গতকাল ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট উড়ানকাল ছিলো রাত ১০.২৫। চেঙ্গি এয়ারপোর্টে ৭ ঘন্টা ট্রানজিট নিতে হবে। এরপর লানকাউইতে নিয়ে যাবে স্কুট নামে আরেক উড়োজাহাজ।

আমরা একসাথে রওনা দিয়েছি ৮ জন আয়রনম্যান ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী। এরমধ্যে কারো কারো বিদেশ যাত্রা প্রথম বারের মত। বিমানবন্দরের দোতলায় অনেকগুলো লাউঞ্জ রয়েছে এবং যাদের পকেটে ক্রেডিট কার্ড আছে ও তাতে অনেক টাকা জমা রয়েছে তারাই যেতে পারে। একজনের সঙ্গে আরেকজন ফ্রি। রাফাত এর সৌজন্যে আমিও সুযোগ পেলাম। সেখানে দেখা হলো বেলাল, ফারুক, আতাউর, বদরউদ্দিন ভাইদের সাথে। মজাদার খাবার দাবার খেয়ে পেট টইটুম্বুর।

ঢাকা এয়ারপোর্টে প্রবেশের আগে বারিধারার ঢাকা ডোতে ছিলো আমার সাইকেল এর বাক্স। সেখানে ইমরান ভাই সাইকেল বাক্স বন্ধি করতে সাহায্য করেছিল। ফ্লাইট এর আগে আমিদ এসে আমাকে ফাইনাল প্যকিং এ হাত লাগলো। এরপর এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেখি ভাগ্নে নাফিস আমাকে বিদায় জানাতে চলে এসেছে। এদিকে সাতক্ষীরা থেকে সোহেল ভাই তার বোনকে বলে রেখেছেন আমি আজ রাতে মালয়েশিয়া যাচ্ছি। আপা বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা। সেই রকম খাতির যত্নে আমাদের ভিআইপি ট্রিটমেন্ট দিয়ে, চা-কফি খাইয়ে লাগেজগুলোতে ট্যাগ লাগিয়ে দিলো। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে যে এই যাত্রায় যেভাবে সবার ভালবাসা আর সহযোগিতা পাচ্ছি, ইভেন্ট পর্যন্ত সব কিছু ভালো ভাবে শেষ হলেই শান্তি পাবো। ইমিগ্রেশন এ তেমন বেগ পেতে হলো না। আমরা সবাই বিডিট্রাই এর টিশার্ট পরে নিয়েছিলাম। কিন্তু পেছন থেকে আতাউর ভাইকে ডেকে নিয়ে গেলো ইমিগ্রেশন পুলিশ। তিনি তখনো টিশার্ট পরেননি। মালয়শিয়াতে এত মানুষ যায় যে কে জেনুইন তা বের করা তাদের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে।  আতাউর ভাইকে হাবিজাবি জিজ্ঞেস করে পরে ছেড়ে দিলো। খামোখা সময় নষ্ট। ভেতর থেকে কিছু রিঙ্গিত কিনে নিলাম। বিমানে ওঠার আগে আমরা সবাই দেশের পতাকা নিয়ে ছবি তুললাম। ১৪ জনের বেশ বড় বহর যাচ্ছে এবার আয়রনম্যান ইভেন্টে । রাতে বিমান থেকে তেমন কিছু দেখা যায় না তাই খাওয়া আর ঘুম ছাড়া কাজ নেই। আকাশে থাকব মোটে চার ঘন্টা। এদিকে নতুন করে ঘাড়ে ব্যথা হয়ে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। সুন্দরী একজন বিমানবালার কাছ থেকে কিছু বরফ টুকরো চেয়ে নিলাম আর এক গ্লাস রেড ওয়াইন। চেয়ার এর সামনের স্ক্রিনে অনেক অপশন রয়েছে। সাতার এর নতুন একটা মুভি রিলিজ হয়েছে নেটফ্লিক্স এ – ‘ইয়ং উইমেন এন্ড দ্যা সি’। যুক্তরাজ্যের প্রথম মহিলা সাতারু ট্রুডি এডারলি যিনি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন ১৯২৬ সালে। সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে সিনেমার গল্প। এবার আমরা যাচ্ছি আন্দামান সাগরে সাঁতার কাটতে, তাই এই সিনেমা থেকে কিছু অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় কিনা ভেবে দেখা শুরু করলাম। বাংলা চ্যানেল এর আগে ‘নায়াদ’ দেখেছিলাম। অসম্ভব সাহসী সেই নারী, কিউবা থেকে ফ্লোরিডা ১১০ মাইল কঠিন এক চ্যনেল পাড়ি দিতে গিয়ে তাকে ৩ বার উঠে যেতে হয়, চতুর্থ বারে চ্যনেল পাড়ি দেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।

সিনেমা পুরাটা শেষ করার আগেই ঘোষণা এলো আমরা এখন নামতে শুরু করেছি। সিটবেল্ট বেধে ঘাড় সোজা করে বসে থাকো। সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি এয়ারপোর্টে এসে উড়োজাহাজ টার্মিনাল টু এর দিকে মুখ ফেরালো। আসার আগে চেঙ্গি এয়ারপোর্টের ব্যপারে অনেক গল্প শুনেছি এবং ভিডিও দেখেছি। এতো বিশাল আয়তনের বিমানবন্দর এশিয়ার মধ্যে আর দ্বিতীয়টি নেই। এখানে এত এত কিছুর আয়োজন আছে যে একজন ট্রানজিট পেসেঞ্জার খুব সাচ্ছন্দে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দিতে পারে। সিঙ্গাপুর দেশ হিসেবে ছোট কিন্তু তারা প্রকৃতির ব্যপারে খুব সচেতন। এয়ারপোর্টের ভেতরেই এত পরিমানে সবুজের সমারোহ একবারের জন্যও বিরক্তবোধ আসবে না। ঝর্নাধারা, বিশাল প্রজাতির বাগান, সূর্যমূখির বাগান, পায়ের তলায় মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে আর চারপাশে বুনো জঙ্গল, সেখানে বিচিত্র পাখপাখালির শব্দ। মাথা তুলে দেখি উপরে লেজার আলোয় জল ছল ছল করছে, সেখানে নৌকার তলদেশ দেখা যাচ্ছে, তার তল দিয়ে মাছ ধরার জন্য একটা ভোঁদড় দৌড়ে বেড়াচ্ছে। একদম জীবন্ত, সবকিছ কি মোহনীয়! কেনাকাটা,  খাওয়া দাওয়া,  ঘুমানোর আয়োজন, সিনেমা থিয়েটার, কি নেই এখানে। চেঙ্গি এয়ারপোর্টের বর্ণনা দিতে হয়তো আরো একটা লিখা লিখতে হবে। টারমিনাল এক দুই তিন এই বিশাল জায়গাগুলোতে যেতে শাটল ট্রেন ধরতে হবে। টারমিনাল ৩ এর পাশে জুয়েল, অনবদ্য এক স্থাপনা।  আধুনিক স্থাপত্যকলার দারুন এক নিদর্শন। দালানের মধ্যে এতো সুন্দর ঝর্ণার ধারা কল্পনা মনে হয়েছিল প্রথম দেখে। সিঙ্গাপুরের ভিসা নিয়েছি, ফেরার পথে ২৫ ঘন্টা ট্রানজিট রয়েছে আমার, ঘুরে দেখবো অন্তত এই জায়গাটা। টারমিনাল ২ থেকে ৩ এ যাওয়ার সময় এক ঝলক এই ঝর্না দেখা যায়। ইচ্ছা করেই এয়ারপোর্টের সাথে এর সংযোগ রাখা হয়েছে যেনো এই ঝর্নার মোহে পড়ে সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। এদেশে ট্যুরিজম এর জন্য প্রতি বছর প্রায় ৮০ মিলিয়ন পর্যটক আসে।

এসব দেখতে দেখতেই সাত ঘন্টা চোখের পলকে কখন চলে গেলো টেরই পেলাম না।  

চেঙি এয়ারপোর্টে আমার ইউনিভার্সিটির ফ্রেন্ড রাহাতের সাথে দেখা হয়ে গেলো, সেও আমাদের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছিলো। আয়রনম্যানের জন্য শুভ কামনা জানালো।

আমাদের সাথে যারা আগে এই এয়ারপোর্ট দিয়ে গেছে তারা একটু ঝিমিয়ে নিলো। লানকাউইতে যেতে আমাদের টারমিনাল ২ এ স্কুট বিমান ধরতে হবে। সময় লাগবে দেড় ঘন্টা। জানালা দিয়ে লানকাউই দেখে বেশ উৎফুল্লতা কাজ করছিলো। আন্দামান সাগরের উপর উড়োজাহাজ এখন ডানা মেলে উড়ছে, কয়েকদিন পরেই এই সাগরে সবার সাথে পাল্লা দিয়ে সাঁতার কাটতে হবে। মালয়েশিয়াতে প্রথমবারের মতো আগমন,  মালয় ভাষায় যাকে বলে ‘সালামত দাতাং’ মানে অয়েলকাম। এবার আসল পরীক্ষা, মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন। আয়রনম্যানের ইভেন্টে যাচ্ছি, শুনেছি তারা এই রেইসকে অনেক কদর করে,  বিশেষ করে লানকাউইতে। আমাদের একসাথে দেখে ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞেস করলেন আপনারা সবাই একদিকে অপেক্ষা করুন। ভাবলাম আলাদা খাতির করবে। সবাই যাবার পর আমাদের একে একে ডাকলেন। সবার পাসপোর্ট আর বাকি পেপারস সব নিয়ে চেক করা শুরু করলো। আয়রনম্যান রেজিষ্ট্রেশন এর কাগজ আমাদের সাথে ছিল আর ফেরত যাবার টিকিটও কাটা আছে। তাদের চোখ দেখেই বুজলাম বাংলাদেশ শুনে তারা ভালোভাবে দেখছে না আমাদের। নানা কিছু জিজ্ঞাসা শুরু করেছে। বদর ভাই আর ফারুক ভাই এর রিটার্ন টিকিট নিয়ে কিছু একটা কনফিউশান ছিল তাদের, এসব মেটাতে বেশ সময় চলে গেলো। আমাকে ডাকার পর জানালাম আয়রনম্যান ইভেন্টে এসেছি। আমার দিকে এমনভাবে লুক দিলো যে তার বিশ্বাসই হলো না এই লোক আয়রনম্যান দিতে আসছে, কেমনে কি! ইয়া ভুড়িওয়ালা ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞেস করলো, ‘হোয়ার ইজ ইয়োর সাইকেল শু? বললাম, আমি ক্লীট শু ব্যবহার করি না।  আর যদি করিও এই জুতা পরে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করা যায়না, সাইকেলে চড়লেই কেবল পড়তে হয়, গর্দভ নাকি ব্যটা! দাতে দাত চেপে দাড়িয়ে রইলাম। এরপর ফেরার টিকিটে কুয়ালালামপুর দেখে বলল, লানকাউই থেকে কুয়ালালামপুর কিভাবে যাবে? বললাম, সাইকেল চালিয়ে যাবো আয়রনম্যান শেষ করে। বিশ্বাস করল কিনা জানি না, তারপর একমাসের ভিসা থাকা সত্ত্বেও আমার ফিরতি ফ্লাইটের একদিন পর তারিখ দিয়ে সিল দিয়ে দিলো। আরেকজন অফিসারকে জিগ্যেস করলাম যদি আমি ফ্লাইট মিস করি বা অসুস্থ হই তখন কি করব? তিনি বললেন, এমন ইমারজেন্সি কিছু হলে ইমিগ্রেশন অফিসার এর কাছে এসে মেডিকেল সাটিফিকেট দেখিয়ে ভিসার সময় বাড়িয়ে নিতে পারবো৷ বাংলাদেশ থেকে এলাম বলেই কি এমন ব্যবহার পেলাম!

আমাদের ছাড়া ততক্ষণে বাকি সব যাত্রীরা বের হয়ে গেছে। ব্যগেজের কাছে এসে দেখি আতাউর ভাই এর সাইকেল বাক্স ছেড়া দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোন গগন্ডগোল হয়েছে। তাদের জানানোর পর কমপ্লেইন করতে বললো। এরমধ্যে বেলা অনেক গড়িয়ে গেছে। দলের এক অংশ পালনকি হোটেলে যাবো আর বাকিরা চেনাং ভিউ হোটেলে। আমার রুম ঠিক করা আছে বদর ভাই এর সাথে। আতাউর ভাই এর বক্স এর ঝামেলা না মেটানো পর্যন্ত আমরা বের হয়ে যেতে পারিনা। কিন্তু বেলাল ভাই আর ফারুক ভাই কেনো জানি খুব তারাহুরো করে বেরিয়ে পাড়লো সঙ্গে বদর ভাইও। নাহিদ চট্টগ্রাম থেকে এসেছে তার সাথে আকিক এর থাকার কথা, কিন্তু আসবে আরো দুইদিন পর, তাই আমি নাহিদ আর বাকি সবার সাথে চেনাং ভিউ হোটেলে চলে এলাম।

আমাদের ছাড়া ততক্ষণে বাকি সব যাত্রীরা বের হয়ে গেছে। ব্যগেজের কাছে এসে দেখি আতাউর ভাই এর সাইকেল বাক্স ছেড়া দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোন গগন্ডগোল হয়েছে। তাদের জানানোর পর কমপ্লেইন করতে বললো। এরমধ্যে বেলা অনেক গড়িয়ে গেছে। দলের এক অংশ পালনকি হোটেলে যাবো আর বাকিরা চেনাং ভিউ হোটেলে। আমার রুম ঠিক করা আছে বদর ভাই এর সাথে। আতাউর ভাই এর বক্স এর ঝামেলা না মেটানো পর্যন্ত আমরা বের হয়ে যেতে পারিনা। কিন্তু বেলাল ভাই আর ফারুক ভাই কেনো জানি খুব তারাহুরো করে বেরিয়ে পাড়লো সঙ্গে বদর ভাইও। নাহিদ চট্টগ্রাম থেকে এসেছে তার সাথে আকিক এর থাকার কথা, কিন্তু আসবে আরো দুইদিন পর, তাই আমি নাহিদ আর বাকি সবার সাথে চেনাং ভিউ হোটেলে চলে এলাম।

লানকাউই একেবারে নতুন একটা জায়গা আমার জন্য। এখানেই আয়রনম্যানের মত কঠিন রেইসে উত্তীর্ণ হতে হবে। গত এক বছর থেকে যে প্রস্তুতি নিয়েছি তার ফাইনাল পরীক্ষা দুইদিন পরেই। লানকাউইতে নেমে হোটেলে গিয়ে আমাদের প্রধান কাজ হলো সাইকেল বাক্স থেকে বের করে এসেম্বেল করা। সাইকেল খুলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়ার পরে অনেক গোলমাল দেখা দেয়। নাহিদ রাফাত সবাই সাহায্য করেছে। ওদের কাছে দারুণ সব অত্যাধুনিক টুলস আছে। যদিও আমার সাইকেল খুব সাধারণ গোছের রোডবাইক। মুজাহিদ ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই, তিনি লন্ডন থেকে সাইকেলটা এনে ঢাকা থেকে জামালপুর হয়ে সিলেট গিয়েছিলেন, এরপর যাবার সময় আমাকে দিয়ে যান। সেই সাইকেল ঠিকঠাক করে আয়রনম্যানের জন্য প্রস্তুত করি।

04
03

আয়রনম্যানের জন্য আমাদের আন্দামান সাগরে সাতরাতে হবে ১.৯ কিলোমিটার, তাই এই সাগরে একটু রেকি করে দেখতে হবে। যেখানে রেইস শুরু হবে সেই জায়গাটা আমাদের হোটেল থেকে বেশখানিকটা দূরে। পেরদানা কোয়াই লাইটহাউজ এর পাশে কোক বিচ সেখান থেকে শুরূ হবে সাঁতার। ‘দি ডানা লানকাউই’ নামে বিশাল আলিশান এক রিসোর্টে আয়োকরা সব বন্দোবস্ত করেছে। বিভিন্ন দেশের প্রতিযোগিরা সেখাও কেউ কেউ অবস্থান করেছে।

সকাল বেলা সাকলাইন ভাইয়ের ঠিক করা গাড়িতে আমরা চলে গেলাম সাগরের কাছে। তখনো আরো ৫দিন হাতে আছে। সাগরে দড়ি বয়া লাগানোর কাজ চলছে। সমুদ্রে সাতার কাটার অভিজ্ঞতা নতুন এমন কয়েকজনও রয়েছে আমাদের মধ্যে। তাই ঠিক হলো ৫০০ মিটার এর মত গিয়ে আবার ফিরে আসবো। পিযুজ কিছুটা সংকোচ করছিলো, রাফাত আর আতাউর ভাই এর জন্যও প্রথমবার, তবে তারা নেমে পড়লো নির্দিধায়। সবার আগে নাহিদ দেখলাম চোখের আড়াল হয়ে গেলো। সাগরে সাঁতার কাটতে বড় কলিজা লাগে। নতুন জায়গায় প্রথম কয়েক মিটার বেশ নার্ভাস লাগছিল। আজকে সমুদ্র কিছুটা উত্তাল, কারন সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েছে। আর এখানে সূর্যের মূখ দেখা যায় সকাল ৭টার দিকে। এই সাগরে জেলিফিস ও আছে বলে শুনেছি। বাংলা চ্যানেলে জেলিফিশের এটাক এর কথা মনে পড়ে গেলো। সামনে একটা পাথুরে দ্বীপের মত দেখা যাচ্ছিলো, ভাবলাম সেখানে গিয়ে পাড়ে উঠবো। পরে সাকলাইন ভাই সাবধান করে দিলো সেখানে নামলে হাত-পা ছিলে যাবে। আমরা ফিরতি পথ ধরলাম। খুব আরাম করে আস্তে আস্তে সাঁতার কেটে বিচে উঠলাম। অন্যরকম এক অনুভূতি হলো। নাহিদকে এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক্ক্ষণ পরে তাকে দেখা গেলো, সে সাঁতার এর পুরোটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে। দেশে থাকতে ইমতিয়াজ ভাই, রিপন ভাইর যারা আয়রনম্যান একাধিকবার দিয়েছেন বার বার আমাদের বলে দিয়েছেন কোন প্রকার ওভার এক্সাইটেড হয়ে কিছু যেনো না করি। কোনভাবে ইঞ্জুরি হলে আর রক্ষে নেই। এমনকি খাওয়া দাওয়ার ব্যপারেও সতর্ক থাকতে হবে।

সাইকেলে ৯০ কিমি পথ পাড়ি দিতে হবে সাঁতার শেষ করেই, তাই পূরো রাস্তাটা মাথায় থাকলে খুব ভালো হয়। আমরা পরদিন কিছুটা পাহাড়ি পথ সাইকেল চালিয়ে রেকি করলাম। কি সুন্দর মনোরম পরিবেশ।  ঘন জঙ্গল আর  সমুদ্রের কিনার দিয়ে কি দারূন মাখন রাস্তা। ডাউন হিলে খুব মজা পাচ্ছিলাম। কিন্তু চড়াইতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। গেয়ার পাল্টাতে গিয়ে হলো বিপত্তি, চেইনটা গেলো ছিড়ে। সবাই বেশ খানিকটা এগিয়ে গিয়েছিল। এরপর আরো প্রায় ৫কিমি পথ ডাউন হিল আর হেটে এসে পথে এক দোকানে সবার সাথে দেখা। গ্রাব কল করে সাইকল নিয়ে গেলাম হোটেলে। ভাগ্য ভালো চেইনটা রেইসের আগে ছিড়লো না হয় রেইসের দিন হলে বারোটা বেজে যেতো। প্রায় ৭০ রিংগিত দিয়ে নতুন চেইন কিনে সাইকেলে সেট করলাম। চেনাং ভিউ হোটেলে সুইমিংপুল ছিলো, সেখানেও আমরা প্রেকটিস করলাম। একা এবং সৌরভদার সাথে রানিং করলাম। আমাদের কিট কালেকশন এর দিন চলে এসেছে। মসুরি এক্সিবিশন সেন্টার বিশাল আকারের,  আমাদের চীন মৈত্রী এর থেকেও অনেক বড়। এখানে এক্সপোর আয়োজন করা হয়েছে এবং আজ রাতে ব্রিফিং ও ডিনার এর ব্যবস্থাও আছে সবার জন্য। সকালবেলা প্লান ছিলো ভোরে আমরা সুইমিং এ যাবো এবং ১.৯কিমি পুরা সুইমিং ট্রেকটা ঘুরে আসবো। এর আগে আমরা স্কুটি ভাড়া নিয়েছিলাম ৩০ রিংগিতে সারাদিন। সাইকেলের রুট ৯০কিমি রেকি করেছি, যেনো রাস্তাটা আমাদের মাথায় থাকে।

08
11

সকালে রেডি হয়ে আমি আর নাহিদ, রাফাত আর আতাউর ভাই দুইটা বাইকে রউনা দিলাম। এয়ারপোর্ট পার হয়ে লানকাউই পুলিশ একাডেমি এর সামনে এসে নাহিদ বললো স্কুটির তেল শেষ হয়ে গেছে। ঝাকানি দিয়েও চলার চেষ্টা করা হলো তাও কাজ হলো না। রাফাত আমাদের আগে ছিল। আমি গতকাল মালয়শিয়ান সিম কিনেছিলাম, নাহিদ আমাকে কল দিতে বলল রাফাতকে। আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে কল দিলাম। আতাউর ভাই ফোন রিসিভ করলে জানালাম আমাদের স্কুটির তেল শেষ হয়েছে আপনারা দাড়ান। ম্যপে তখন দেড় কিলোমিটার দূরত্ব দেখাচ্ছিলো পেট্রোল পাম্প। আমি কি মনে করে ফোনটা ব্যাগে না রেখে জ্যাকেট এর পকেটে রাখলাম এরপর বাইক ঠেলতে শুরু করলাম। ভেবেছিলাম রাফাত আর আতাউর ভাই ফিরে আসবে আমাদের কাছে। তাদের দেরি দেখে আমরা এগিয়ে যেতে থাকলাম। কিছুটা দুশ্চিন্তা, রাগ আর অস্থিরতায় আমাদের মাথা কাজ করছিলো না। কিছুক্ষণ আমি ঠেলছি কিছুক্ষণ নাহিদ ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে স্কুটি। ওদেরও দেখা নাই। হঠাৎ করে স্থানীয় একজন লোক বাইক চালিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করলো কি ঘটনা? এরপর কি মনে করে তিনি নাহিদকে তার বাইকে বসিয়ে আমাকে স্কুটির হ্যন্ডেল চেপে ধরতে বলল। এক পা দিয়ে ঠেলে নিয়ে গেলো প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরত্বে পেট্রোল পাম্পে। তাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যখন বিদায় দিলাম তখন টের পেলাম জ্যাকেট এর পকেটে মোবাইল ফোন আর নেই। মাথায় হাত দিয়ে স্কুটি ঘুরিয়ে পুরো রাস্তা আপ-ডাউন করলাম প্রায় ৪বার। কোথাও কিছু নেই। অথচ তখন রাস্তায় তেমন কোন মানুষজনও ছিলো না। এয়ারপোর্টে গিয়ে একজনের ফোন থেকে আমার লোকাল নাম্বারে কল দিলাম,  দুইবার বাজলো কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করলোনা এরপরের বারে ফোন বন্ধ পাওয়া গেলো। তারমানে ফোন কারো হাতে চলে গেছে। রাস্তায় খুজেও আর যখন পাবোনা নিশ্চিত হলাম তখন থানায় গিয়ে রিপোর্ট লিখালাম। আমাদের সুইমিং আর করা হলো না। মুসরি সেন্টারে চলে গেলাম মন খারাপ করে। বিদেশে ফোন হারালে কত যে বিপদ হয়। সব ইনফরমেশন, নাম্বার, যোগাযোগ সবকিছু এক মুহুর্তে বন্ধ হয়ে গেলো। কিট গুলো কালেকশন করলাম। এরমধ্যে খবর পেলাম আমাদের বদর ভাই  সাইকেল থেকে পড়ে এক্সিডেন্ট করেছেন। তিনি ফুল আয়রনম্যানের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। প্রথম বিদেশ যাত্রা, ঘুম খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম সব মিলিয়ে বদর ভাই সামলে উঠতে পারেননি। পাহাড়ি পথ থেকে নামার সময় মাথা ঘুরিয়ে ছিটকে পড়ে যান। মাথায় এবং শরীরে বেশ আঘাত পান। আমরা হাসপাতালে ছুটে যাই তাকে দেখতে। টিমের সবাই ভারাক্রান্ত আর বেশ চিন্তিত হয়ে  পড়ে। আয়রনম্যানের মত রেইসের আগে এমন দুর্ঘটনা সত্যি উদ্বেগজনক। হাসপাতালে মাথার কাটা অংশ সেলাই করে আর ওষুধপত্তর দিয়ে বদর ভাইকে কম্পিট রেস্টে থাকতে বলে দিলো। এরপর তাকে পরবর্তী দিনগুলো হোটেল রুমেই কাটাতে হয়েছে।

আবার রেইসের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ছোট ছোট জিনিসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো। মানসিক চাপ বাড়তে শুরু করলো। কেউ কেউ বিগড়ে গেলো আবার কেউ চুপচাপ হয়ে গেলো। আমরা কয়েকজন বেশ আনন্দে সময় পার করেছি বলা যায়। টি-ওয়ান, টি -টু তে ব্যগগুলো রেখে আসলাম। সুইমিং থেকে উঠে টি-ওয়ান থেকে সাইকেলে যাওয়ার জন্য জিনিসপত্র নিতে হবে এবং সাইকেল শেষ করে টি-টু থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে রান শুরু করতে হবে। সব কিছুর খুব সুন্দর আয়োজন। পায়ে একটি অত্যাধুনিক চিপ পরিয়ে দেওয়া হবে যাতে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে আপনাকে ট্রেক করা যাবে। আগেরদিন বিকালের মধ্যে সাইকেল জমা দিয়ে আসলাম। সবকিছু এখন খুব চরম উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কালকের আট ঘন্টা জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় মনে হচ্ছে। গত এক বছরের সাধনার চরম পরীক্ষা আগামীকাল। এই কুরুক্ষেত্র ঠিকভাবে শেষ হলে এই যাত্রায় উতরে যাবো। সাকলাইন ভাই সবাইকে রাত ৮টার মধ্যে বিছানায় চলে যেতে বললো। ভোর সাড়ে তিনটায় এলার্ম বাজবে। যার যার মত খাওয়া দাওয়া করে বাথরুম সেরে ৫টায় বের হয়ে পড়তে হবে। কঠিন পরিশ্রম করলাম যুদ্ধ যেনো সহজ হয় সেই কামনা করে বিছানায় চলে গেলাম।

ভোর সাড়ে তিনটায় এলার্ম বেজে উঠলো। আজকে পরীক্ষার দিন, রেইস ডে। আগেরদিন খাবার দাবার নিয়ে বেশ গবেষণা হয়ছে। রাফাত আর আতাউর ভাই ভাত ডিম খাবে, নাহিদ কলা রুটি, খেজুর, সামিউল ভাইয়ের রুমে গিয়ে দেখি চিকেন শরমা, ভাত-মাংস দিয়ে মাখানো গোল্লা সব টেবিলে সাজিয়ে রেডি করে রাখা। উনি অবশ্য ফুল আয়রনম্যান দিবেন, তাই তাদের প্রস্তুতিপর্ব আরো নিখুঁত ভাবে করতে হয়। ফুল যারা দিবেন তাদের এক্সট্রা ব্যগ দেওয়া হয় রেইসের মধ্যে নিজের খাবার বা প্রয়োজনীয় হাইড্রেশন যেনো রেডি রাখতে পারে। নিদ্দিষ্ট জায়গায় তা সময়মত পৌঁছে দেওয়া হয়। আমিও একটা শরমা নিয়ে নিলাম। পেলাঙি হোটেল এর নিচে একটা তার্কিস শরমা হাউজ ছিলো, সেখানে সিলেটের এক ভাই শরমা বানায়। বেশ কয়েকবার সেখানে খেয়েছি, তাই আর অন্য কিছুতে গেলাম না।

আজকের দিনের প্রতিটি সময় গুরুত্বপূর্ণ,  তাই বিছানা থেকে জলদি উঠে ফ্রেস হয়ে গরম পানি দিয়ে মধু পান করলাম এরপর শরমা খেয়ে নিলাম। হাতে কিছু সময় থাকলো যদি পেটে চাপ আসে এবং খাবারটাও হজম হয়। সব রাতেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু হাতে লাগানোর জন্য বিব নাম্বারটা কোথায় হারিয়ে ফেললাম। যদিও মার্কার দিয়ে লিখে দিবে তারা। গায়ে বিডিট্রাই এর জার্সিটা পরে নিলাম, ভোরবেলা হাল্কা ঠান্ডা লাগে তাই জ্যকেট চাপালাম। সুইমিং গ্লাস আর ক্যাপ সঙ্গে নিলাম। একটা কালো ব্যাগ দিয়েছিলো তাতে বিব নাম্বার লাগানো আছে, সেখানে পাম্পার, সাইকেল পরিষ্কার করার জিনিসপত্র, সেন্ডেল সব রেখে আরেকটা গাড়িতে ফেলে দিতে পারবো। রেইস শেষে তা সংগ্রহ করতে হবে। জুতা আগেই টি-টুতে রেখে এসেছিলাম তাই একটা স্লিপার কিনে নিয়েছিলাম ১০ রিঙ্গিত দিয়ে। ৫টার মধ্যে সাকলাইন ভাই গাড়ি নিয়ে হাজির চেনাং ভিউ এর সামনে। হাফিজ মালয়শিয়ার দক্ষ ড্রাইভার, সাককাইন ভাই কয়েকবছর থেকে তাঁকে সঙ্গে রাখেন। ইংরেজিতে ভালোই কথা বলতে পারে। আমাদের রেগুলার রুট ছেড়ে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে গেলো হাফিজ, কারন রেইসের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আয়রনম্যান আয়োজনের জন্য আজকে সব কিছু শিথিল করা হয়েছে। লানকাউইতে আজকে সাজ সাজ রব। পুরা শহর জেগে উঠবে প্রতিযোগিদের উতসাহ দেওয়ার জন্য।

এক ঘন্টা লাগলো ‘ডানা লানকাউই’- তে পৌঁছাতে, তখনো আকাশে আলো ফুটেনি। শাটল বাস একেরপর এক আসছে প্রতিযোগী আর তাদের সঙ্গী সারথীদের নিয়ে। রেইসের সময় মোবাইল ফোন বা ক্যমেরা ব্যবহার এর অনুমতি নেই তাই সঙ্গী সাথীদের কাছে অনেকে তা রেখে যাচ্ছে যেনো কাছাকাছি দেখা পেলে ছবি তুলতে পারে। গতকাল যেখানে সাইকেল রেখে এসেছিলাম প্রথমে সেখানে চলে গেলাম। বৃষ্টি হয়েছে রাতে, সাইকেল ভালোমতো মুছে চেইনে লুব দিলাম। হাওয়া কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিলাম, যেনো রোদে অতিরিক্ত গরমে টিউবের ক্ষতি না হয়। রাফাত বড় পাম্পার নিয়ে এসেছে সেটা দিয়ে সবার কাজ হয়ে গেলো। সবার সাইকেল কাছাকাছি জায়গায় ছিল তাই একে অন্যের সহোযোগিতা করতে সুবিধে হলো। ফ্লাডলাইট এর আলো আর লাউড মিউজিক শরীর মনকে চনমনে রাখার উপাদেয় হলো। সময় কমে আসছে, মাইকে বার বার বলা হচ্ছে ইলেকট্রনিক চিপ পেয়ে গেলে ধীরে ধীরে সমুদ্র সৈকতের স্টার্টিং পয়েন্ট এর দিকে চলে আসতে। গোধূলির আলো ফোটার পরেই প্রথম ব্যচ সাঁতার শুরু করবে। আমার ক্যাপ এর রঙ নীল, সময় ৫০ মিনিট। লাল রঙের ক্যাপ যারা তাদের আরো দশ মিনিট কমে সাতার শেষ করতে হবে। আর সাদা ক্যাপ যাদের তারা সময় পাবে ১ঘন্টা ১৫মিনিট। গ্যাপ দিয়ে দিয়ে প্রতিযোগীদের পানিতে নামতে হবে নাহলে ভজঘট লেগে যাবে। একে অন্যের গায়ের উপর পড়বে বা হাত-পা লেগে ইনজুরি হবার চান্স আছে।

12

পায়ে চিপ পরিয়ে দেওয়ার পর গুটি গুটি পায়ে আগাতে লাগলাম। রাস্তায় লাইন ধরে টেম্পরারি টয়লেট রাখা রয়েছে, সুন্দর ব্যবস্থা চাইলে কাজ সেরে নিতে পারে। কালো ব্যাগটা গাড়িতে দিয়ে সৈকতের বালুতে পা দিলাম। এখন আমি শুধু আমাতে আছি, এই যাত্রা শুধু আমার, আমাকেই একা সবকিছু শেষ করে ফিনিশ লাইনে দাঁড়াতে হবে এবং সবকিছু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। একে একে লাল ক্যপ পড়া প্রতিযোগীদের ডেকে নিচ্ছেন স্টার্ট পয়েন্ট এর দিকে। মাইকে উৎসাহ উদ্দীপনামূলক কথা বলা হচ্ছে।  প্রথমের অনুভূতি সবসময়ই অনন্য। কেমন জানি একটা এক্সাইটমেন্ট কাজ করে। আমারও ডাক পড়লো, সবার সাথে গিয়ে দাড়ালাম। বিশ্বের কত দেশের মানুষ একত্র হয়েছে। অনেকের আয়রনম্যন দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক বার অনেক দেশে। আমার পাশে জার্মানির এক তরুন সেও প্রথমবার বেশ উচ্চসিত দেখাচ্ছিলো, আমরা পরিচিত হয়ে নিলাম। আরেকজন বেশ কয়েকবার  আয়রনম্যান ৭০.৩ দিয়েছেন তিনি বললেন, দুই -তিন বার হাফ দেওয়ার পর ফুল আয়রনম্যান এর জন্য যাওয়া উচিত। এটা সত্যি কঠিন কাজ। জেসন এর সাথে দেখা হয়ে গেলো, মালয়শিয়ার বাসিন্দা ৪ বার হাফ আয়রনম্যান আর একবার ফুল দিয়েছেন। বয়স ৫০ এর উপরে। এক্সপোতে পরিচয় হয়েছিলো, বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে বেশ উতসাহ দেখিয়েছিলো। আজকের জন্য সুভ কামনা আর সাহস দিলো। ভেতরটা ধুকপুক করছে, আমাদের সময় এলে বাঁশি বাজানো মাত্র ঝাপ দিলাম সমুদ্রে। আমার সামনে অনেকটা ফাঁকা জায়গা পেলাম তাই দ্রুত সাঁতার কেটে এগিয়ে যেতে থাকলাম। দড়ি দিয়ে সীমানা করে দেওয়া আছে, বিশাল আকারের হলুদ বয়া তাতে বাধা, কায়াকে ভলান্টিয়াররা ঘুরছে আর কেউ লাইন ক্রস করলে বাশি বাজিয়ে সতর্ক করে দিচ্ছে। কেউ ক্লান্ত অনুভব করলে বয়া ধরে বিশ্রাম নেওয়ার অনুমতি আছে।

আজকে থামার বা স্লো হবার কোন অবকাশ নেই। প্রানপন সাঁতার কেটে যাচ্ছি, কেউ কেউ হাতে পায়ে বাড়ি দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। আমি কখনো এগিয়ে যাচ্ছি অথবা সরে যাচ্ছি। সবাই দিশেহারার মত শুধু হাত-পা ছূড়ছে। সাঁতার এর প্রস্তুতি ভালোই নিয়েছিলাম তাও মনে হচ্ছিল আমার দম কমে আসছে, পথ আর কত দূর বাকি। বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময় তামিম আমাকে  বলেছিলো ভাই যে সংখ্যা মাথায় আসে গুনতে থাকবেন তাতে করে একঘেয়ামি কাজ করবে না। আমি মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলতে সংখ্যা গোনা শুরু করলাম, ২০, ২১, ২২, ২৩  যা ইচ্ছে তা। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি সামনে বিচ দেখা যাচ্ছে, এইত পেরে গেলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ৪৭ মিনিটে সাঁতার শেষ করলাম। আমার টার্গেট সময়ের আগেই শেষ হলো। জাহিদ ভাই এর ওয়াচ আর হেলমেট এর জন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তার জিনিগুলো আয়রনম্যান ঘুরে এলে তিনিও তৈরি হবার অনুপ্রেরণা পাবেন।

05

সাঁতার থেকে উঠে মাথা ভনভন করছিল। টি-ওয়ান এ ব্যগের কাছে গিয়ে খেই হারিয়ে মাথার ক্যপ কোথায় ফেলে দিলাম। পানি খেয়ে নিজেকে ঠিক করে, ব্যাগে রাখা টাওয়াল দিয়ে গা মুছে জুতা মোজা পরে নিলাম। চশমা, ওটস বার সব জার্সিতে গুজে মুখে সানস্ক্রিন গায়ে ভেজলিন লাগালাম। টেবিলের উপর সব রাখা আছে। সুইমিং ক্যপটা মাটিতে খুঁজে পেলাম, চশমা আর ক্যপ সেই ব্যগে রেখে সাইকেলের দিকে ছুটলাম। এর মধ্যে ১০ মিনিট চলে গেলো চোখের পলকে। একে ট্রানজিশন টাইম বলে, যা মোট সাড়ে আট ঘন্টার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। সাইকেলে হেলমেট রাখা ছিলো, চশমা হেলমেট সব কিছু ঠিকঠাক দেখে নিয়ে ডানা থেকে রাস্তায় উঠে মনে পড়লো হ্যন্ড পাম্পারটা ব্যগে ফেলে এসেছি। সিওটু কার্টিজ যা দ্রূত হাওয়া দিতে কাজে লাগে তাও কেনা হয়নি। এখন উপরওলাই একমাত্র ভরসা। কারন পথে লিক হলে রেইস কর্তৃপক্ষের সাহায্যের আশায় বসে থাকলে সময় সব ফুরিয়ে যাবে। শুরু করলাম যাত্রা, সাঁতার এর পর সাইকেলে ধাতস্থ হতে একটু সময় লাগলো। এনার্জি বাঁচিয়ে পথ চলতে হবে এর পরে আরো কঠিন দৌড়ের পর্ব বাকি আছে। ৯০ কিলোমিটার পথ আগেই আমরা দেখে ফেলেছি সুতরাং এখন রাস্তা কোথায় কেমন কিছুটা মাথায় আছে। পাহাড়ের আপ-এ আমি কোথাও ঠেলে উঠলাম। ডাউনে স্প্রিড এ নামলাম আবার সেই গতি ঠিক রেখে চড়াই উঠে গেলাম চালিয়ে। সাঁতার এর সময় কিছুটা মাসলপুলের আলামত দেখা দিয়েছিলো তাই রিস্ক না নিয়ে সাইকেলের সময় হাইড্রেশন পয়েন্ট থেকে পায়ে স্প্রে করে নিলাম। কলা খেলাম, ইলেকট্রোলাইডের বোতল নিয়ে নিলাম, হাই ফাইভ জেল খেলাম। আমার টার্গেট ৪ ঘন্টার মধ্যে সাইকেল শেষ করা। যুদ্ধ কর‍তে করতে মরে যাওয়া যাবে না। রাস্তায় দেখলাম অনেক ভালো মানের দামী সব সাইকেল পাংচার হয়ে উপর করে অপেক্ষা করছে সাহায্যের আশায়। যারা পাচ্ছে তারা সত্যি ভাগ্যবান। গ্রাম জঙ্গল পাহাড়ের মাঝখানে কখন চাকা লিক হবে কেউ যানে না। পথে আকিক কে ক্রস করার সময় বলল তারও চাকা লিক হয়েছিলো। সে মাউন্টেন বাইক নিয়ে গেছে তবে চাকা  সরু। পরে শুনলাম নাহিদেরও লিক হয়েছে সিওটু দিয়ে কোনরকমে পার পেয়েছে। অর্ধেক পথে এসে আমাকে একে একে পিজুশ, রাফাত, আতাউর ভাই ক্রস করেছে। তারা সাইকেল অনেক ভাল চালায় তাই সাঁতারে একটু দেরি হলেও সাইকেলে আমাকে ধরে ফেলেছে। আমি আমার পেইস ঠিক রেখে চালিয়ে যাচ্ছি, এই যুদ্ধ যেহেতু আমার একার সুতরাং কাউকে চেজ করার প্রয়োজন নেই। শুধু কামনা করি সবাই যেনো ভালোভাবে ফিনিশিং লাইন ক্রস করতে পারে। আরাফাত কেও পথে পেলাম, ফুল আয়রনম্যান প্রতিযোগীরা আমাদের প্রায় আধাঘন্টা পরে শুরু  করেছে। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের রেইস চলবে। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে লোকালয়ে ঢুকে গেলাম, রাস্তায় দোকানের সামনে বাচ্চারা তাদের বাবা-মায়েরা সবাই দাঁড়িয়ে আমাদের হাততালি দিচ্ছে। বাচ্চারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে ক্ল্যাপ করতে চাইছে। কেউ আবার নিজ উদ্যোগে পানি খাবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে। আয়নম্যান বলে বলে আমাদের উজ্জীবিত করে চলেছে। আয়োজকদের দেওয়া সাদা বোতল বাচ্চাদের দিয়ে দিচ্ছে কোন কোন প্রতিযোগিরা।

মুসুরি এক্সিবিশন সেন্টার এর কাছে এসে বেলাল ভাই এর দেখা পেলাম। তিনি রাস্তা ভূল করে ২০ কিমি অতিরিক্ত চালিয়ে ফেলেছেন এবং আয়োজকরা পেনাল্টিতে অপেক্ষারত রেখেছেন। এক ঝলকে তার আর্তনাদ শুনলাম, “দেখেন ভাই আমাকে আটকে রেখেছে”। তিনি এই  লানকাউইতেই আরো কয়েকবার আয়রনম্যান সম্পন্ন করেছেন, তারপরও রাস্তা কিভাবে ভূল হয় এটাই ভেবে পেলামনা। আসলে রেইসের সময় অনেক কিছুই হতে পারে, সব ঘটনার জন্য মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। বেলাল ভাই আরো ২০ কিমি বেশি মোট ২২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এরপর আবার কাটঅফ টাইমের মধ্যে ৪২ কিমি রান করে আয়রনম্যান শেষ করেছিলেন। এক্সিবিশন সেন্টার এ প্রবেশ করে মনটা শান্ত হলো। হিমশীতল হাওয়ায় লাল গালিচার মধ্যে দিয়ে হেটে যেতে বেশ রাজকীয় মনে হলো নিজেকে। সাইকেল টি-টু এর স্থানে রেখে রান এর ব্যাগ থেকে ক্যাপ, বিব আর দেশের পতাকা নিলাম। মোজা পাল্টে নিলাম। শীতল হাওয়া ছেড়ে বের হওয়া মাত্রই বুজতে পারলাম দোজকে প্রবেশ করেছি। বেলা একটা বেজে গেছে, মাথার উপর প্রখর সূর্য এর মধ্যে দৌড়ে যেতে হবে ২১ কিমি। পুলিশ ট্রেনিং একাডেমির রাস্তা ধরে এয়ারপোর্টের দিকে ট্রেক চলে গেছে। রানওয়ে বলতে গেলে উন্মুক্ত, এক পাশে প্লেন উড়ে যাচ্ছে অন্যপাশে সমুদ্র, কি সুন্দর দৃশ্য। কিন্তু এই গরমে দৌড়াতে দৌড়াতে দৃশ্য যে হজম হয়না। তপ্ত  রোদে এই দৌড় শেষ হলেই এই যাত্রায় পরীক্ষায় পাশ। গরমের জন্য সব ব্যবস্থা তারা করে রেখেছেন। ৩ কিলোমিটার পর পর হাইড্রোশন পয়েন্টে বরফ ঠান্ডা পানি বালতি দিয়ে ঢেলে দিলো, ঠান্ডা তরমুজ সাজিয়ে রাখা গপাগপ খেয়ে নিলাম। কোক রাখা আছে ইনিস্ট্যান্ড এনার্জি আর জেল তো ছিলই। শুরুর সময়ই জেল খেয়ে নিলাম। মেডিকেল বুথ থেকে মাসেলে স্প্রে করে জামার ভেতর বরফ ঢুকিয়ে দিলো। এত জল শরীরে যাওয়ার পরেও দেখছি মূত্র বিসর্জনের কোন খোঁজ নেই। শরীরে অসস্থি শুরু হয়ে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম দৌড়ের গতি কমতে থাকলে আট ঘন্টার মধ্যে শেষ করা কঠিন হয়ে যাবে। শহরের মধ্যে দিয়ে দুইবার পাক খেতে হয়, চারপাশের দোকানীরা সবাই রাস্তায় নেমে ঘন্টা বাজাচ্ছে আর আমাদের চিয়ারআপ করছে। মন আবার চাঙা হয়ে উঠলো। ১০ কিলোমিটার রান শেষে সতির্থদের সাথে দেখা হওয়া শুরু হলো। নাহিদ, রাফাত, সৌরভ দা, আতাউর ভাই আমাকে ক্রস করে যাচ্ছে। তারা আমার আগেই ফিনিশ লাইনে পৌঁছে যাবে। আমি এবার আরেকটু গতি বাড়িয়ে দিলাম। পা যেনো চলতেই চাইছে না। একপাক ঘুরে এসে লেংগুরা বিচের কাছে ফিনিশ লাইনে পৌঁছে একটু দ্বিধায় পড়ে গেলাম। ঘড়ি দেখে মনে হচ্ছিল আমারত এখন দৌড় শেষ হবার কথা না। ভলেন্টিয়াররা ঠিক পাশ দিয়ে রাস্তা দেখিয়ে দিলো এরপর বুজলাম আরো এক চক্কর একি পথে ঘুরে আসতে হবে, যা খুবই বোরিং। একটা পিংক কালারের ব্যান্ড হাতে পরিয়ে দিলো। এই চক্করের পর সব উত্তেজনার অবসান হবে।

14

সময় যত যাচ্ছে সূর্যের তাপ আরো বেড়ে চলেছে। পানীয় যা আছে গিলে যাচ্ছি, জেল ও খেয়ে ফেললাম। নিচের দিকে সব অবস হয়ে গেলো মনে হচ্ছে। কিন্তু দৌড় তো থামানো যাবে না, বার বার মনকে তাই বুঝালাম। এয়ারপোর্টের রাস্তায় মারিয়াকে দেখতে পেলাম। তখন সে আমার আগেই ছিলো। একটা জায়গায় এসে ইউটার্ণ নিতে হয় আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগীদের, আর যারা ফুল দিচ্ছে তারা চলে যাবে সামনে। খুব সুন্দর করে সব ধরনের সাইন দেওয়া আছে এবং ভলেন্টিয়াররাও বেশ সচেষ্ট সব ধরনের সহযোগিতায়। লক্ষ্য করলাম মারিয়াকে আর দেখা যাচ্ছেনা সামনে। সে ফুল আয়রনম্যান এর ট্রেকে ডুকে গেছে। এখন পুলসিরাত পার হবার মত অবস্থা, কারো দিকে তাকানোর সময় নেই। আমি প্রাণপণে গতি ঠিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাই। হাইড্রোশেন পয়েন্টে আর থামার চেষ্টা করলাম না। শহরের দোকানিদের হাততালি পার হয়ে বালির রাস্তায় ঢুকে পড়েছি। ৮ ঘন্টা শেষ হতে আরো ১০মিনিট বাকি আছে। আমি ফিনিশ লাইন দেখতে পাচ্ছি, পকেট থেকে লাল সবুজ পতাকা বের করে দুহাত উঁচু করে যতটুকু শক্তি বাকি আছে দৌঁড়াতে থাকলাম। আমার চোখে পানি চলে এলো। ফিনিশিং লাইনে ঢুকার মুখে লাল গালিচা বিছানো, সাজ সাজ রব, সংগীতের মূর্ছনায় উত্তেজনায় ভরপুর। আমি ফিনিশ লাইনে দাড়ালাম, মাইকে আমার নাম বলা হলো, আমার দেশের নাম বলা হলো, বুকটা ভরে গেলো আনন্দে। আট ঘন্টার আগেই শেষ করলাম আয়রনম্যান ৭০.৩ মাইল। স্বপ্নের মত এত দিনের পরিশ্রম আজ স্বার্থক হলো। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হলুদ আর নীলের মিশেলে সুন্দর মেডেল আমার গলায় পরিয়ে দেওয়া হলো। আয়রনম্যান ৭০.৩ ফিনিশার লিখা একটা টাওয়াল জড়িয়ে দিলো শরীরে। জীবনের এই অনন্য অনুভূতি হয়ত কখনো ভুলতে পারবো না।

যারা এই যাত্রায় আমাকে নানা দিক থেকে সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা। ইমতিয়াজ ইলাহি ভাই, রিপন ভাই এর কাছ থেকে গল্প শুনতে শুনতে আর উতসাহ পেয়ে এই ফিনিশ লাইনে এসে দাড়াতে পারবো তা কল্পনাও করি নাই। অনেক ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। আর্থিক প্রতিকূলতা পার করতে ক্রাউড ফান্ডিং করতে হয়েছে। সহযোগিতা যেভাবে পেয়েছি, নিজেকে সৌভাগ্যবান বলবো।

রেজিষ্ট্রেশন এর সময় হেদার আমাকে ইউএস থেকে টাকা পাঠিয়েছে। এরপর টাকা পাঠিয়েছে কানাডা থেকে বন্নি, জার্মানি থেকে আমার বন্ধু সুস্মিতা, জাহিদ ভাই, প্রবাল দা, জিয়া ভাই, সাহেদ, আমিদ, রিপন ভাই, নাজু আন্টি, সুমিট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ভিসার জন্য আরিফ ভাই অনেক দিন আমার একাউন্টে টাকা রেখেছেন। এত ভালোবাসা পেয়ে যা কিছু বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি তাও কম হবে। ধন্যবাদ আমার উপর বিশ্বাস রেখেছেন। আশাকরি ভবিষ্যতেও বড় কোন অভিযানে যাওয়ার আগে প্রপার কোন প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর পাবো। এই অর্জন যদি তরুণদের এবং সমাজের কাজে লাগে তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।

পড়ুন হোমায়েদ ইসহাক মুনের আরো লেখা

 

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

 

ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।

আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।