এখানে নানান জায়গা থেকে ক্রুজ শীপে উঠা যায়। একদম সায়দাবাদ (চার্লস্টন), গুলিস্তান (অরল্যান্ডো), গাবতলী (মায়ামি) বাস স্টেশন এর মতো অবস্থা। বেশিরভাগ ক্রুজশীপ বিকেল তিনটা থেকে চারটার মাঝে যাত্রা শুরু করে। তাই মায়ামি থেকে যাত্রা শুরু করার আগের দিনই আটলান্টা থেকে সাউথ ওয়েস্ট এ উড়াল দিলাম মায়ামিতে। সেখানে হোটেলে রাত্রি যাপন করে ফ্যামিলি সহ পরদিন হোটেল থেকে মাত্র পনেরো মিনিট দূরত্বে যাত্রা শুরু করলাম এক অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে।

যাত্রার শুরুতেই ব্যাপক অভ্যর্থনা আর আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যাই। সত্যিই রয়েল ক্যারাবিয়ান এর টার্মিনালটা চোখে পরার মতো। খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে। মনে হচ্ছিলো আমরা কোন বিশাল এয়ারপোর্টের ভেতর আছি। যাই হোক চেকইন করে পাহাড়সম উচ্চতার জাহাজে ঢুকতে প্রায় দুটার মতো বেজে গেলো। ওদিকে লাগেজ প্রথমেই চেক ইন করে ফেলেছিলাম তখন তারা বললো আপনাদের লাগেজ কেবিনের সামনে পৌছে যাবে। ক্ষুধার্ত পেটে আমরা তাই দেরি না করে চলে যাই এগারো তলার আনলিমিটেড বাফে ”উইন্ড জ্যামারে”। ও আল্লাহ চোখ আমার ছানাবড়া। এক একটা সেকশন ভাগ করা ইন্টারন্যাশনাল, সালাদ এরিয়া, আমেরিকান স্টাইল, সুপ এরিয়া, ডেজার্ট এরিয়া ইত্যাদি। সাথে ছিলো পুরো পাঁচ দিনের জন্য আনলিমিটেড ড্রিংস প্যাকেজ। এখানে বলে রাখা ভালো দু ধরনের ড্রিংকস প্যাকেজ আছে। একটা চা,কফি,কোক,জুস আরেকটা শুধু শরবত প্যাকেজ। আমি প্রথম প্যাকেজটাই নিয়েছিলাম। জীবনে অনেক বাফে খেয়েছি কিন্তু এই বাফে এর ভাবসাব ই আলাদা। নগদে গ্রিল করে বানাচ্ছে আমরা সেখান থেকে নিচ্ছি আবার ক্ষনে ক্ষনে এসে অফার করছে আপনাদের আর কি কোন ড্রিংকস লাগবে (রেডবুল, কোক, কার্বোহাইড্রেট ওয়াটার, পানির বোতল)। লাঞ্চ শেষ করে ক্যাবিনে আর যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলোনা। মনে হচ্ছিলো কাঁথা-বালিস নিয়ে এখানেই শুয়ে থাকি…..।.



আরো পড়ুন গ্রিসের অ্যাপোলো মন্দিরে

কথায় আছে বাংগালী ফ্রি পাইলে আলকাতরাও মজুদ করে। আমাদের হলো এই অবস্থা। ব্যাপক খানা দানার পর রুম কেবিনে যেয়ে দেখি আমাদের লাগেজ অপেক্ষা করছে। রুমে ঢুকে মনটা ই ভালো হয়ে গেলো। সাথে এটাচ বারন্দা। ততক্ষণে জাহাজ ছেড়ে সমুদ্রের জলরাশির আমন্ত্রনে ছুটে চলছে বাহামার দিকে। পড়ন্ত বিকেলে বারান্দায় বসে শুধু সেই সুন্দর মুহূর্তকে ধরে রাখতে চাইছিলাম। যদিও সময় ও স্রোত সবার জন্য অপেক্ষা করে না তাই পরদিন সকালবেলা যখন ঘুম ভাঙলো তখন আমরা চলে এসেছি রয়েল ক্যারাবিয়নের নিজস্ব একটি দ্বীপ যার নাম “কোকো কে” তে। খুব সুন্দর গোছানো একটা প্রাইভেট এমিউজম্যান্ট পার্ক। সব ধরনের আনলিমিটেড খাবার সাথে প্রাইভেট বীচ ও বাচ্চাদের ফান করার সুইমিং পুল সত্যি নজর কেড়েছে। সেখানেও তাদের কাস্টমার সার্ভিস ছিল চোখে পড়ার মত। বলে রাখা ভালো এই জাহাজে তিন হাজারের মতন পর্যটক ছিলেন সাথে ছিল দেড় হাজারের মতন কর্মচারী যারা সার্বক্ষণিক যাত্রীদের টেক কেয়ার করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ফিলিপিন্স, ইন্ডিয়ান এমনকি আফ্রিকার দেশের। আমার মনে হচ্ছিল আমরা জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আছি। একই মঞ্চে সব শ্রেণীর মানুষের এই মিলন মেলা সত্যিই চোখে পরার মতো ছিলো।





আরো পড়ুন শান্তা মনিকা

বাহামায় সকাল বেলা এন্ট্রি করার পর মনে হচ্ছিলো আমরা সায়দবাদ বাস টারমিনাল এ এসেছি। সবাইকেই বিভিন্ন মানুষ ডাকছে আমদের বাস ট্রিপে আসুন, কেউ বলছে আমার মাইক্রোবাসে আসুন। এরা স্থানীয় হকার। তারা দুই তিন ঘন্টা গাড়ি দিয়ে পর্যটকদের পুরো বাহামা শহির টা ঘুড়িয়ে দেখায়। আমরা ২০০ ডলার দিয়ে একটা ভ্যান (মাইক্রোবাস) নিয়েছিলাম। যাত্রার মাঝে আটলান্টিস রিসোর্ট দেখে সত্যিই পুলকিত হয়ে গিয়েছিলাম। খুবই চমৎকার ও গোছনো। বিকেল পাঁচটায় জাহাজ ছেড়ে দিবে তাই আমরা চারটার ভেতর আবার জাহাজে ফেরত আসলাম।সাগরের এত স্বচ্ছ পানি,আমি এর আগে কখনো দেখিনি। যখন জাহাজ বাহামা ছেড়ে যাচ্ছিলো আমি অবাক নয়নে তীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যয় অবগাহন করছিলাম আর মনে মনে গুন গুন করে গেয়ে যাচ্ছিলাম।
পড়ুন রাসেল করিমের আরো লেখা
ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।
অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।
আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।