কখনো কি খেয়াল করে দেখেছেন ওষুধ এবং চিকিৎসা পেশার প্রতীক -একটি লাঠির গায়ে পেঁচানো সাপ? কোভিড সময়কালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বা World Health Organization (WHO) এর নীল লোগো টিভি পর্দায় ঘনঘন আমাদের চোখের সামনে ঘুরাঘুরি করতো; কারো মনে আছে কিনা জানিনা WHO লোগোটা কিন্ত পৃথিবীর মানচিত্রের ভিতরে একটা লাঠির গায়ে পেঁচানো সাপ। কখনো কি মনে হয়েছে কোথা থেকে আসলো এই সাপ? এই প্রতীকের উৎপত্তি হয়েছিল Rod of Asclepios থেকে। কিন্তু কে এই অ্যাসক্লেপিয়াস?

অ্যাসক্লেপিয়াস প্রাচীন গ্রীক ধর্ম এবং পুরাণে ঔষধের দেবতা। তিনি ছিলেন অ্যাপোলোর পুত্র, অ্যাপোলো তাকে দিয়েছিল ওষুধ সম্পর্কে অনেক শিক্ষা। গ্রীকদের কাছে সাপ ছিল পবিত্র প্রাণী; জ্ঞান, নিরাময় এবং পুনরুত্থানের সহায়। সাপের খোলস বদলানোর এবং পুনর্জন্ম লাভ করার ক্ষমতার কারনে সাপকে অমরত্বের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা হতো; সেই সাথে ওষুধ হিসাবে সাপের বিষের ব্যবহারও ছিল ব্যপকভাবে।কোথাও কোথাও বলা হয় সাপ অ্যাসক্লেপিয়াসকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক গোপন জ্ঞান শিখিয়েছিল, তাই অ্যাসক্লেপিয়াস তার হাতের লাঠিতে ফুলের মত সাপকে পেঁচিয়ে নিয়ে ঘুরতেন। অ্যাসক্লেপিয়াস চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবং নিরাময়ে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠে ছিলেন যে এক সময় তার পিতা অ্যাপোলোকেই ছাড়িয়ে যান। অ্যাসক্লেপিয়াস মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে মানুষকে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুকে এড়াতে শুরু করেছিলেন। এমনকি মৃত্যুদের জীবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই ক্ষমতা সর্বোচ্চ দেবতা জিউসের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল একে তো এভাবে অমরত্ব পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অত্যধিক বাড়িয়ে দিবে, একই সাথে অ্যাসক্লেপিয়াস যদি তাঁর অনুসারীদের এই পুনরুত্থানের শিল্প শেখান তাহলে পৃথিবীতে মানব জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় থাকবে না তাই জিউস তার বজ্রপাতে অ্যাসক্লেপিয়াসকে হত্যা করেছিলেন। পরে অবশ্য অ্যাপোলোর অনুরোধে জিউস অ্যাসক্লেপিয়াসকে দেবতা হিসেবে পুনরুত্থিত করেন। প্রাচীন গ্রীকরা নিরাময়ের দেবতা হিসাবে সব সময়ই অ্যাসক্লেপিয়াস সম্মান করতো এবং অ্যাসক্লেপিয়াসের রড আর সাপ আজও ওষুধের এবং চিকিৎসা প্রতীক।

আরো পড়ুন ওয়াদি রাম

 অ্যাসক্লেপিয়াসের কর্মকাণ্ড জানতে হলে যেতে হবে এপিডাউরাসের অভয়ারণ্যে যা অ্যাস্কলেপিয়াসের জন্য উৎসর্গ করা মন্দির এবং নিরাময় স্থান ছিল। অ্যাসক্লেপিয়াসের মন্দিরে সমগ্র গ্রীস এবং ভূমধ্যসাগরের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষেরা সুস্থতার আশায় যেতেন। ধারনা করা হতো সঠিক চিকিৎসা খুঁজে বের করার জন্য মানুষ একটি ঘুমের ঘরে রাত কাটাতেন এবং দেবতা স্বয়ং তাদের স্বপ্নে এসে তাদের সুস্থ হওয়ার জন্য কি কি করতে হবে বলে যেতেন। এজন্য এখানে তৈরি হয়েছিল শোবার ঘর সহ ১৬০ টি কক্ষ বিশিষ্ট অতিথিশালা, গোসলখানা (রোমান বাথ), স্টেডিয়াম এবং এমনকি ঝরনা (mineral springs), মন্দির এবং হাসপাতাল। এই স্থাপনাগুলো খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীর, তার অনেক কিছুই এখনও আছে। ১৯৮৮ সালে অ্যাসক্লেপিয়াসের মন্দিরটি UNESCO বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

আরো পড়ুন পেত্রা

এপিডাউরাসের ধ্বংসাবশেষে আবিষ্কৃত নিদর্শন গুলো রাখা আছে সুন্দর ছোট একটি জাদুঘরে। এটিতে সেই সময়ের প্রাথমিক অস্ত্রোপচারের সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতির পাশাপাশি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এবং আকর্ষণীয় কিছু ভাস্কর্য রয়েছে।

এপিডাউরাস এথেন্স থেকে ১২৫ কিমি, এথেন্সের আশেপাশের অন্যান্য শহরগুলির মতো এপিডাউরাস এথেন্সের সাথে ততটা সংযুক্ত নয়। আপনি যদি গাড়ি চালাতে চান এবং নিজের গতিতে অভয়ারণ্যে যেতে পছন্দ করেন তবে আপনি একটি গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। কিছু টুরিস্ট বাস ও আছে। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ট্যুর গাইড সহ এপিডাউরাসের নির্দেশিত পরিদর্শনের জন্য আপনার আনুমানিক ১.৫ ঘন্টা লাগবে। তারপরে আপনি ছবি তোলার জন্য নিজের থেকে আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারবেন।

পড়ুন ফারহানা হাসীনের আরো লেখা

 

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের অংশগ্রহণে সকল কাজ পরিচালিত হচ্ছে।

অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মনে জানাতে হচ্ছে যে আমাদের সম্মানিত লেখকদের জন্য কোনো তহবিল এই মুহূর্তে আমাদের কাছে নেই। অদূর ভবিষ্যতে তহবিল গঠন করতে পারা গেল এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

 

ঘুরুঞ্চির ওয়েবসাইট পরিচালনা করতে আমাদের সপ্তাহে ৮-১২ ঘন্টা কাজ করতে হয়। বর্তমানে আমাদের কাজ শুধুমাত্র স্বেচ্ছাসেবক এবং স্ব-অর্থায়নের উপর নির্ভর করে। আপনারা ঘুরুঞ্চিতে বিজ্ঞাপন দিয়ে, অনুদান দিয়ে, স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

ঘুরুঞ্চির ভ্রমণ ছবি ব্লগের ছবি থেকে আপনার পছন্দসই ছবি পেপার প্রিন্ট, ফাইন আর্ট প্রিন্ট, ওয়াল আর্ট এবং ডেস্ক আর্ট হিসাবে কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। আপনারা ছবি কেনাকাটা করলে আমরা অল্প পরিমাণ কমিশন পাব, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যাবস্থার হবে, যা ঘুরুঞ্চির ক্রমবিকাশ এবং সম্প্রসারে ব্যবহার হবে।

আমরা আপনার সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ।