চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অসাধারণ চিত্রকর্ম মোনালিসার কথা কে না শুনেছেন! যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখন থেকেই রহস্যময় মোনালিসার ছবি যেন আমায় পেছন থেকে ডাকত। ভাবতাম, কোনোদিন কি দেখা হবে তার সঙ্গে?

হ্যাঁ, সৌভাগ্যক্রমে দেখা হয়েছে আমাদের। তাই প্রথমবারের মতো ইউরোপে যাওয়ার পর প্যারিসে যেতে দেরি করিনি। বেশি দেরি করিনি মোনালিসার সঙ্গে দেখা করতে। একসঙ্গে ছবি তুলতেও সময় নিইনি। ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ বলে কথা।

প্যারিসে ভ্রমণ করার মতো রোমাঞ্চকর বিষয় পৃথিবীতে আর কী আছে! কী নেই প্যারিসে! ভ্রমণের তেষ্টা মেটানোর সব কিছুই আছে প্যারিসে। এ দেশের মানুষ তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মতোই অনেক সমৃদ্ধ। হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির শহর প্যারিস। জাদুঘরের শহর প্যারিস। সন্ধ্যা হওয়ার পর অন্ধকার প্যারিস যখন আলোকিত হয় তখন প্যারিসের সৌন্দর্যে অভিভূত না হয়ে থাকা যায় না।

পৃথিবীর বিখ্যাত আইফেল টাওয়ারের কথা কে না জানেন! প্যারিস আর আইফেল টাওয়ার একসঙ্গে গাঁথা। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ৩২৪ মিটার উঁচু আইফেল টাওয়ারে টিকিট কেটে ওপরে উঠতে পারবেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ওপরে উঠে প্যারিস দেখার। সুউচ্চ আইফেল টাওয়ার যেন আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত এলে যখন আইফেল টাওয়ারের লাইট জ্বলে উঠে তখন তার সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা যাবে না। প্যারিসের আরেকটি বিখ্যাত দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে ল্যুভর জাদুঘর। ল্যুভর জাদুঘর বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর, যা ১৭৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত। ৬ লাখ ৫২ হাজার ৩০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে এই জাদুঘর। বুঝতেই পারছেন কত বিশাল। ল্যুভর জাদুঘরে ঢোকার জায়গাটা ১৯৮৯ সালে নির্মিত কাচে ঘেরা ২১ মিটার উঁচু পিরামিড আকৃতির। অসাধারণ সব শিল্পকর্ম আছে এই ল্যুভর জাদুঘরে। ল্যুভর জাদুঘরে গিয়ে মোনালিসার সঙ্গে সেলফি তুলতে পারলে আর কী লাগে! মোনালিসার ছবি মনে হতে পারে অনেক বড় আকৃতির, কিন্তু বাস্তবে অনেক ছোট আকারের (২১ আর ৩০ ইঞ্চি)। এই বিখ্যাত চিত্রকর্ম দেখতে গেলে আপনাকে অনেক মানুষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে দেখতে হবে। ছবির চতুর্দিকে নিরাপত্তার খাতিরে রীতিমতো বেড়া দেওয়া হয়েছে। সেটার বাইরে থেকে দেখতে হয়। আপনি যদি পুরো ল্যুভর জাদুঘর একবারে ঘুরতে যান তাহলে আমি নিশ্চিত আপনি ঘুরতে ঘুরতে দুর্বল হয়ে যাবেন। বলা হয়ে থাকে, আপনি যদি প্রতিদিন কোনো বিরতি ছাড়া ৩০ সেকেন্ড করে একেকটা আইটেম দেখতে থাকেন তাহলেও সবকিছু দেখতে আপনার ১০০ দিন লাগবে। আমি কিছুক্ষণ ঘুরে আবার বসার জায়গায় বিশ্রাম নিয়ে ঘুরতে বের হতাম। এই জাদুঘরে যাওয়া মানে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত জিনিস এক জায়গায় দেখে ফেলা। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!

প্যারিসে ভ্রমণ করলে হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের নিদর্শন দেখা যাবে। প্যারিসে যাওয়া মানে টাইম মেশিনে পুরনো দিনে ফিরে যাওয়া। এক শৈল্পিক কাজের নিদর্শন নটর ডেম ক্যাথেড্রাল বা উপাসনালয় (১৩০ মিটার লম্বা ও ৬৯ মিটার উঁচু)। প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো এই ক্যাথেড্রাল। এটা বানাতেই প্রায় ২০০ বছর লেগে যায়। এ থেকেই বোঝা যায়, কত শত-হাজার বছরের ইতিহাস আপনি প্যারিস ভ্রমণ করলেই দেখতে পারবেন। তা ছাড়া ‘আর্ক দে ট্র্যামফে’ হচ্ছে বিখ্যাত বীরযোদ্ধা নেপোলিয়নের যুদ্ধ বিজয়ের স্মৃতিস্তম্ভ। একটু নিখুঁতভাবে তাকালেই দেখা যাবে অসংখ্য যোদ্ধার ছবি সংবলিত এই অসাধারণ স্থাপনা।

প্যারিসকে বলা হয় ‘রোমান্টিক শহর’। তবে ফ্রান্সে গিয়েই বুঝেছি ভালোবাসার শহর কেন বলা হয়। প্যারিসের নদীর ব্রিজে ‘লাভ লক’-এর অভাব নেই। ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে প্রেমিক-প্রেমিকরা নিজেদের নাম লিখে ব্রিজে তালা মেরে ঝুলিয়ে রাখে। চাইলে আপনিও লিখে আসতে পারেন। তবে ছবি তুলে রাখতে ভুলবেন না, যদি আবার বেড়াতে যান দেখে আসতে পারেন আপনার লাভ লক আছে কিনা!

ঘুরুঞ্চি ম্যাগাজিনের সকল কর্মকান্ড নট ফর প্রফিট, স্বেচ্ছাসেবকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্তমানে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। আপনি এ সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।